কক্সবাজারে অপহরণকারী মানিকের অত্যাচারে আতংকিত চিকিৎসকের পরিবার

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ডা. হাকীম মো আইয়ুব। তিনি চট্টগ্রামের ভূজপুর থানার পশ্চিম ভূজপুরের মৃত আহম্মদুল হকের ছেলে। তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে অবস্থান করছেন চট্টগ্রাম শহরে। কিন্তু তার এই সুখের সংসারে প্রতিনিয়ত অশান্তি এবং আতংক সৃষ্টি হয়েছে কক্সবাজার শহরের অপহরণকারী সিন্ডিকেটের কারনে। এ অপহরণকারী সিন্ডিকেটটি গত ৮ জুলাই তার তিন বছর বয়সী মেয়ে ইসমত জাহান ইতিমম কে অপহরণ করে নিয়ে যায়। আর ৪ দিন পরে মোঠা অংকের মুক্তিপন দাবি করে ছেড়ে দেয়।

এই অপরহণটি করেছে জাহিদুল ইসলাম মানিক নামে এক যুবক। কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম মানিক ওই অপহরণকারী সিন্তিকেটের প্রধান। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এ অপকর্ম চালিয়ে আসছে। মুক্তিপণ দিয়ে প্রানের সন্তানকে ফিরে পেলেও পুনরায় আতংক বিরাজ করছে চিকিৎসক হাকীম মো. আইয়ুবের। কারণ অপহরণকারী সিন্ডিকেট প্রধান মানিক পুনরায় টাকার জন্য প্রতিনিয়ত হুমকি-ধমকি দিচ্ছে তাকে। হুমকি দিয়ে বলছে, যদি দাবীকৃত টাকা না দেয় তাহলে তার সন্তানকে আবারও উঠিয়ে নিয়ে যাবে। এ অবস্থায় খুবই অসহায় বোধ করছেন চিকিৎসক। তাই তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা চাইছেন। যার ধারাবাহিকতায় তিনি মানিককে অভিযুক্ত করে গত ২০ জুলাই চট্টগ্রামের চকবাজার থানায় তিনি অভিযোগ দায়ের করেন (যার নং-৯৬২)।

অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, গত ৮ জুলাই ডাক্তার আইয়ুব স্ব-পরিবারে কক্সবাজারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান। ওই সময় দূরসম্পর্কের আত্মীয় মানিক তাদেরকে সমিতির পাড়ায় খাবারের দাওয়াত দেয়। তারা দাওয়াত খেতে গেলে এরই মধ্যে মানিক ইতিমমকে নিয়ে সরে পড়ে। তখন তারা স্থানীয় মসজিদে মাইকিং সহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করে। পরে কক্সবাজার সদর থানায় একটি ডায়েরি করেন।

এদিকে ওই রাতেই একটি মোবাইল থেকে চিকিৎসকের ঢাকাস্থ খালা শ্বশুড়ির মোবাইলে ফোন করে ইতিমমকে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানান অপহরনকরীরা। ওই অপহরণকারীরা চিকিৎসক এবং তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তারা মোটা অংকের মুক্তিপন দাবি করেন। আর প্রশাসনকে বিষয়টি জানালে মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। চিকিৎসক তার মেয়েকে অক্ষত পেতে প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়নি।

এদিকে অপরহণকারীরা প্রথমে তাদেরকে বান্দরবান যেতে বলেন মুক্তিপন নিয়ে। তাদের কথা অনুযায়ী চিকিৎসকসহ কয়েকজন বান্দরবান যান। পরে অপরহণকারীরা শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে যেতে বলেন। এরপর আবার সাতকানিয়া কেরানী হাট, ডুলাহাজারা ও বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ে ঘুরিয়ে ১০ জুলাই বিকেল ৪টায় নির্দিষ্ট একটি সময় দেয়। এরই মধ্যে তিনটা বিকাশ নম্বর দেয়া হয় টাকা পাঠানোর জন্য।

পরদিন সকালে আবারও ফোন করে মুক্তিপণ দাবি করে। সর্বশেষ ৪ দিন পরে ১১ জুলাই কক্সবাজারের বাজার ঘাটা এলাকা পেট্টোল পাম্পে টাকা দেয়ার কথা বলেন। তাদের কথা অনুযায়ী ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তিকে পাটান চিকিৎসক। অপহরণকারীরা তাকে অস্ত্র ঠেকিয়ে ওখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পরে বাজারঘাটা এলাকায় নিয়ে গিয়ে ইতিমমকে ইব্রাহিমের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু তার মেয়ে অসুস্থ্য এবং অস্বাভাবিক হওয়ায় মেয়ের চিকিৎসার জন্য তারা দ্রুত চট্টগ্রাম চলে যান।

শুধু তাই নয়। মানিক একজন পেশাদার মানবপাচারকারী ও অপরহণকারী। ইতিপূর্বে কক্সবাজার সদর থানায় তার বিরুদ্ধে মানবপাচার মামলা রয়েছে। তার মামলা নং ৬০ (২৮-০৭-১৫) এবং ঢাকা বিমান বন্দর থানায় মামলা নং ৩৭ (০৬)১৫ ও ২৫ (০৭)১৫ দুটি মামলাসহ তিনটি মামলায় দীর্ঘদিন জেল হাজতে ছিলেন। মুক্তিপন দিয়ে হলেও মেয়েকে ফিরে পেয়ে যেন সবকিছু ফিরে পেয়েছিলেন। কিন্তু তার বিপদ কাটেনি। মানিক প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দিচ্ছে পুনরায় টাকার জন্য।

এ অবস্থায় তিনি ও তার পরিবার আতংকের মধ্যে রয়েছে। তারা প্রশাসনের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে এবং সন্তানের জীবন রক্ষার্থে। যাতে করে পুনরায় সুখের জীবন ফিরে পায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন