অর্থনৈতিক সংকটে কাপ্তাই চন্দ্রঘোনা শতবর্ষী কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধের পথে
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নে শতবর্ষী ১৯১৩ সালে অবস্থিত একমাত্র খ্রীস্টিয়ান কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্রটি চলমান অর্থনৈতিক সংকট ও বিভিন্ন সমস্যার ফলে আজ বন্ধের পথে। এদিকে বিদেশী সাহয্য বন্ধ ও সরকারিভাবে দেশ থেকে কুষ্ঠ নির্মূল ঘোষণায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। দীর্ঘ বছর যাবৎ চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চলানোর পর কুষ্ঠ হাসপাতালে চরম অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে রোগীদের পূর্বের মত চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছেনা হাসপাতাল পরিচালক।
হাসপাতালে ২৯/৩৫ জন কুষ্ঠ রোগী যথাযথ চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় চরম মানবেতর জীপনযাপন করছে। ৩৯বছর যাবৎ কুষ্ঠ চিকিৎসা নেওয়া আনোয়ার হোসেন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদের এখন মা ও বাবা। মরলে এখানে মরব। বাঁচলে এখানেই বাঁচব। নোয়াখালীর শেপালী আক্তার বলেন, সমাজ বা দেশের বাড়ির সকলে কুষ্ঠ বলে আমাদের কেউ ছুঁয়ে দেখে না।আবার অনেক রোগী বলছেন, আমরা হাসপাতাল হতে ৩৫/৪০ বাছর যাবৎ ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়ে রোগ পুরোপুরি ভাল হয়েছি। সমাজ আমাদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে। অভিশপ্ত বলে সমাজে ঠাই দেয়না। এ হাসপাতাল চিকিৎসা কেন্দ্র আমাদের একমাত্র বাঁচা মরার সেবা কেন্দ্র। আমাদের বাঁচতে সমাজের বিত্তশালী, বিদেশী ও আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী ও এনজিওদের এগিয়ে আসলে আমরা প্রাণে রক্ষা পাব।
হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ প্রবীর খিয়াং বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে লেপ্রসী জিরো (কুষ্ঠ), প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সেই লক্ষে এই চিকিৎসা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডভিত্তিক দ্যা লেপ্রসী মিশন এর অর্থায়নে এই কুষ্ঠ হাসপাতাল পরিচালিত হতো। কিন্ত ১৯৯৪ সালের পর হতে অর্থায়ন কমিয়ে দেয় এবং ২০১০ সালের পর হতে তাদের অর্থায়ন একেবারে বন্ধ করে দেয়। এর পর হতে কোন রকম সরকারি বা বেসরকারি সাহায্য সহায়তা ছাড়া মন্তর গতিতে খুঁড়িয়ে চলছে এ পুরাতন শর্তবর্ষী হাসপাতালটি।
১৯২৫সাল হতে মিশন টু লেপার (বর্তমানে লেপ্রসী মিশন ইন্টারনেশনাল) আর্থিক সহযোগিতা করে আসছিল। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত এই হাসপাতালের মাধ্যমে চট্রগ্রাম শহর এলাকা, পটিয়া, ফেনী, মালুমঘাট, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলায় ক্লিনিক স্থাপন করে নিরলভাবে কুষ্ঠ রোগীদের সেবা দিয়ে আসছে এবং কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণে কাজে সরকারি স্বাস্থ্য বিভাগকে সহায়তা করোছিলো। বিনামুল্যে চন্দ্রঘোনা কুষ্ঠ হাসপাতাল এর রোগীদের চিকিৎসা সহায়তার পাশাপাশি তাদেরকে ঔষধ, হাতের পায়ের বিভিন্ন উপকরণ ও খাবার বিতরণ করা করে আসছে। এছাড়া সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন কুষ্ঠ রোগীদের জন্য একটি আশ্রম গড়া হয়েছে।
কুষ্ঠ হাসপাতালের দায়িত্ব থাকা আফজাল জানান, বর্তমানে ২৯জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর্থিক সংকটের ফলে চিকিৎসা সেবা চলছে কোন রকম। হাসপাতালের প্রেগ্রাম অফিসার বিজয় মারমা জানান, ১৯২০ সাল থেকে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মাঝে কুষ্ঠ রোগ ব্যাপকভাবে দেখা দেওয়ায় তা নিরসনে নেদারল্যান্ডের আর্থিক সহযোগিতায় হাসপতালটি বৃহৎ পরিসরে আলোর মুখ দেখে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার লোক এ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসত। এবং সুস্থ হয়ে ফিরে ঘরে ফিরত। আবার কুষ্ঠ রোগীদের সমাজে জায়গা না হওয়ায় সব কুষ্ঠ রোগিদের এক সাথে বসবাসের জন্য কদমতলী ইউনিয়নে ঝুম পাড়া কুষ্ঠ পল্লীতে সে খানে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হত। কুষ্ঠ রোগীরা বিকালঙ্গ হওয়ার ফলে উপজেলা সমাজ সেবা হতে তারা কোন সাহায্য পায়না।
বর্তমানে কুষ্ঠ রোগীরা আর্থিক সংকটে ফলে চরম মনবতা ও হাসপাতাল চিকিৎসা কেন্দ্রটি বন্ধের পথে। এ রোগীদের সমাজে বেঁচে থাকলে হলে সমাজের তথা বিত্তবানদের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।