লামায় করোনা ঝুঁকিতে তামাক পরিবহণের প্রতিবাদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি

fec-image

তামাক কোম্পানীগুলোকে সিগারেট তৈরির উপকরণ তামাক পাতা পরিবহণে সহযোগিতা করার জন্য দেশের শিল্প মন্ত্রণালয়ের দেয়া এক সিন্ধান্তের কারণে কোভিট-১৯ এর মহামারিতে প্রাণ নাশের ঝুঁকির মুখে পড়েছে পার্বত্য বান্দরবানের লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ির প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক নারী, পুরুষ ও শিশু। এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিক, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার নেতৃবৃন্দ।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রুমি বৃটিশ অ্যামেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশকে (বিএটিবি) তামাক পরিবহণে সহযোগিতা করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পত্র পাওয়ার বিষয়টি এই প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে গত কয়েকদিন ধরে সারি সারি কাভার্ডভ্যান ও ট্রাকসহ শ্রমিকরা লামায় প্রবেশের পরই বিষয়টি জানার পর বিভিন্ন মহলে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

কোবিড-১৯ মহামারীর ঝুঁকি সহনীয় পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত লামা থেকে তামাক পরিবহণ স্থগিত রাখার জন্য বৃহস্পতিবার(১৭ এপ্রিল) ও রোববার(১৯ এপ্রিল)  বান্দরবান জেলা প্রশাসকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে পৃথক স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে।

রোববার(১৯ এপ্রিল) লামা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নূর-এ জান্নাত রমীর হাতে এক স্মারকলিপি প্রদান করে। এর আগে ১৭ এপ্রিল একই দাবিতে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, লামা উপজেলা, পৌর শাখা ও স্থানীয় সচেতন নাগরিকগণ বান্দরবানের ডিসিকে লামার ইউএনও’র মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করে।

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে সরকারের নির্দেশ মতে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখেছে। পরিবহণ মালিক ও শ্রমিকরা নিজেদের অভাব দুঃখ ভুলে পরিবহণ বন্ধ রেখেছে।

সেখানে দেশের শিল্পমন্ত্রণালয় তামাক পরিবহণের অনুমতি দিয়ে সরকারের লকডাউন আইনকে হাস্যকরে পরিনত করেছে। এটা একপ্রকার জনগণের সাথে তামাশা করার মতো হয়েছে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন লামা উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামালুদ্দিন বলেন, কোম্পানীগুলো তাদের নির্দিষ্ট স্থানে তামাক ক্রয় করুক। এতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে কোভিড-১৯ করোনায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত নারায়নগঞ্জসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, ও শ্রমিক এনে লামা, আলীকদম ও নাইক্ষ্যংছড়িকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিবে এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়ার মতো নয়। তামাক পরিহরণে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দেয়া পত্রটি অতিদ্রুত পত্যাহার করে তামাক এই মুহুর্তে পরিবহণ বন্ধ রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

লামা সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের পক্ষে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিষয়টি অবহিত করে আজ স্মারকলিপি দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন দপ্তরে এর অনুলিপি দিয়েছি। সরকার এই করোনাভাইরাস মহামারি থেকে দেশের জনগণকে রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সামগ্রীক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করেছে দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জনসমাগম কমাতে দোকানপাট এবং শপিংমলগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। সরকারিভাবে গণ পরিবহণ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে। অত্যাবশ্যকীয় পন্য ছাড়া অন্য সকল ধরণের পরিবহণ বন্ধ রাখা হয়েছে। সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের কর্মসংস্থান গার্মেন্টস্ শিল্পগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।

ধর্মীয় এবং সামাজিক সকল ধরণের সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে। এমনকি মসজিদে নামাজের জামায়াত সীমিত করা হয়েছে। সরকারি প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকল বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাবসহ জনপ্রতিনিধিগণ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার জন্য দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করে যাচ্ছে।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ কোভিট-১৯ আক্রান্তদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে শিল্প মন্ত্রণালয় বিড়ি-সিগারেটের উপকরণ তামাক পরিবহণের অনুমতি দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার নির্দেশ দিয়েছে। এই ব্যাপারে ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নেই।

আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, সরকার যদি এর মধ্যে তামাক পরিবহণ স্থগিত রাখার নির্দেশ না দেয়, তা হলে সোমবার মানবন্ধন ও মঙ্গলবার অনশন কর্মসূচির কথা জানান।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, তামাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন