কলেজ নেই পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন উপজেলায়

এইচএসসির ফলাফলে সবচেয়ে পিছিয়ে খাগড়াছড়ি, এগিয়ে বান্দরবান

fec-image

এবার পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে বান্দরবানের লামায় অবস্থিত কোয়ান্টাম কসমো কলেজ এবং অন্যটি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ কাপ্তাই।

২০২২ সালে এইচএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ বুধবার। eboardresults.com সাইট থেকে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের জেলাভিত্তিক এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তিন পার্বত্য জেলা থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ১৪৩৫৬ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে পাস করেছে ১০৫২০ (৭৩.২৮%) এবং অকৃতকার্য হয়েছে ৩৮৩৬ (২৬.৭২%) জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪২৮ শিক্ষার্থী। পাসের হারের দিক থেকে পার্বত্য তিন জেলার মধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে খাগড়াছড়ি এবং এগিয়ে আছে বান্দরবান। এ জেলার পাসের হার ৬৫.৩৬ শতাংশ। অন্যদিকে রাঙামাটির পাসের হার ৭৭.৮ শতাংশ এবং বান্দরবানের পাসের হার ৭৮.৯৮ শতাংশ।

চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ জানান, চট্টগ্রাম বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৯৩ হাজার ৯৯৭ জন। এর মধ্যে উপস্থিত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৯১ হাজার ৯৬০ জন। পাস করেছে ৭৪ হাজার ৩২ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে পাসের হার ৮০.৫০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৬৭০ শিক্ষার্থী। চট্টগ্রাম বোর্ডে এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে ১২ হাজার ৯৩৯ জন।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের মতে, চট্টগ্রাম বোর্ডে প্রতিবারের মতো এবারও ফলাফলে পিছিয়ে রয়েছে তিন পার্বত্য জেলা তথা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান। এই তিন জেলার বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইংরেজি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। তিনি বলেন, এ তিন জেলায় দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। বিশেষ করে ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষকের সংকট রয়েছে। এ কারণে ফলাফল খারাপ হয়েছে।

রাঙামাটি
মোট পরীক্ষার্থী ৬০১৭, পাস করেছে ৪৬৮১ (৭৭.৮%), অকৃতকার্য হয়েছে ১৩৩৬ (২২.২%)। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৯৫ জন। রাঙামাটি জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে নিবন্ধিত কলেজ আছে ১৮টি। এর মধ্যে রাঙামাটি সদরে ৫টি, কাউখালীতে ৩টি, লংদুতে ২টি, বাঘাইছড়িতে ২টি, কাপ্তাইতে ২টি, রাজস্থলীতে ২টি, বরকলে ১টি এবং নানিয়ারচরে ১টি কলেজ আছে। বিলাইছড়িতে কোনো কলেজ নেই এবং জুড়াছড়িতে ১টি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে সেটি থেকে শিক্ষার্থীরা এখনো পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।

বান্দরবান
মোট পরীক্ষার্থী ২৮৫৪, পাস করেছে ২২৫৪ (৭৮.৯৮%), অকৃতকার্য হয়েছে ৬০০ (২১.০২%)। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১৭ জন। বান্দরবান জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে নিবন্ধিত কলেজ আছে ১৩টি। এর মধ্যে বান্দরবান সদরে ৪টি, লামায় ৪টি, নাইক্ষ্যংছড়িতে ২টি, রুমায় ১টি, থানচিতে ১টি এবং রোয়াংছড়িতে ১টি কলেজ আছে। বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় কোনো কলেজ নেই।

খাগড়াছড়ি
মোট পরীক্ষার্থী ৫৪৮৫, পাস করেছে ৩৫৮৫ (৬৫.৩৬%), অকৃতকার্য হয়েছে ১৯০০ (৩৪.৬৪%)। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১৬ জন। খাগড়াছড়ি জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে নিবন্ধিত কলেজ আছে ১৭টি। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি সদরে ৩টি, দীঘিনালায় ৪টি, পানছড়িতে ২টি, মহলাছড়িতে ২টি, মাটিরাঙ্গায় ২টি, মানিকছড়িতে ১টি, লক্ষ্মীছড়িতে ১টি, রামগড়ে ১টি এবং গুইমারায় ১টি কলেজ আছে।

শতভাগ পাস ২টি প্রতিষ্ঠানের
এবার পার্বত্য চট্টগ্রামের দুটি কলেজের শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করার কৃতিত্ব অর্জন করেছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি হচ্ছে বান্দরবানের লামায় অবস্থিত কোয়ান্টাম কসমো কলেজ এবং অন্যটি রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ কাপ্তাই। লামায় অবস্থিত কোয়ান্টাম কসমো কলেজ থেকে ২০২২ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় ৪২ শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে সবাই কৃতিত্বের সাথে পাস করেছে এবং তাদেও মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ২২ জন। বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৭ জনের মধ্যে ৫ জনই জিপিএ ৫, মানবিক বিভাগ থেকে ২১ জনের মধ্যে ৫ জিপিএ ৫ এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনই জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে।

কাপ্তাইয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ কাপ্তাই থেকে ২০২২ সালে ১৫১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই কৃতিত্বের সাথে পাস করে। জেলার সর্বোচ্চ সংখ্যক ৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বাণিজ্য বিভাগ থেকে ৪৬ জনের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮ জন, মানবিক বিভাগ থেকে ২৯ জনের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১১ জন এবং বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ৭৬ জনের মধ্যে ৭৬ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে।

কলেজ নেই তিন উপজেলায়
২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে দেখা যায় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি উপজেলায় কোনো কলেজ নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় মোট উপজেলা আছে ২৬টি। এর মধ্যে বান্দরবানের আলীকদম এবং রাঙামাটি জেলার জুড়াছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় কোনো কলেজ নেই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুড়াছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান সুরেশ কুমার চাকমা জানান, ‘আমরা ২০১৭ সালে জুড়াছড়িতে শলক কলেজ নামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। ২০২১-২২ শিক্ষা বর্ষ থেকে পাঠদানের অনুমোদন পেয়েছে শলক কলেজ। ২০২৩ সালে এ কলেজ থেকে প্রথমবারের মতো ৬৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবে।’

বিলাইছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা জানান, ‘বিলাইছড়িতে কলেজ করার মতো জায়গা পাচ্ছি না। তাছাড়া কলেজ প্রতিষ্ঠার মতো আর্থিক সঙ্গতিও আমাদের নাই। উপজেলার শিক্ষার হারও কম। এখানকার ছেলেমেয়ে যারা কলেজে পড়তে চায় তারা বড়ইছড়ি, রাঙামাটি সদরসহ নানা জায়গায় গিয়ে ভর্তি হয়।’

আলীকদম উপজেলার চেয়ারম্যান মো. আবুল কালামের মোবাইলে একাধিকবার কল করেও সংযোগ না পাওয়ায় মতামত নেয়া যায়নি। তবে আলীকদম প্রেসক্লাবের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমদ জানান, ‘আলীকদমে এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারি কোনো কলেজ নেই। তবে ৮ বছর আগে বেসরকারি উদ্যোগে আলীকদম আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এখনো মাধ্যমিক স্তর পর্যন্তই আছে। এটি কলেজ পর্যায়ে উন্নীত হতে আরো কয়েক বছর লেগে যাবে।’

উল্লেখ্য, ২০২২ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি এবং সমমান পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদেও ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩। এতে সারাদেশের শিক্ষার্থীদের গড় পাসের হার ৮৫.৯৫ শতাংশ।

প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৭.৮৩ শতাংশ, বরিশালে ৮৬.৯৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮০.৫০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৯০.৭২ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৯.০৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮১.৬০ শতাংশ, সিলেটে ৮১.৪০ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮০.৩২ শতাংশ ও যশোরে ৮৩.৯৫ শতাংশ। আর মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯২.৫৬ শতাংশ ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে ৯৪.৪১ শতাংশ।

২০২২ সালের ৬ নভেম্বর এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। ১৩ ডিসেম্বর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ও ২২ ডিসেম্বর ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হয়।

 

 

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন