কক্সবাজারে ছেলের নির্যাতনে ঘরছাড়া পিতার সংবাদ সম্মেলন

fec-image

কক্সবাজার শহরে ছেলের অত্যাচারে জন্মদাতা পিতা ঘরছাড়া। শহরের বদরমোকাম থানা রোডের বাসিন্দা আলহাজ¦ মৌলভী এসএম আতিকুর রহমান (৭৫) কুলাঙ্গার ছেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন অন্য এলাকায় ভাড়া বাসায়।

নির্যাতনের শিকার পিতা প্রতিকার প্রার্থনা করে ২ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল ৪টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। স্ত্রী ও অন্য সন্তানদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ২৬ বছর একটানা কক্সবাজার শহরের নতুন বাহারছড়া জামে মসজিদের খতিব ছিলাম। এলাকার অনেক প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবি আমার কাছে আরবী শিক্ষা নিয়েছে।

আমার বয়স ৭৫ বছর। বর্তমানে আমি কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের একজন উপদেষ্টা। সে সাথে বদর মোকাম জামে মসজিদ এবং বদর মোকাম সমাজ কমিটিরও উপদেষ্টা। আমি আমার পৈত্রিক সম্পত্তি এবং আমার যা অর্থনৈতিক অর্জন তার সবকিছুই পরিবারের কল্যাণে জন্য ব্যয় করেছি।

এই বয়সে এসে আমাকে আজ নিজ অবাধ্য সন্ত্রাসী পুত্রের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করতে হবে তা আমার জন্য বড়ই কষ্টের। তারপরও আমার সন্ত্রাসী পুত্র হেলাল উদ্দিনের (৩৮) নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে আজ আপনাদের কাছে দারস্থ হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে আলহাজ¦ এসএম আতিকুর রহমান জানান, ২০১২ সালে আমি যখন পবিত্র হজ পালন করবে সৌদি আবর গমন করি, তখন আমার শহরের বড় বাজার ও এন্ডারসন রোডের দুইটি মার্কেট এবং বদর মোকান এলাকার নিজের বাড়ি তত্বাবধানের জন্য হেলাল উদ্দিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করি। পরবর্তীতে আমি যখন দেশে ফিরে আসি তখন সে সু-কৌশলে মার্কেট ভাড়া দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে।

এই টাকা আত্মসাৎ করে সে ক্ষান্ত হয়নি। দিন দিন তার লোভের পরিমাণ এতই বেশী বেড়ে গেছে, আমার নিজ টাকায় গড়া শহরের বদর মোকাম এলাকায় একটি ৫ তলা ভবন অবৈধভাবে আমার কাছ থেকে লিখে নেয়ার পাঁয়তারা করছে। ভুয়া কাগজ পত্র বানিয়ে আমার অবাধ্য সন্তান হেলাল উদ্দিন তার নামে বৈদ্যুতিক মিটার এবং বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার নিজ নামে পরিবর্তন করেছে। আমার অন্যান্য সন্তান এবং স্ত্রীকে সে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।

বর্তমানে আমি শহরের টেকপাড়া এলাকায় ভাড়া করা বাসায় বসবাস করছি।
তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি বিভিন্নভাবে আমার সন্তানকে বুঝানোর চেষ্টা করলেও কথা না শুনে উল্টো আমাকে হত্যার হুমকি দেয়। তাই আমি ২৭/০২/২০১৯ তারিখে সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালত নং-০৪ এ হেলাল উদ্দিনকে আসামী করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করি। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে।

এর আগে একইভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে চাইলে আমি বাধা দিই। বাধা দেয়ার কারনে হেলাল উদ্দিন তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায়। সে সময় আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক জখম হয়।

এঘটনায় ২৯/০১/২০১৯ তারিখে হেলাল উদ্দিনকে আসামী করে আমি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করি। এ ঘটনায় ৩১ অক্টোবর অবাধ্য ছেলে হেলাল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করে। বর্তমানে কারাগারে থাকলেও বাহিরে লালিত সন্ত্রাসীরা বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি অব্যাহত রেখেছে।

গেল বছর হেলাল উদ্দিনের উপস্থিতিতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালায়। এবং আমার পরিবারের সকল সদস্যকে মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেয়। বর্তমানে সে আমার নিজ ঘরে তার স্ত্রী, শশুর, শ্যালিকা, শ্যালিকার স্বামীসহ শশুর বাড়ির লোকজনদেরকে নিয়ে বসবাস করছে।

বিভিন্ন সময়ে অকারনে হেলাল উদ্দিন আমার উপর হামলা চালায়, এই অবস্থা দেখে আমি ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর মডেল থানায় তার বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা দায়ের করি। উক্ত মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ ৩১ অক্টোবর হেলাল উদ্দিনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্বে আমি আমার পরিবারসহ নিজ বাড়িতে গেলে হেলাল উদ্দিনের সন্ত্রাসী বাহিনী এবং শশুর বাড়ির লোকজন আমাদের উপর হামলা চালায়। হামলায় আমি এবং আমার সন্তানরা গুরুতর আহত হয়।

আমাদের পরিবারের উপর হামলার ঘটনার বিষয়টি এতদিন আমরা কাউকে জানাতে দেয়নি। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে আপনাদেরকে পরিবারিক বিষয়টি জানানোর প্রয়োজন মনে করছি।

বর্তমানে আমার সন্ত্রাসী পুত্র কারাগারে রয়েছে। কারাগার থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে সে আমাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে। বর্তমানে আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। জেল থেকে জামিনে বের হতে পারলে সে আমাদের উপর আবার হামলা করতে পারে।

এমনকি তার স্ত্রী এবং শশুর বাড়ির লোকজন দিয়ে আমাদের পরিবারের নামে নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন মিথ্যা মামলা করার হুমকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ও বৃদ্ধের আত্মীয় স্বজনদের মাঝে বিরাজ করছে চরম ক্ষোভ।

অভিযুক্ত হেলাল উদ্দিনের বিরুদ্ধেও রয়েছে জমি দখলসহ বাবার নগদ টাকা আত্মসাতসহ অসংখ্য অভিযোগ। বৃদ্ধ বাবা বাধ্য হয়ে আদালতে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করায় সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে বৃদ্ধ এবং তার কাছের স্বজনদেরও পিটিয়ে আহত করেছে এই অবাধ্য ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্ত্রী শাহিদা বেগম, ছেলে মিজানুর রহমান, কফিল উদ্দিন, মেয়ে সায়মা সোলতানা শিমু, জসিম উদ্দিন, নাসরিন সোলতানা রুপি ও শরফ উদ্দিন।
তিনি প্রশাসনের কাছে পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে ৭৫ বছর বয়সে এসে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চিয়তার আকুতি চান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন