আলীকদম উপজেলা নির্বাচন: ভোটের সমীকরণে এগিয়ে আ.লীগ! বিএনপিতে বিভীষণ

Upazilla election Alikadam Pic 7,3,14.doc

মমতাজ উদ্দিন আহমদ, আলীকদম (বান্দরবান):
বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাচনে বিএনপিতে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণে’ পরিণত হয়েছে। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানে পদে বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। স্থানীয় ও জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ প্রার্থীদের পরস্পরের কোন্দল ও মতানৈক্য মেটাতে কার্যত ব্যর্থ হয়েছেন। বিএনপির আভ্যন্তরীণ অর্ন্তকোন্দলেই এবার আ.লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ‘সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। অপরদিকে, আ.লীগেও রয়েছে তীব্র কোন্দল। কোন্দল মেটাতে পারলে ভোটের সমীকরণে আ.লীগ এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।

এক সময়ে বিএনিপর দুর্গ হিসেবে খ্যাত পার্বত্য উপজেলা আলীকদমে বিএনপির আভ্যন্তরীণ কোন্দল চলছে দীর্ঘদিন ধরে। ২০১১ সালে কাউন্সিলে মাধ্যমে নির্বাচিত সভাপতিকে ‘সরিয়ে’ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে জেলা বিএনপি। এ কমিটির দায়িত্ব ছিল অনেকটা ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার’ এর মতো। ফলে জোড়াতালি দিয়ে দল পরিচালিত হলেও শক্তি সঞ্চয় করতে পারেনি মাঠ পর্যায়ে। নেতাকর্মীদের মাঝে বেড়েছে পারস্পরিক দুরত্ব। এ সুযোগে আ.লীগ এগিয়েছে বহুদুর। এ অভিমত স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের। ফলে উপজেলা নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর চেয়ারম্যানসহ তিনটি পদেই বিএনপি থেকে থেকে একাধিক প্রার্থী হয়।

এক্ষেত্রে জেলা বিএনপি চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী ঘোষণা করলেও শরীক দল জামায়াতসহ তিনটি পদে একাধিক প্রার্থী রয়ে যায়। অপরদিকে, আ.লীগ একক প্রার্থী ঘোষণা করতে সক্ষম হয়।

প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটের হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের সমর্থিত একক প্রার্থী জামাল উদ্দিন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল হয়েছে। অপরদিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী  ও উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামের বিরুদ্ধে রয়েছে বিদ্রোহী প্রার্থী। তবে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থীর মধ্যে জামাল-কালামের মধ্যে ভোটযুদ্ধ হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

নির্বাচন কার্যালয় সুত্র জানায়, ২০০৯ সালের নির্বাচনে আলীকদম উপজেলায় ভোটার ছিলেন ২২ হাজার ১৮১ জন। ওই সময় চেয়ারম্যান পদে ভোট পড়ে ১৫ হাজার ৮৯৩টি। এবার উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৪ হাজার ৬৮৯ জনে। ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী শতকরা ৪০.৭০ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হন। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শতকরা ৩০.৫০ ভাগ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সে সময় আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী পান শতকরা ১৮.৫৩ ভাগ ভোট। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী বিদ্রোহী প্রার্থী মাঠে থাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী জয়ের পথ রুদ্ধ হয় বলে দলের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। ওই সময় একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পেয়েছিলেন শতকরা ৯.১৫ ভাগ ভোট।

এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে ভোট ব্যাংক ধরে রাখা গেলে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর জয়লাভ তেমন বেশি কঠিন হবেনা বলে মনে করে সাধারণ ভোটাররা। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ছিলেন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন। এবার দল তাকে সমর্থন দেয়নি। সেদিক থেকে এবার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর ঘরে কি পরিমাণ ভোট পড়ে সহজে অনুমান করা কঠিন। তবে এবার আ.লীগে চেয়ারম্যান পদে কোন বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।

এবার নির্বাচনী মাঠে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ফরিদ আহমদ চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। এর ফলে ২০০৯ সালে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর পাওয়া ভোটের ৪০.৭০ ভাগ থেকে কিছু ভোট বিদ্রোহী প্রার্থীর ঘরে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) থেকেও চেয়ারম্যান পদে ২ জন প্রার্থী রয়েছেন। এরা হলেন চাহ্লামং মারমা ও মিখিং মারমা। এই দুই প্রার্থীর প্রচার-প্রচরণা অনেকটা সীমিত।

সচেতন ভোটাররা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থনের চেয়ে ভোটাররা প্রার্থীর ইমেজকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থিত প্রার্থীরা বর্তমানে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই হিসেবে প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের নতুন করে ভাববার এতো বেশি প্রয়োজন নেই বলে অভিমত দিয়েছেন ভোটাররা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আর বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী একবার ইউনিয়ন পরিষদে ছিলেন। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এখন উপজেলা চেয়ারম্যান পদে আছেন।

জানা গেছে, গত ২০০৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের ঘরে মোট ভোট পড়ে ৪৯.০৩ ভাগ। ভোটের সমীকরণে দলীয় প্রার্থী এগিয়ে থাকলেও সাধারণ ভোটারদের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে তেমন বেশি প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করছেন সচেতন মহল। তবে পাহাড়ী ভোটাররাই যে কোনো প্রার্থী বিজয়ের প্রধান নিয়ামক হতে পারে।

অপরদিকে, বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মো. আবুল কালামের পক্ষে স্থানীয় কিছু উপজাতীয় ভোট যোগ হবে বলছেন অনেকে। বিএনপি সমর্থিত প্রাথী ৪০.৭০ ভাগ ভোট পেয়ে জয়ী হলেও জেএসএস সমর্থিত ভোটারদের সমর্থনের ফলে এবার তার ঘরে ভোটের অংক বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জেএসএস এর দু’জন প্রার্থী মাঠে থাকায় এ ধারণাও হয়ত মিলবে না।

দুই জেএসএস প্রার্থীর কারো দলীয় সমর্থন নেই বলেছেন উপজেলা জেএসএস’র সহ-সভাপতি ও ইউপি সদস্য প্রুচাঅং মারমা। তিনি বলেন, জেএসএস ভাইস চেয়ারম্যান পদে কাইনথপ ম্রোকে দলীয় প্রার্থী করা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে কাজ করছেন। এছাড়া কেউ দলীয় প্রার্থী নয়। এবার আলীকদম উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদ পেতে আওয়ামী লীগ মরণ কামড় দেবে। তবে পদটি ধরে রাখতে বিএনপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন