অ্যামনেস্টির মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধাপরাধের তদন্তের আহ্বান

fec-image

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইন ও চিন রাজ্যে শিশু‘সহ বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে। রাখাইনে বৈষম্যহীন বিমান হামলা চালানো হয়েছে। একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে তদন্তের জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

এ বিষয়ে বুধবার (৮ জুলাই) নতুন একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যামনেস্টি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, মার্চ ও এপ্রিলে চীন রাজ্যে বেশ কিছু গ্রামে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বোমা হামলা করেছে এমন নতুন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে তারা। এসব হামলায় মারা গেছেন এক ডজনেরও বেশি মানুষ।

অ্যামনেস্টিকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, ১৪ ও ১৫ই মার্চ পালেত্ব টাউনশিপে বিমান হামলায় মারা গেছেন তার এক আঙ্কেল, ভাই ও ওই ভাইয়ের ১৬ বছর বয়সী এক বন্ধু। একই গ্রামের আরেকটি পরিবারের দু’ব্যক্তি বলেছেন, বোমা হামলায় সাত বছর বয়সী একটি বালক সহ মারা গেছেন ৯ জন।

নিহত বালকটির পিতা অ্যামনেস্টিকে বলেছেন, আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। পালেত্ব এলাকায় ৭ই এপ্রিল আরেক দফা বিমান হামলা করা হয়। এতে সাত জন নিহত ও আট জন আহত হন। একজন কৃষক এমন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

এসব বৈষম্যহীন হামলায় যেহেতু বেসামরিক লোকজন মারা গেছেন তাই একে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

ওই অঞ্চলে সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে। উল্লেখ্য, আরাকান আর্মি রাখাইনের বৌদ্ধদের জন্য অধিকতর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এই রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই মুসলিম রোহিঙ্গা।

এ রাজ্যের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে চিন রাজ্যের, যার বেশির ভাগ মানুষ খ্রিস্টান। গত বছর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষ বৃদ্ধি পায়। মিয়ানমার সরকার তাদেরকে সরকারিভাবে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণার পর মার্চে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে।

এসব অস্থিরতার কারণে হাজার হাজার মানুষ তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এসব সংঘর্ষ যেখানে হচ্ছে তার বেশির ভাগ এলাকায় এক বছরের বেশি সময় ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের পরিচালক নিকোলাস বেকুইলিন বলেছেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করতে লোকজনকে যখন মিয়ানমার সরকার বাড়িঘরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে, তখন রাখাইন ও চিন রাজ্যে তার সেনাবাহিনী বেসামরিক লোকজনের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। নির্বিচারে হত্যা করছে বেসামরিক লোকজনকে।

যাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য করা যায়। তাই মিয়ানমারের এই পরিস্থিতিকে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে (আইসিসি) বিচারের জন্য পাঠাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বেকুইলিন। তিনি বলেছেন, বিমান হামলা ও ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া নতুন হতে পারে।

কিন্তু অব্যাহতভাবে বেসামরিক জনজীবনের কোনো তোয়াক্কা করছে না সেনাবাহিনী। আইসিসি এর আগে তাদেরকে যে নির্দেশনা দিয়েছে তারা তা লঙ্ঘন করছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া উচিত নিরাপত্তা পরিষদের। তবে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি মিয়ানমার সরকার।

উল্লেখ্য, রাখাইনে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত। সেখানে বিদেশী কোনো সাংবাদিককে যেতে হলে সরকারি মাধ্যমে যেতে হয়। এ জন্য আগেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর নৃশংসতার তদন্ত করছে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)। প্রায় তিন বছর আগে ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নৃশংস নির্যাতন শুরু করে সেনাবাহিনী। বাধ্য হয়ে তারা পালিয়ে এসে বাংলাদেশের কক্সবাজারে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন।

জানুয়ারিতে আইসিজে বলেছে, রোহিঙ্গাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ফলে গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে মিয়ানমার সরকারকে নির্দেশ দেয় আইসিজে।

ওই দিকে সংঘাতময় ওই অঞ্চলের সর্বশেষ রিপোর্টে অ্যামনেস্টি বলেছে, অনেক প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য নিয়েছে তারা। এসব ব্যক্তি খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। যাচাই করা হয়েছে ভিডিও ফুটেজের, যাতে সেনাদের নির্যাতনের চিত্র ফুটে উঠেছে।

গত ফেব্রুয়ারিতে এক নারীর স্বামীকে গ্রেপ্তার করে সেনারা। তিনি বলেছেন, তার স্বামীকে বেঁধে নিয়ে যায় সেনারা। চার রাত পাঁচদিন তাকে প্রহার করা হয়েছে। এ সময়ে তাকে খাবার বা পানি কিছুই দেয়া হয় নি। তিনি আরো বলেন, সেনারা তাকে লাথি মেরেছে। পিঠে রাইফেল দিয়ে আঘাত করেছে। বুকে লাথি মেরেছে।

অ্যামনেস্টি বলেছে, বন্দিদের প্রহারের ঘটনা মিয়ানমারে ব্যাপক। এর আগে একটি ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়। তারপর সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে যে, তাদের সেনারা মে মাসে বন্দিদের চোখমুখ বেঁধে ঘুষি ও লাথি মেরেছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন