আজ পবিত্র হজ: লাব্বাইক ধ্বনিতে মুখর আরাফার ময়দান

fec-image

প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ দিন মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। মহান আল্লাহ তা’য়ালার সন্তুষ্টি ও ক্ষমা লাভের আশায় সবার সমন্বিত ধ্বনি ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ মুখরিত হয়ে উঠেছে আরাফাত প্রান্তর।

আজ মঙ্গলবার (২৭ জুন) পবিত্র হজ, মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহৎ মিলনমেলা। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, সাদা-কালো কোনো ভেদাভেদ নেই আজ। সব ভেদাভেদ ভুলে শুধু দুই খণ্ড সাদা কাপড় শরীরে জড়িয়ে সবাই একত্রিত হয়েছে আরাফার ময়দানে। সবার মুখেই একই ধ্বনি ‘আমি হাজির, হে আল্লাহ, আমি হাজির।’ ক্ষমার আশায় সারাবিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীর আরাফায় তাকবির, তালবিয়া, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্না-রোনাজারিতে ব্যস্ত। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা এ আরাফার ময়দান।

আজ মঙ্গলবার আরাফাত দিবসে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ নামিরা থেকে হজের খুতবা ও নামাজ আদায়ের মধ্যদিয়ে পালিত হবে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আরাফাতে এ দিনের আনুষ্ঠানিকতাকে মূল হজ বলা হয়। আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের ভাষণ দেবেন সৌদি আরবের সিনিয়র উলামা কাউন্সিলের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদ।

এ বছর হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে রোববার। সোমবার রাতও পবিত্র মিনায় অতিবাহিত করেন হজযাত্রীরা। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইতিহাসে এবারই (২০২৩ সালে) সবচেয়ে বেশি হাজির পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে কাবা প্রাঙ্গণ। কাবা ঘর প্রদক্ষিণ করেছেন বিশ্বের ১৬০টি দেশ থেকে আসা লাখ লাখ হাজি।

ইতিহাসের সবচেড়ে বড় হজ হওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এ বছর, আমরা ইতিহাসে সবচেয়ে বড় হজ প্রত্যক্ষ করছি।’

সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ কর্তৃপক্ষ হজে অংশগ্রহণকারী আল্লাহর মেহমানদের আরাফাতের ময়দানে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। আরাফার ময়দানে উপস্থিত হাজিরা দুপুরে সৌদি উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য শায়খ ড. ইউসুফ বিন মুহাম্মদ বিন সাঈদের কণ্ঠে শুনবেন হজের খুতবা ও দিকনির্দেশনা।

তাওবাহ-ইসতেগফার, তাকবির ও তালবিয়ায় মুখরিত থাকবে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দান। হজে অংশগ্রহণকারীরা এক সামিয়ানায় সমবেত হয়ে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।

হাজিদের উপস্থিতিতে এবারের আরাফাতের ময়দান হবে কানায় কানায় পরিপূর্ণ। বিশেষ ব্যবস্থায় জাবালে রহমতের পাদদেশে হজ পালন করবেন হাজিরা। মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে সৌদি আরবের ইতিহাসে এবারই প্রথম শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে খুতবা দেবেন।

বিশ্বব্যাপী মুসলিম উম্মাহও আজ হজ পালনকারীদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে তাদের জন্য দোয়া কামনা করছে। যাতে হজে অংশগ্রহণকারীরা সুস্বাস্থ্য, সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে সুন্দরভাবে হজ সম্পাদন করতে পারে।

আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত সব হাজির কাণ্ঠে একই সঙ্গীত-
لَبَّيْكَ اَللّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান-নিমাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’।

দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ, রহমত প্রাপ্তি ও নিজেদের গুনাহ মাফের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফরিয়াদ জানাবে সমবেত ধর্মপ্রাণ মুসলমান। লাখ লাখ হাজির উপস্থিতিতে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক অনুপম দৃশ্যের অবতারণা হবে আজ আরাফাতের ময়দানে।

আজ ৯ জিলহজ (মঙ্গলবার) সূর্যোদয়ের পর থেকে আরাফাতের ময়দান মুখী হজে অংশগ্রহণকারীরা। আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা ও ইবাদত-বন্দেগি চলবে সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত।

বিশ্ব মুসলিমের কল্যাণ কামনাসহ মহামারি করোনা থেকে মুক্তি চাইবে হজে অংশগ্রহণকারীরা। দিনভর কান্নাকাটি দোয়া-ইসতেগফারের পর সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে রওনা হবে মুজদালিফার দিকে। যেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাবে মুসলিম উম্মাহ। আর এর মাধ্যমেই পালিত হবে হজ।

উল্লেখ্য, মহামারি করোনার কারণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় ১৪৪১ ও ১৪৪২ হিজরির হজে সৌদি আরবের বাইরে থেকে পবিত্র হজ পালনে কোনো লোক অংশগ্রহণ করতে পারেনি। ১৪৪৩ হিজরিতে অংশগ্রহণ করেছে মাত্র ১০ লাখ লোক। তবে ওই তিন বছর সৌদি বসবাসকারী বিশ্বের ১৬০ দেশের মানুষ অল্প সংখ্যায় হজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আর এবার সারাবিশ্ব থেকে অংশগ্রহণ করেছেন লাখ লাখ মানুষ।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুস্থতা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে যথাযথভাবে হজ সম্পাদনের তাওফিক দান করুন। মুসলিম উম্মাহর গুনাহ মাফ করুন। হজে অংশগ্রহণকারীদের হজে মাবরূর দান করুন।

আরাফার দিনের দোয়া:
আরাফার দিনের দোয়ার বিশেষ গুরুত্বের কথা বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আরাফাতের দিনের দোয়াই শ্রেষ্ঠ দোয়া। দোয়া-জিকির হিসেবে সর্বোত্তম হলো ওই দোয়া, যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ করেছেন। তা হলো— لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়ইন ক্বাদির।’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি একক, তার কোনো শরিক নেই, রাজত্ব একমাত্র তারই, সমস্ত প্রশংসাও একমাত্র তারই জন্য, আর তিনি সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান।’ (জামে তিরমিজি: ৩৫৮৫; শুআবুল ঈমান, বায়হাকি: ৩৭৭৮)

উপরিউক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্দুল বার (রহ) বলেন, এ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আরাফার দিনের দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হবে। আর সর্বোত্তম জিকির হলো ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ (ইবনে আব্দুল বার, আত-তামহিদ)। ইমাম খাত্তাবি (রহ) বলেন, এ হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, দোয়া করার সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহ তা’আলার প্রশংসা ও তাঁর মহত্বের ঘোষণা করা উচিত। (ইমাম খাত্তাবি, শান আদ-দোয়া: পৃ-২০৬)

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: হজ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন