কক্সবাজারের হাটে হাটে হাসিল ‘সন্ত্রাস’

fec-image

পবিত্র ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কক্সবাজার সদরসহ ৭ উপজেলায় কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠতে শুরু করেছে। হাটগুলোতে ভারতীয় পশু ছাড়া মিয়ানমার ও দেশি গরু আসছে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম ঘটলেও গরু বেচা-কেনা তেমন হচ্ছেনা বলে অনেকের দাবি। এছাড়া গরুর দাম নিয়েও ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যেও বিশাল ফারাক।

অনেক ক্রেতারা জানান, গরুর দাম একটু বেশি হবে কারণ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সব ধরনের পশু চলে যাবে। তাই দামও হবে এটা স্বাভাবিক। জেলার মানুষের চাহিদার চেয়ে পশুর সিংহভাগ চলে যাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই আশংকায় সাধারণ মানুষ অনেকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদুল আজহা আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। আগেভাগে কক্সবাজার জেলার কোরবানির পশুর হাটগুলো জমে উঠছে। তবে সাধারণ ক্রেতার তুলনায় হাটে পাইকারি ক্রেতা বা ব্যাপারীদের তৎপরতা বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দামও বেশি। সেই সঙ্গে জেলার প্রায় সব হাটে অতিরিক্ত টোল (খাজনা) আদায়ের অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

কোনো কোনো হাটে খাজনা আদায়ের জন্য কর্মী বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তারাই সমস্ত বাজারের চতুর্দিকে ঘুরে বেড়ায়। কে গরু কিনছে কে বিক্রি করছে। ক্রেতা বিক্রেতা উভয়কে দিতে হয় টাকা।

গতকাল সদরের খরুলিয়া বাজারে দেখা গেছে, সরকারি নির্দেশনা থাকলেও হাটেই টাঙানো হয়নি টোল আদায়ের তালিকা। গরুর দাম বেশি হওয়ার ফলে বিক্রেতারা খুশি হলেও ক্রেতারা পছন্দমত গরু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাটগুলোতে নকল টাকার আতঙ্ক থাকায় প্রশাসন বসিয়েছে জাল টাকা শনাক্তকারী মেশিন। তবে আসল আতংক হলো হাসিল বা খাজনা।

অন্যান্য বাজারের তুলনায় অবৈধভাবে সবচেয়ে বেশী হাসিল আদায় করছে খরুলিয়া হাট বাজার ইজারাদার। তারা মানে না কোন আইন। শুনে না কারও অভিযোগ। এ বছর প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যে ইজারা নিয়েছেন। সেই টাকা তোলায় তাদের মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এভাবে হলে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট ও ক্রেতা সাধারণ এই আলোচিত খরুলিয়া বাজার থেকে মূখ ফিরিয়ে নিবে।

সুত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভা ও সদরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলায় কোরবানির পশুর বড় হাট বসে। চকরিয়া, ঈদগাঁও ও টেকনাফ উপজেলায় এ রকম বড় হাটের সংখ্যা প্রায় ৪৪টি। এর বাইরেও অনেক পশুর হাট রয়েছে। যা কোন প্রশাসনের কর্তারাও জানে না। টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের করিডোর, পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ, উখিয়া-মরিচ্যা, কক্সবাজার সদরের খরুলিয়া, ঈদগাঁও, পৌরসভার খুরুশকুল রোডের মাথা, চকরিয়ার ইলিশিয়ার হাট অন্যতম। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে প্রচুর পশু উঠছে। তবে সাধারণ ক্রেতারা কম দামে গরু কিনতে পারছেন না। ব্যাপারীরা এখানকার হাটগুলো থেকে কোরবানির পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। বিক্রেতাসহ হাট কর্তৃপক্ষ বলছে, গরুর বেচাকেনা আরো বাড়বে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের হিসাব অনুযায়ী, কক্সবাজার জেলায় গতবছরের ন্যায় এবারেও ৪৪টি হাট বাজার বসেছে। এতে সমস্ত হাট বাজারে পুলিশ ও ব্যাংকের নিরাপত্তা ও জালনোট সনাক্তকরণ মেশিন বসানো হয়েছে।

কক্সবাজার জেলার অন্যতম বড় কোরবানির পশুর হাটগুলোর অন্যতম খরুলিয়া বাজার। গতকাল হাটের দিন আরো দেখা গেছে, কোরবানির পশুর আমদানি অনেক। মাঝারি সাইজের গরুর চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি। রামুর চৌমুহনী থেকে হাটে একটি গরু আনা হয়েছে। গরুটির দাম হাঁকা হয়েছে ৩ লাখ টাকা। তবে সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সেটির দাম উঠেছে। একই হাটে বড় সাইজের একটি ছাগল বিক্রি হয়েছে ৪০ হাজার টাকায়।

কক্সবাজার শহরের ঘোনারপাড়া থেকে গরু কিনতে আসা সাধারণ ক্রেতারা বলেন, খরুলিয়া বাজারে দালালদের দৌরাত্ম্য গরুর দাম করতে গিয়ে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এনজিও ও সিন্ডিকেটরা বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যাপারীরা প্রচুর গরু কিনছেন। তাই বাজার একটু চড়া। সেই গরু-মহিষ আবার দু-একদিন রেখে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়ে যাবেন। এভাবে হলে জেলার স্থানীয় মানুষ কিভাবে কোরবানী দিবে। কিভাবে গরু-মহিষ কিনবে।

তবে গরু বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং বন্যা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গরু নিয়ে যাওয়ায় বর্তমান বাজারদর তাঁদের পোষাবে না। দাম নিয়ে তাঁরা খুশি নন।

সেখানে আবার খরুলিয়া বাজারসহ উপজেলার অন্যান্য হাট বাজারে জেলা প্রশাসনের নির্ধারণ করে দেওয়া টোলের কোনো তালিকা নেই। আমাদের প্রতিনিধিরা জানান, অনেকটা দায়সারা এবার গরুর বাজারের ইজারাদাররা। তাদের ইচ্ছে মাফিক টাকা আদায় করছে।

বিশেষ করে খরুলিয়া বাজারে যে কোন পশুর প্রতি বিক্রেতার কাছ থেকে ১৫০০ হাজার ও ক্রেতার কাছ থেকে ১০০০ টাকা আদায় করছে। অথচ এরকম টাকা নেওয়ার কোন নিয়মই নেই।

ক্রেতারা অভিযোগ করে এ প্রতিবেদককে বলেন, বৃহত্তর খরুলিয়া হাট বাজার এখন আগের মতো নেই। পৌরসভার খুরুশকুল রাস্তার মাথা, মিঠাছড়ি ও রামু এবং ঈদগাঁও বাজার হওয়ায় এখন কোরবানীর পশু সেখানে চলে যায়। সেই কারণে অধিক মূল্যে ইজারা নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়মবহির্র্ভূতভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

জেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, জেলার প্রতিটি পশুর হাটে গরু-মহিষ, ছাগল প্রতি ইজারাদারদের জন্য টোল (খাজনা) নির্ধারণ করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে প্রতিটি হাটে টোলের টাকা উল্লেখ করে তালিকা টাঙানোর জন্য সরকারি নির্দেশ থাকলেও কোনো হাটেই তা টাঙানো হয়নি। সেই সুযোগে প্রতিটি হাটেই ইচ্ছে মাফিক হাসিল আদায় করছে ইজারাদারদের আদায়কারীরা।

একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান, হাটে টোল আদায়ের জন্য নিজস্ব কর্মী বাহিনী নিয়োগ দিয়েছেন ইজারাদাররা। তারা জোর করে দুই থেকে তিন গুণ বেশি টোল আদায় করছে।

এরকম জেলার ৪৪টি বাজারের টোলঘরে (হাসিল) বা হাটের কোনো এক জায়গায় জেলা প্রশাসক নির্ধারিত পশু বিক্রির হাসিলের পরিমাণ উল্লেখ করে তালিকা টাঙানোর বিধান থাকলেও সেই তালিকা কোনো হাট-বাজারের কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলে ক্রেতারা জানেন না সরকার নির্ধারিত হাসিল কত। এ ছাড়া হাসিল নিয়ন্ত্রণে জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের তদারকি না থাকায় ইজারাদাররা তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী হাসিল আদায় করেন।

খরুলিয়া বাজারের ইজারাদার আবদুল হান্নান শালিক প্রথমে কথা বলতে না চাইলেও পরে নিয়ম মাফিক (হাসিল) আদায় করছে বলে ফোন কেটে দেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ঈদুল আজহা, কক্সবাজার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন