সন্তু লারমা ভারতে : কোন পথে পাহাড়?

fec-image

পাহাড়কে ঘিরে নানা শঙ্কা বাড়ছে জনমনে। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অবনতি, পাক-ভারত যুদ্ধ, মিজোরামে বিএসএফের আঞ্চলিক কমাণ্ড কেন্দ্র স্থাপন, মার্কিন নাগরিকদের মিজোরামে হয়ে কেএনএফের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা, বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় ভূ-রাজনৈতিক রঙ্গমঞ্চে আগমন, আরাকান আর্মির সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সশস্ত্র সংগঠনগুলো ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি, সাতবোন রাজ্যগুলোতে একের পর এক বাংলাদেশমুখী অস্ত্রের চালান আটক, বাংলাদেশে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি নিয়ে নানা শঙ্কা রয়েছে।

এরমধ্যে সাজেক পর্যটন কেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া, পর্যটক অপহরণ, অপরাধমূলক কাজে দায় পর্যটকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে পাহাড়ে পর্যটন থামিয়ে দেয়ার জন্য একের পর এক ষড়যন্ত্র সচেতন মানুষকে পার্বত্য চট্টগ্রামের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যখন শঙ্কিত করে তুলেছে ঠিক তখনই চিকিৎসার নাম করে জেএসএস নেতার দীর্ঘ ভারত সফরকে ঘিরে মানুষের মনে প্রশ্ন, পাহাড়ের গন্তব্য কোথায়?

যদিও সরকারী পরিপত্র ও জেএসএস সূত্র বলছে, পারিবারিক ও স্বাস্থ্যগত কারণে সরকারিভাবে ২৯ দিনের ছুটি নিয়ে ভারতে গেছেন সন্তু লারমা। সরকারি বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত ৩ মে দুপুরে আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে তিনি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় গেছেন।

ছুটির বেশিরভাগ সময় তিনি ভারতেই অবস্থান করবেন। কিন্তু ভারতে চিকিৎসার জন্য আগরতলা কোনো সুপরিচিত গন্তব্য নয়। সেখানে চিকিৎসার উন্নত অবকাঠামো নেই। পরিবারের সাথে দেখা করতে এর আগেও সেখানে গিয়েছেন। সেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা ছাড়াও ‘মাতৃ-পিতৃ তর্পন ও ধর্মীয় আচারাদি’ সম্পাদন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে তার।

সেখানে তার ছোট কন্যা জুলিয়ানা লারমা ও তার স্বামী, সাবেক শান্তিবাহিনী নেতা প্রধীর তালুকদার বাস করেন। কিন্তু পূর্বে তিনি বিমান পথে গিয়েছেন, কখনোবা ঘোষণা ছাড়াই সীমান্ত পথে গিয়েছেন- এমন কথাও শোনা যায়। কিন্তু এবারই তিনি প্রথম আগরতলা চেকপোস্ট অতিক্রম করায় প্রশ্ন উঠেছে। এদেকে সন্তু লারমার নাতনি সম্প্রতি জাতিসংঘে বাংলাদেশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে ভয়ানক বিদ্বেষমূলক অভিযোগ করেছেন।

এমন এক সময়ে সন্তু লারমা ত্রিপুরা পৌঁছেছেন যখন তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী ইউপিডিএফ সভাপতি প্রসিত বিকাশ খীসা ও সাধারণ সম্পাদক রবিশংকর চাকমাসহ জেএসএসের অধিকাংশ সামরিক কমান্ডার বর্তমানে ত্রিপুরাতেই অবস্থান করছেন। অতীতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) নেতা থাকার সময় সন্ত লারমার সঙ্গে তাদের সখ্য ছিল।

তবে গত আড়াই দশকে শান্তিচুক্তিকে ঘিরে সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতি ও ইউপিডিএফের রাজনৈতিক সংঘাত প্রকাশ্যে রূপ নেয়। দুই গ্রুপের সংঘাতে পাহাড়ে অকালে ঝরেছে সহস্রাধিক প্রাণ। পরে দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সমঝোতাও হয়েছে। বর্তমানেও বিভিন্ন ইস্যুতে তারা দলীয় ব্যানার বাদ দিয়ে অরাজনৈতিক ব্যানারে সকল দল মিলে আন্দোলন করছে বিভিন্ন ইস্যুতে।

বিশ্লেষকদের মতে, ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনের সুযোগে পাহাড়ি দলগুলোর নীতিগত ঐক‍্য হলে পার্বত্যাঞ্চলে যদি নতুন করে উগ্র বিদ্রোহ শুরু হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি নাগালের বাইরেও চলে যেতে পারে।

পার্বত্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, পাহাড়ে এখন সক্রিয় রয়েছে অন্তত ৬টি সশস্ত্র গ্রুপ। ইউপিডিএফ (প্রসিত), ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জেএসএস (সন্তু), জেএসএস (সংস্কার), এম এন পি এবং নাথান বমের নেতৃত্বাধীন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।

ভারতের ত্রিপুরা ও মিজোরামে ইউপিডিএফ অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে থাকে, এ অভিযোগ পুরনো হলেও বরাবরই তারা সশস্ত্র তৎপরতার কথা অস্বীকার করে আসছে।

পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহলের ধারণা, এখনই পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সরকার সচেতন না হলে অতি দ্রুত পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়কে ঘিরে নানা শঙ্কা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন