আজ বিশ্ব শিশু দিবস

fec-image

আজকের শিশু আগামী দিনেরর ভবিষ্যৎ। তারাই আগামী বিশ্বকে গড়বে। তাই তাদের অধিকার সুনিশ্চিত, মানসিক বিকাশে সহায়তা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়।

‘শিশুর জন্য বিনিয়োগ করি, ভবিষ্যতের বিশ্ব গড়ি’– এই প্রতিপাদ্যে আজ সোমবার সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিশ্ব শিশু দিবস। একই সঙ্গে শিশুর অধিকার, সুরক্ষা এবং শিশুর উন্নয়ন ও বিকাশে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী ও সচেতন করার লক্ষ্যে ২ থেকে ৮ অক্টোবর পালন করা হবে শিশু অধিকার সপ্তাহ।

বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। সভাপতিত্ব করবেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

শিশু একাডেমি, ইউনিসেফ, দেশি ও বিদেশি শিশু সংগঠন ও উন্নয়ন সংস্থা বিশ্ব শিশু দিবস ও শিশু অধিকার সপ্তাহ উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে। শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শিশু সংলাপ, ক্রীড়া, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ও গোলটেবিল বৈঠক হবে। জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরাম আয়োজন করেছে আলোচনা ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিশু দিবসের অনুষ্ঠান ও টকশো বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচার হবে।

শিশু দিবস ও অধিকার সপ্তাহ পালনে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে থাকবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো।

শিশুদের মোবাইল ব্যবহারের অপকারিতা
বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি ও ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন বলেন, শৈশবে মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার শিশুর সামাজিক ও মানসিক বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলে। অনেক মা শিশুদের মোবাইল দেখিয়ে খাওয়ান বা কাঁদলেই মোবাইল দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এতে শিশু মোবাইলকে খেলনা ভেবে ধীরে ধীরে কার্টুনে আসক্ত হয়ে পড়ে। পরিণতিতে শিশুরা কথা বলতে দেরি করে, খিটখিটে ও জেদি হয়ে পড়ে।

অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, মা-বাবা দু’জনেই চাকরি বা অন্য কাজে বাইরে থাকলে সন্তান একা থেকে টিভিতে আসক্ত হয়ে পড়ে। যেসব শিশু বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন– খেলাধুলা, দৌড়ানো বা সাইকেল চালানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত, তারাই ক্রমাগত মোবাইল বা ভিডিও গেমে আসক্ত হয়ে পড়ে। ফলে কোনো কিছুতে মনোনিবেশ এবং বাস্তব জীবনে কার্যকরভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা বিঘ্নিত হয়। এ ছাড়া চোখেরও ক্ষতি হয়। মোবাইল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইন্টারনেট গেম আসক্তি অন্যান্য নেশাজাত দ্রব্যের আসক্তির মতোই। একটা আচরণগত আসক্তি, অন্যটা রাসায়নিক আসক্তি। টিভি, মোবাইল গেম বা যে কোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ডোপামিন নিউরোট্রান্সমিটার নিঃসরিত হয়। এই ডোপামিন আমাদের মনে ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। ফলে অতি সহজেই আমরা আসক্ত হয়ে পড়ি।

শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। শিশুদের শয়নকক্ষে সব ধরনের ডিভাইস রাখা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে মা-বাবাকে তাদের সন্তানদের সঙ্গে একটি প্রযুক্তি ব্যবহারের নীতিমালা পরিকল্পনা তৈরি করে, অর্থাৎ কখন-কীভাবে ডিভাইসগুলো ব্যবহার করা হবে, তা নির্দিষ্ট করে ফেলতে হবে। মা-বাবারও একই নিয়ম অনুসরণ করা উচিত। পাশাপাশি সবারই ঘুমের রুটিন থাকা উচিত।

নিজেদের ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে মোবাইল গেম বা ভিডিওতে আসক্ত করা অন্যায়। শিশুদের খেলাধুলা নিশ্চিত করতে হবে। শিশুকে বাগান, পার্ক বা মাঠে খেলাধুলা করতে নিয়ে যেতে হবে। যারা শহরে থাকেন, তারা সপ্তাহে একদিন বা মাসে দু’দিন শিশুকে নিয়ে প্রকৃতির কাছে যেতে পারেন।

শিশুদের ঘরের কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। সন্তানকে ছোট ছোট কাজে সহযোগিতা করা শেখাতে হবে। এতে শিশুরা ঘরের কাজের প্রতি আগ্রহী হবে এবং মোবাইল আসক্তি থেকে ধীরে ধীরে সরে আসবে।

শিশুর স্ক্রিন টাইম নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চোখের বিশ্রামের জন্য স্ক্রিন থেকে পর্যাপ্ত সময় বিরতি নিতে উপদেশ দিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন