কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে গণধর্ষণের অভিযোগে শ্রমিক নেতাসহ আটক-২

fec-image

কক্সবাজারের ঈদগাঁওয়ে এক কিশোরীকে গণধর্ষণের অভিযোগে দুই মাইক্রো শ্রমিককে আটক করেছে ঈদগাঁও থানা পুলিশ । পরে ঈদগাঁও থানায় গণধর্ষণ মামলা দায়ের করেছে ভিকটিমের নানা।

ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম জানিয়েছেন, গত ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় এ গণধর্ষণ ঘটনায় জড়িতের অভিযোগে ধৃত দুই জনসহ ৪ জনকে আসামি করে কিশোরীর নানার দেয়া এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভূক্ত হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানাধীন ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ী গ্রামের মো. ইদ্রিসের ছেলে জাফর আলম ওরফে খোরশেদ (৫৫) এবং একই ইউনিয়নের আউলিয়াবাদ এলাকার মো. জয়নাল আবেদীনের ছেলে আহম্মদ উল্লাহ (২৬)।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে প্রথমজন ঈদগাঁও মাইক্রোবাস শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং অপরজন মাইক্রোবাস চালক। এছাড়া মামলার পলাতক অন্য দুই আসামি হল ঈদগাঁও ইউনিয়নের উত্তর মেহেরঘোনার ছব্বির আহমদের ছেলে জলাল ওরফে টুক্কুইয়া (১৯) এবং ইসলামাবাদ ইউনিয়নের খোদাইবাড়ীর মৃত আবুল হোসেনের ছেলে জাফর আলম (৪০)। ভিকটিম কিশোরীর বাড়ি একই জেলার মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতুরিয়া এলাকায়। তার নানার বাড়ি একই উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ধলঘাট পাড়ায়।

প্রদত্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ জানুয়ারি বিকালে ভূক্তভোগী কিশোরী পার্শ্ববতী এলাকার এক বান্ধবীর ছোট ভাইয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্থানীয় ধলঘাট বাজারের লন্ড্রির দোকানের সামনে পৌঁছালে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাস কিশোরীর সামনে এসে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে আচমকা ৩ জন লোক ওই কিশোরীর মুখ চেপে ধরে জোর পূর্বক গাড়ীতে তুলে নেয়। এসময় সে চিৎকার করার চেষ্টা করলে অপরণকারীরা মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দেয় এবং দ্রুত মাইক্রো বাসটি ছেড়ে দেয় ।

অপহরণের দিন ভিকটিমকে মাইক্রোবাস যোগে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাট মাইক্রোবাস স্ট্যান্ডে নিয়ে হাত-পা বেঁধে গাড়ীটির পিছনের সিটে ৩ জন মিলে জোর পূর্বক গণধর্ষণ করে। পরদিন ( ২৯ জানুয়ারি ) রাতে একই মাইক্রোবাসযোগে ওই কিশোরীকে ঈদগাঁও ফরিদ আহমদ কলেজ মাঠে নিয়ে ৩ জন মিলে ফের ধর্ষণ করে।

ওই দিন ( ২৯ জানুয়ারি ) রাতে ভিকটিম কিশোরীকে তুলে আনার ঘটনাটি অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে শ্রমিক নেতা জাফর আলম ওরফে খোরশেদকে জানায়। পরে কিশোরিকে রাতেই ঈদগাঁও বাজার ডিসি রোডের মমতাজ মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় মাইক্রোবাস চালক সমিতির অফিসে নিয়ে পাশের আরেকটি কক্ষে জোর পূর্বক ঢুকানোর চেষ্টা করে।

এসময় কিশোরীর শোর-চিৎকারে বাজারের দায়িত্বরত প্রহরীরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পলাতক ধর্ষকরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও ঘটনাস্থল থেকে হাতেনাতে জাফর আলম ওরফে খোরশেদকে আটক করে। পরে আসামিসহ ভিকটিমকে উদ্ধার ঈদগাঁও থানায় নিয়ে আসে। পরে ভিকটিমকে চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ-ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে ওই কিশোরীকে কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন এলাকার একটি বেসরকারি সংস্থার সেফহোমে রাখা হয়েছে।

৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কিশোরীর নানা বাদী হয়ে ৪ জনকে আসামি করে ঈদগাঁও থানায় একটি এজাহার দায়ের করেন এবং এজহারটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে পুলিশ মামলাটি নথিভূক্ত করেছে বলে নিশ্চিত করেন ওসি আবদুল হালিম। পরে ধৃতের স্বীকারোক্তিমতে অভিযান চালিয়ে মাইক্রোবাসটির চালক আহমদ উল্লাহকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। মামলাটি ওসি নিজেই তদন্ত করছেন বলে জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে ওসি তদন্তের স্বার্থে মহেশখালীর ধলঘাটায় ভিকটিমের এলাকায় গিয়েছেন এবং কিশোরীর আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছেন।

তিনি জেনেছেন মেয়েটির মা মারা গেছে বেশ কয়েক বছর আগে। তার বাবা আরেকটি বিয়ে করেছেন। কিশোরী দীর্ঘদিন ধরে বাবার পরিবার থেকে দূরে ছিলেন এবং নানার বাড়িসহ আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আছেন মা মারা যাওয়ার পর থেকে।

এক কথায় মা মারা যাওয়ার পর থেকে কিশোরিটি এক প্রকার ভাসমান মানুষের মত জীবন যাপন করছিল। আরও অধিকতর তদন্তের জন্য ওসি আবদুল হালিম ১ ফেব্রুয়ারি ( সোমবার) দুপুরে চট্টগ্রামের বহদ্দার হাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন বলে পার্বত্যনিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে এ আলোচিত ধর্ষণ ঘটনার প্রকৃত চিত্রের বিষয়ে পুর্নাঙ্গ তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা যাচ্ছে না বলে জানান। এদিকে এ কিশোরী কিভাবে কাকতালীয় কায়দায় মহেশখালী থেকে অপহরণ হয়ে, চট্টগ্রাম, আবার সেখান থেকে ঈদগাঁও আসল এ নিয়ে জনমনে কৌতুহলের শেষ নেই। সচেতন জনগণ এ ঘটনার প্রকৃত চিত্র জানতে উন্মুখ হয়ে আছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন