আপডেট

কন্যার কর্ণচ্ছেদ অনুষ্ঠানে ১ কেজি স্বর্ণ উপহার পাওয়া রোহিঙ্গা ডাকাত গ্রেফতার

fec-image

কন্যার কর্ণচ্ছেদ অনুষ্ঠানে ১ কেজি স্বর্ণ উপহার পাওয়া রোহিঙ্গা ডাকাত ও যুবলীগনেতা হত্যার প্রধান আসামি নুর মোহাম্মদ টেকনাফে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে।

শনিবার (৩১ আগস্ট) ভোর রাতে হ্নীলা ইউনিয়নের গহীন পাহাড়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকেসহ আমান উল্লাহ নামের এক ডাকাতকেও আটক করা হয়েছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি।

টেকনাফ পুলিশ সকালে জানিয়েছে, নুর মোহাম্মদকে ধরার জন্য পুলিশ অভিযানে রয়েছে। আটকের তথ্য টেকনাফ থানা দায়িত্বরত অফিসারের হাতে নেই বলেও জানান তিনি।

স্থানীয়ভাবে জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি ও স্থানীয় সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সভাপতি ওমর ফারুক হত্যা মামলার প্রধান আসামি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী দলের নেতা ইয়াবা গডফাদার নুর মোহাম্মদ ও তার সহযোগি আমান উল্লাহকে আটক করেছে পুলিশ।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ তার ফেসবুকের ওয়ালেও এ তথ্যটি আপলোড করেন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান হ্নীলা উলুচামরি গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে নুর মোহাম্মদ ও আমান উল্লাহকে আটক করে।

এ দিকে নুর মোহাম্মদের কিশোরী কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া যায় এক কেজি স্বর্ণালংকার ও নগদ ৪৫ লাখ টাকা।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ গতকাল শুক্রবার রাতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি জানিয়ে নিশ্চিত করেছেন। ওসি বলেন, ‘কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানে এ রকম উপহারসামগ্রী পাওয়ার বিষয়টি এলাকাবাসীও জানে।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দিন নুর মোহাম্মদ তার কন্যার কান ফোঁড়ানোর অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। গরু ছাগল জবাই করে আয়োজন করা হয় ভোজ অনুষ্ঠানের। আমন্ত্রিতদের সবাই রোহিঙ্গা ডাকাত, সন্ত্রাসী ও ইয়াবা কারবারি। তিনি আরও জানান, ১৯৯২ সালে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ হ্নীলা ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের জাদিমুরা এলাকায় প্রথমে বাসা ভাড়া নিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে সেখানে জমি কিনে ঘর-বাড়ির মালিক হয়ে যান। এপারে আশ্রয় নেওয়ার পর ওপারের রোহিঙ্গাদের নিয়ে সীমান্তে গড়ে তোলে বিশাল ডাকাত বাহিনী।

তিনি আরও জানান, এই ডাকাত বাহিনী অপহরণ, ডাকাতি, ছিনতাই, মানবপাচারসহ সীমান্তে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে পড়ে। আর দুই বছর আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা ঢলের পর নুর মোহাম্মদ ডাকাতের প্রতাপ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এলাকার পাঁচ-ছয়টি রোহিঙ্গা শিবির, টেকনাফের বিস্তৃত পাহাড়, সীমান্তের নাফ নদ ও নাফ নদের ওপারে রাখাইনের অভ্যন্তরে থাকা ইয়াবা কারখানা ও গবাদি পশুর বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় তারা। এ সব অপকর্ম করে বাহিনীর সদস্যরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যায়।

ওসি প্রদীপ কুমার দাশ আরও জানান, নুর মোহাম্মদ ডাকাত সর্দার হওয়ার কারণে ভোজের দাওয়াতে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী, ডাকাত ও ইয়াবা কারবারিরা অংশ নেয়। তার ভোজ অনুষ্ঠান থেকে গিয়েই ওইদিন রাতে তুচ্ছ ঘটনার জেরে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে খুন করে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদের চারটি বউ রয়েছে। একেকজনের একেক বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে একটি পাকা ভবন, একটি দোতলা টাওয়ার, একটি টিনের ঘর, অন্যটি বাগানবাড়ি। ডাকাত নুর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা, ডাকাতি, অপহরণসহ মামলা রয়েছে। তিনি একজন মোস্ট ওয়ানটেড আসামি।

অবশেষে সকালে পুলিশের জালে আটকা পড়ে। তবে আটকের বিষয়ে জানতে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মুঠোফোনে কল দেয়া হয়। রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ, রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ডাকাত
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন