সরকারের সাথে শান্তির সংলাপে ইউপিডিএফ

fec-image

পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান ইনসার্জেন্সি ও উত্তেজনা নিরসনে সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেছে পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবীতে দীর্ঘ ২৫ বছর সশস্ত্র আন্দোলনরত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) মূল। এরই অংশ হিসেবে আজ ৯ জুন খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়িতে ইউপিডিএফ প্রসীতের পক্ষে সরকারের প্রতিনিধির কাছে একটি দাবীনামা পেশ করা হয়েছে।

সরকারের পক্ষে এই দাবীনামা রিসিভ করেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও গবেষক মেজর(অব.) এমদাদ এবং ইউপিডিএফের পক্ষে দাবীনামা তুলে দেন কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা।

ইউপিডিএফ প্রসীত গ্রুপের পক্ষে তাদের স্যোশাল মিডিয়া পেইজে বিবৃতি দিয়ে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে। মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষে উপস্থিত মেজর(অব.) এমদাদও পার্বত্যনিউজকে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন।

ইউপিডিএফ প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগের পক্ষে নিরন চাকমা কর্তৃক প্রচারিত এ বিবৃতিতে দাবী করা হয়েছে, চলমান সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরকারের নিকট দলের দাবিনামা পেশ করেছে। আজ ৯ জুন ২০২২, বৃহস্পতিবার, খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে এ দাবি হস্তান্তর করা হয়।

ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন। এ সময় ইউপিডিএফ খাগড়াছড়ি ইউনিটের সংগঠক অংগ্য মারমা ও মধ্যস্থতাকারীদের অন্যতম সদস্য মঞ্জুলাল দেওয়ানও উপস্থিত ছিলেন।

উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেন, গত শতকের ‘৭০, ৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’

মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে সাবেক মেজর এমদাদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন। তিনি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট চুক্তি আকারে পেশকৃত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর দাবিনামা (ও তার যৌক্তিকতা)’ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান।

ইউপিডিএফের সংগঠক সুমেন চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন পানছড়ি উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান চন্দ্রদেব চাকমা, পানছড়ি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মনিতা ত্রিপুরা, ৪ নং লতিবান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও হেডম্যান ভূমিধর রোয়াজা, ৩ নং পানছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উচিত মনি চাকমা, ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনন্দ জয় চাকমা, ১ নং লোগাং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয় কুমার চাকমাসহ ইউপি মেম্বার, স্থানীয় সাংবাদিক ও শিক্ষকসহ গণ্যামন্য ব্যক্তিবর্গ।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর(অব.) এমদাদ পার্বত্যনিউজকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনেকদিন ধরেই তাদের সাথে এ যোগাযোগ চলেছে। তারই অংশ হিসেবে আজ তারা আমার কাছে ৬৯ পৃষ্ঠার একটি দাবীনামা দাখিল করেছে। আমি দু’পক্ষের একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এই দাবীনামা গ্রহণ করেছি।’

তিনি বলেন, আমি এ দাবী সরকারের কাছে পৌঁছে দেবো। এরপর সরকার এটা বিবেচনা করে দেখবেন।

ইউপিডিএফ প্রধান প্রসীত এই সমঝোতায় রাজী কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর এমদাদ বলেন, তিনি আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। তবে তার সাথে পত্রালাপ হয়েছে। বলা যেতে পারে, তার মত নিয়েই এই সংলাপ চলছে।

ইউপিডিএফের প্রধান দাবীগুলো কী- এমন প্রশ্নের জবাবে মেজর এমদাদ বলেন, আসলে তারা যে ৬৯ পৃষ্ঠার দাবী নামা দিয়েছে তা সম্পূর্ণ মুখ বন্ধ একটি প্যাকেটে। আমি সেটা খুলে দেখিনি, দেখতেও চাই না। আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে এটা পৌঁছে দেবো। মৌখিকভাবেও তারা এমন কিছু বলেনি। ফলে এ বিষয়ে আমি বিশেষ কিছু বলতে পারবো না।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ইউপিডিএফ, ইউপিডিএফ সংলাপ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন