কংজরী চৌধুরী‘র নেতৃত্বে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে ১৫ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পরিষদ ঘোষণা

কংজরী চৌধুরী

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :

নানা নাটকীয়তার পর খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কংজরী চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে গঠিত হলো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ‘র অন্তবর্তীকালীন পরিষদ। বুধবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফারহানা হায়াত স্বাক্ষরিত এক ফ্যাক্স বার্তায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ‘র নতুন অন্তবর্তীকালীন পরিষদ গঠনের কথা জানানো হয়। এর আগে গত ২১ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পরিষদ অনুমোদন দেন।

পরিষদের সদস্যরা হলেন, বাঙ্গাালী কোটায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো: জাহেদুল আলম, মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান এম আবদুল জব্বার ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগ‘র যুগ্ম সম্পাদক নির্মল চৌধুরী ও মহিলা সদস্য হিসেবে মাটিরাঙ্গা উপজেলা মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান নিগার সুলতানা। ত্রিপুরা কোটায় নিয়োগ পেয়েছেন খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামলীগের সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা রণ-বিক্রম ত্রিপুরা, লতিবান ইউনিয়নের টানা তিনবারের সফল চেয়ারম্যান খগেশ্বর ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোকনেশ্বর ত্রিপুরা। মারমা কোটায় খাগড়াছড়ি পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামলীলীগ‘র সহ-সভাপতি মংক্যচিং চৌধুরী, জেলা আওয়ামলীলীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মংশেপ্রু চৌধুরী অপু এবং লক্ষীছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি রেম্রাচাই চৌধুরী।

চাকমা কোটায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আশুতোষ চাকমা, খাগড়াছড়ি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জুয়েল চাকমা, পানছড়ির শতীষ চাকমা ও উপজাতীয় কোটায় মহিলা সদস্য হয়েছেন দীঘিনালা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শতরূপা চাকমা।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীন পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী‘র সাথে কথা হলে তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন, খাগড়াছড়ির পিছিয়ে পড়া এলাকার উন্নয়নের পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখাই হবে আমার প্রধান কাজ। খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অন্তবর্তীকালীন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে নিয়োদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাসহ দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দায়িত্ব পালনে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুন অপর দুই পার্বত্য জেলার মতোই নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদ’। সেসময় একজন চেয়ারম্যান ও ত্রিশ জন সদস্য নিয়ে এই পরিষদের যাত্রা করেছিল। শুরুতে খাগড়াছড়ি স্থানীয় সরকার পরিষদে বাঙ্গালী ৯ জন, চাকমা ৯ জন ,মারমা ৬ জন ও ত্রিপুরা ৬ জন করে সদস্য ছিল। প্রতি পাঁচ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে পরিষদটি গঠন হওয়ার কথা থাকলেও সময়ের ব্যবধানে স্থানীয় সরকার পরিষদ ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’ এ রূপ লাভ করেছে। কিন্তু স্থানীয়, জাতীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক নেতৃত্বের টানাপোড়েনে আর সরকারের উচ্চ মহলের আন্তরিকতার অভাবে একটি কার্যকর স্থানীয় সরকার মাধ্যমকে গনতান্ত্রিক ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়নি দুই যুগেরও বেশী সময়ে।

১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বদৌলতে স্থানীয় সরকার পরিষদের নাম বদল করে রাখা হয় ‘পার্বত্য জেলা পরিষদ’। সে সাথে একত্রিশ সদস্যের পরিষদ পাল্টে ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে একজন চেয়ারম্যান (উপজাতি) ও অপর চার সদস্য দিয়ে অন্তবর্তিকালীন পরিষদ। সে থেকে নির্বাচনবিহীন ও ফ্যাক্স বার্তার মাধ্যমে অপর দুই জেলার মতো খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে চেয়ারম্যান ও সদস্য পরিবর্তন হয়ে আসছে।

সর্বশেষ গত বছরে ২৩ নভেম্বর মহান জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সংশোধনীতে সেই ৫ সদস্যের অন্তবর্তীকালীন পরিষদের কলেবরকে বাড়িয়ে ১৫ সদস্য করা হয়। নতুন সংশোধীত আইনানুযায়ী খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদে উপজাতীয়দের থেকে একজন চেয়ারম্যান ছাড়াও জেলায় বসবাসরত জনগোষ্ঠির জনসংখ্যানুপাতে সদস্য মনোনিত করা হবে। সদস্যদের মধ্যে চাকমা তিন জন, মারমা তিন জন, ত্রিপুরা তিন জন, অ-উপজাতি জনগোষ্ঠি হতে তিন জন, অ-উপজাতীয় মহিলা এক জন ও উপজাতীয় মহিলা একজন করা হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন