উখিয়ায় ৩ কি.মি. আঞ্চলিক সড়কে মরণফাঁদ

উখিয়া
স্টাফ রিপোর্টার:
কক্সবাজারের উখিয়ার ৩ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক পথ মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে ছোটখাট যানবাহন চলাচল করলেও পুরো বর্ষা মৌসুমে এসব এলাকার লোকজনকে আপন দেশে পরবাসের মত জীবন যাপন করতে হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতির কারণে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণ করার মতো ঘটনাও এখানে ঘটেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী সিন্ডিকেট খাল থেকে লুটপাট করে বালি বাণিজ্যের ফলে সড়ক পথের করুণ দশার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এলাকার ১২ হাজার মানুষ যুগ-যুগ ধরে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের থাইংখালী থেকে পশ্চিমে প্রায় ৩ কিলোমিটার অদূরে তেলখোলা ও মোছারখোলা গ্রামে প্রায় ৫ হাজার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির বসবাস। এ দুটি গ্রামের পাশাপাশি মাইজ্যাবিল, তুইপ্যাখালী, হাতিমারা, পেঁচামারা, খালের আগা, বালুঘোনা, গর্জনখোলা, আছিয়ার বাপের ঘোনা, আরহাতু বাপের ঘোনা, মাঝের পাড়া, চাকমা পাড়া, মংকু পাড়া, নলিংপাড়া, সত্যপাড়া, নোয়াপাড়া, লামংপাড়া, চিতাকুলাপাড়া, ভুলুরঝুড়ি, পানিরছড়াসহ ২২টি গ্রামে বসবাস করছে প্রায় ১২ হাজার মানুষ।
সরেজমিন তেলখোলা ঘুরে জানা যায়, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে মাঝের পাড়া গ্রামের হাছন আলীর ২ বছরের শিশু পুত্র হামজলা। একই গ্রামের শামশুল আলমের শিশু পুত্র নিমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য উপজেলা হাসপাতালে নেওয়ার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যানবাহনের অভাবে তা আর হয়নি। সেই রাতে তার দুই মাসের শিশু পুত্র মারা যাওয়ার কথা স্বীকার করলেন শামশুল আলমের পরিবার। এভাবে অনেকেই অকালে মৃত্যু বরণ করার ঘটনা এ অজপাড়া গাঁয়ে ঘটেছে বলে গ্রামবাসীর অভিযোগ।
তেলখোলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী দিলদার আলম জানায়, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার সুযোগে ডাকাত সন্ত্রাসীরা এখানে বেপরোয়া। পাশাপাশি মদ-জুয়াঁসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক থাকলেও দেখার কেউ নেই। সে জানায়, থানা থেকে পুলিশ আসার অনেক আগেই অপরাধী চক্ররা গাঁ ঢাকা দিতে সক্ষম হয়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী নুরু মিয়া জানান, এখানে মাধ্যমিক শিক্ষার কোন ব্যবস্থা না থাকায় ছেলে মেয়েদের প্রায় ৪ মাইল পথ পাঁয়ে হেটে থাইংখালী উচ্চ বিদ্যালয় গিয়ে পড়ালেখা করতে হয়।
এলাকার হেডম্যান লক্ষ্য চাকমা জানান, পার্বত্য জেলা বান্দরবানের চিন্নমূল প্রায় ২ হাজার উপজাতি এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে। তারা সহ বর্তমানে এখানে ৫ হাজার উপজাতি পরিবারের বসবাস। ভূমিহীন এসব পরিবার গুলো বনবিভাগের পাহাড়ী পরিত্যক্ত জমিতে বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি উৎপাদন করলেও তা বাজারজাত করার সুযোগ না থাকায় এসব উপজাতি পরিবার গুলো আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বি হতে পারছেনা।
তেলখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদ আহমদ জানান, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বর্ষা মৌসুমে ছাত্রছ্ত্রাীর উপস্থিতি আশংকাজনক ভাবে হ্রাস পায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মানিক চাকমা বলেন, ৩ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে এক কিলোমিটার সড়কে ব্রীক সলিন করা হলেও তা বর্তমানে খানাখন্দকে পরিণত হয়েছে। অবৈধ বালি উত্তোলনের ফলে থাইংখালী খালের অব্যাহত ভাঙ্গনে থাইংখালী-তেলখোলা সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, প্রশাসন ও সাংসদের বিমাতা সুলভ আচরণের ফলে পালংখালী ইউনিয়নের তেলখোলা মোছারখোলাসহ ২২টি গ্রামের প্রায় ১২ হাজার মানুষ নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন