কক্সবাজারে ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থা

fec-image

গ্রামের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সেই দেড় যুগ আগে পর্যায়ক্রমে রাস্তাগুলোর নির্মাণ হয়েছিলো। এরপর থেকে কোনো ধরনের সংস্কার নেই। রাস্তাগুলোর বেশিরভাগ চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।

রাস্তায় কার্পেটিং উঠে এমন পর্যায়ে গেছে যে মনে হয় রাস্তাটি কাঁচা আবার অনেক রাস্তার মাঝে এমন গর্ত হয়েছে একটু বৃষ্টি হলে রাস্তা মধ্যে হাটু পানি। আর পুকুরের পাশ ঘেষে যাওয়া পাকা সড়কগুলো ভেঙ্গে চলে যাচ্ছে পুকুরের পেটে। এসব চিত্র কক্সবাজার জেলার গ্রামে গ্রামে মেঠোপথে দিয়ে বয়ে যাওয়া পাকা সড়কগুলোর।

দীর্ঘদিন এসব সড়ক সংস্কার না হওয়াই গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পিছিয়ে পড়ছেন মানুষ। এক সময় রাস্তাগুলোর কারণে এলাকার অনেক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু এখন এসব রাস্তার কারণেই এলাকার উন্নয়ন থেমে যাচ্ছে। মানুষ ঠিকভাবে তাদের গন্তব্যে যেতে পারছেন না। মাঠে উৎপাদিত পণ্য ঠিকভাবে বাজারে নিয়ে আসতেও পারছে না।

সম্প্রতি টেকনাফ, উখিয়া ও রামু উপজেলার কিছু এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে। টেকনাফের হ্নীলা পুরাতন বাজার রোড, ফুলের ডেইল দরগাহ রোড সড়কে কার্পেটিং এমন ভাবে উঠেছে যানবাহন তো দুরের কথা পায়ে হেটেও যাতায়াত করতে কষ্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

এছাড়াও এ রাস্তার মাঝে দরগা গ্রাম। গ্রামটিতে রাস্তার পাশঘেঁষে সড়কের এমন দশা এর আগে কখনো হয়নি। স্থানীয় সাবেক সাংসদের এলাকা হওয়ায়ও প্রতিহিংসামূলক আরেক সাংসদ উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। বর্তমানে সড়কে অপরিচিত কোন যানবাহন মাল বোঝায় নিয়ে গেলেই প্রতিদিনই ঘটে ছোট বড় দূর্ঘটনা।

কক্সবাজার সিটি কলেজের বাংলা প্রভাষক এহসান উদ্দিন তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, জনগণের প্রতি কমিটেড এবং দায়িত্বের প্রতি সৎ থাকলে এইকাজ বহু আগেই হওয়ার কথা। কতোজন এলো গেলো, সবাই কোনো না কোনো ছুতো দেখিয়ে নিজেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করেছেন। বিশ্বাস করি এইবার এই রাস্তাগুলো আলোর মূখ দেখতে পাবে। এইভাবে ছোটছোট কাজের মধ্যে দিয়ে পুরোদস্তুর একজন কর্মবীরে পরিণত হোন এই প্রত্যাশা রাখি। তিনি বলেছেন সদ্য নির্বাচিত হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলীকে উদ্দেশ্য করে।

এই পোস্টটি পেয়ে নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানও দ্রুত এই সড়কটির উন্নয়নে কাজ করবে বলেও জানান। বলতে গেলে পুরাতন বাজারের প্রধান সড়কটি কার্পেটিং উঠে শত শত খানেখন্দে ভরপুর। গাড়িসহ সকল যানবহন চলছে হেলেদুলে। এতে করে স্কুল কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে।

জেলার সবচেয়ে অবহেলিত রয়ে গেছে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ সংযোগ সড়ক। বলতে গেলে এখানকার মানুষ অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। স্থানীয় সংবাদকর্মী জসিম মাহমুদ বলেন-এভাবে আজ সড়কবিহীন ৭/৮ বছর। এখানকার মানুষের ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা কি আসলে এদেশের নাগরিক নই। অবহেলিত আর কতদিন থাকবো। এমন অবস্থা হ্নীলা-টেকনাফের সড়কের নয়, জেলার ৮ টি উপজেলার গ্রামে সড়ক গুলো কমবেশি একই অবস্থা রয়েছে। সংস্কারে অপেক্ষায় রয়েছে গ্রামের মানুষ।

পেকুয়া উপজেলার চৌকষ আইনজীবী মীর মোশাররফ হোছাইন টিটু লিখেছেন-পেকুয়া উপজেলা সদরের শেখের কিল্লা ঘোনা সড়ক, বলীর পাড়া সড়ক, মামা ভাগিনার দোকান হয়ে বটতলিয়া পাড়া সড়ক, গুলধির সড়ক উজানটিয়া ইউনিয়নের করিমদাদ মিয়ার ঘাট সড়ক, এএস মাদ্রাসা সড়ক, কইড়া বাজার সড়ক সংস্কার বিহীন, মধ্যম উজানটিয়া ফোরকানের দোকান থেকে সৈকত বাজার, আমিরুজ্জামানের বাড়ি থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, মগনামা উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে মহুরী পাড়া ও মগঘোনা সড়ক, মগনামা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইউনিয়ন পরিষদ সড়ক, রারবাকিয়া ব্রীজ সংলগ্ন প্রধান সড়ক, টইটং বনকানন সড়ক, শিলখালীর মাঝের ঘোনা সড়ক, রাজাখালীর আমিন বাজার-মাতবর পাড়া সড়ক বেশ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তারমধ্যে বেশ কয়েকটি সড়ক থেকে ইট খুলে ফেলা হয়েছে।

এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি সড়ক ও কালভার্টের জন্য যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে এলাকাবাসীর। এর মধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ও উজানটিয়া এলাকাবাসীর জন্য চলাচলকারী করিমদাদ মিয়ার ঘাট সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে এএস সিনিয়র মাদ্রাসা সড়ক। যে সড়ক দিয়ে শতশত শিক্ষার্থী ও হাজার হাজার জনগণের চলাচল। ওই সড়কে কালভার্ট করার জন্য কেটে নেওয়া হয়েছে সড়ক। বিকল্প রাস্তাটি পানিতে ডুবে আছে। মগনামার উচ্চ বিদ্যালয় হয়ে মগঘোনা সড়কটি দিয়ে যান চলাচল দুরে থাক মানুষ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় তিনি এলাকার লোকজনকে নিয়ে কালভার্টও নির্মাণ করেছেন।

তিনি জানান, এক সময় আশির্বাদ হলেও এখন রাস্তাগুলো এলাকাবাসীদের কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে। এভাবে গ্রামীন এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়ছেন পেকুয়ার মানুষ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ভারি বৃষ্টিপাত, পাহাড়ি ঢল ও উপকূলীয় এলাকা জোয়ার ভাটা হওয়ার কারণে বারবার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়ে কক্সবাজার জেলার নিমাঞ্চল ও সড়কগুলো। এমনকি জেলার প্রত্যান্ত গ্রামগঞ্জে শতকরা ৮৫ ভাগ ঘরবাড়ি পানি বন্দি হয়ে দূর্ভোগ আর দূর্গতির চরম পর্যায়ে পৌছে। এ কারণে কক্সবাজারের গ্রামীন জনপথগুলো অচল হয়ে পড়ছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেশিরভাগ রাস্তা বিলীন হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুক পরিস্থিতি চলে আসে। যার ফলে চরম দূর্ভোগে পড়ে গ্রামে বসবাসরত লোকজন।

জানা যায়, প্রতি বছর স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে গ্রামীন সড়কগুলো (কাঁচা-পাকা) নির্মাণ ও সংস্কার করে বিপুল অর্থ ব্যয় করলেও তা কোন কাজেই আসছেনা। ভারি বৃষ্টিপাত হলেই ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে এ সব সড়ক। গেলমাসে টানা ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে।

মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ জানিয়েছেন, মাতারবাড়ির সংযোগ সড়কটি কয়েক দফা মেরামত করলেও জোয়ার-ভাটার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে বারবার। আসলে মাতারবাড়ির মানুষের দূর্ভোগের অন্ত নেই। মাতারবাড়ির সাথে নৌ-পথে ছাড়া অন্য কোন পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় সবাইকে। রোগী যাতায়াত নিয়েও বেকায়দায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষ। এ ছাড়া মাতারবাড়ির প্রতিটি রাস্তা এখন অচল হয়ে পড়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়-সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে এ সব রাস্ত প্রতি বছর মেরামত করার জন্য বাজেটও আসে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের গাফেলতির কারণে এরকম দন্যদশা চলছে। অনর্থক প্রতিবছর গ্রামীন সড়ক খাতে বিপুল টাকা অপচয় হচ্ছে। যার ফলে কোন ভাবেই স্বাভাবিক হচ্ছে না গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থার।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কক্সবাজারে, গ্রামীন সড়ক
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন