লামায় সাজু হত্যা মামলা প্রত্যাহারে বাদীকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ


বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে নিহত সাজু আক্তার (২৫) হত্যার ঘটনায় মামলা প্রত্যাহারের জন্য মামলার বাদীর উপর চাপ প্রয়োগ এবং সাক্ষীদের বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদানের অভিযোগ তুলেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
মামলার একমাত্র আসামি জয়নাল আবেদীন ভেট্টু, তার ভাই আরফাতুল ইসলাম এবং তাদের পিতা আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) লামা রিপোর্টাস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নিহত সাজু আক্তারের মা আছমা খাতুন (৮৫) ও ভাই মোস্তাফিজুর রহমান (৪৫) এবং আবুল কাশেম এই অভিযোগ করেন।
লিখিত বক্তব্যে নিহত সাজু আক্তারের মা আছমা খাতুন জানান, গত ২০০৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর লামা উপজেলার সরই ইউনিয়নে জয়নাল আবেদীন প্রকাশ ভেট্টুর তরমুজ খেতে সাজু আক্তারকে (২৫) অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারী চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার পুটিবিলা ইউনিয়নের গৌড়স্থান সিকদার পাড়ার আব্দুল জব্বার এর ছেলে জয়নাল আবেদীন ভেট্টু। ভেট্টু তার প্রতিপক্ষ লোকজনকে ফাঁসানোর জন্য নিজ হাতে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছেন।
আছমা খাতুন আরো জানান, বর্তমানে যখন এই হত্যা মামলাটি সাক্ষীর পর্যায়ে রয়েছে ঠিক সেই মুহুর্তে অত্র মামলার আসামি জয়নাল আবেদীন ভেট্টুকে বাঁচানোর জন্য তার ভাই আরফাতুল ইসলাম ও তার পিতা আব্দুল জব্বারসহ পরিবারের সদস্যরা নানামুখী ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, আমার ছেলে এবং এই মামলার বাদী মোস্তাফিজুর রহমানকে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে একাধিকবার আক্রমণ করা হয়েছে।
নিহতের ভাই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিবাদীপক্ষ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছে। হত্যাকারী ও তার পরিবারের লোকজন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে তার মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছে বলে মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করেছেন।
তিনি আরো জানান, এই মামলার প্রত্যক্ষদর্শী মো. ওসমান গনিকে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে লাঞ্ছনাসহ হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। এই বিষয়ে লোহাগাড়া থানায় সাধারণ ডায়েরী ৮৫, তাং- ০২/০৮/১৭ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
নিহত সাজু আক্তারের মা আছমা খাতুন আরো জানান, মামলাটি যখন স্বাক্ষ্য গ্রহণের শেষ পর্যায়ে ঠিক এই মুহুর্তে জয়নাল আবেদীন ভেট্টুর পরিবারের সদস্যগণ উম্মাদ হয়ে গেছে। তারা মামলার সাক্ষী এবং মামলার সহযোগিতাকারীদের উপর একের পর এক হামলা ও মামলা দিয়ে হয়রানি করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক মিথ্যা মামলা দিয়ে মামলার সাক্ষীদেরকে হয়রারি করা হয়েছে। সাজু হত্যা মামলার সঠিক বিচারের জন্য সর্বমহলের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন। সাজু হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হওয়ার পর স্থানীয় একটি মহল এই হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল। উক্ত রাজনৈতিক মহল বর্তমানেও সক্রিয় রয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার বাদীকে ৩ লক্ষ টাকা গ্রহণ করে মামলাটি আপোষ দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে এই রাজনৈতিক দুষ্কৃতকারীগণ। উল্লেখ্য যে, যে দিন সাজু আক্তারকে হত্যা করা হয় সে দিন সরই এলাকার জনৈক রাজনৈতিক নেতা তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করার জন্য আমাকে প্রস্তাব দেন।
তিনি বলেন, এর মধ্যে আরেকটি হত্যা মামলার আসামি জয়নাল আবেদীন ভেট্টু বর্তমানে আন্ডার গ্রাউন্ডে থেকে তার ছোট ভাই আরফাতুল ইসলামকে দিয়ে সকল হামলা মামলার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আরফাতুল ইসলাম শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী, এই মানবিক আবেদন সৃষ্টি করে মূলত সাজু হত্যা মামলার মূল ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার হীন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা আব্দুল জাব্বার পরিবারের ষড়যন্ত্রের নেতৃত্বদানকারী আরফাতুল ইসলাম ও আব্দুল জাব্বারের সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, সরকারি সকল মহল, সুশীল সমাজ এবং সর্বসাধারণকে সজাগ থাকার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
সাজুর বৃদ্ধ মা আসমা খাতুন বলেন, আমরা সাজু আক্তারের পরিবারের সদস্যগণ অত্যন্ত গরীব ও দিনমজুর। জয়নাল আবেদীন ভেট্টু পরিবারের সদস্যদের হামলা ও মামলার কারণে আমরা বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রশাসনের কাছে আমরা নিরাপত্তার দাবী জানাচ্ছি। বৃদ্ধ মা হিসাবে আমার মেয়ে খুনের ন্যায় বিচার দেখে আমি দেখে যেতে চাই।
এ সকল বিষয়ে লামা থানার অফিসার ইনচার্জ অপ্পেলা রাজু নাহা জানান, সাজু হত্যার বাদী ও সাক্ষীকে হুমকি প্রদানের অভিযোগে লামা থানায় আরফাতুল ইসলাম (২০), আব্দুল জব্বার (৬০) ও জয়নাল আবেদীন ভেট্টু (৪৬) এই ৩ জনের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।