কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়ায় ডুবে গেছে ঝুলন্ত সেতু, বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন

fec-image

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে রাঙামাটির সিম্বল খ্যাত ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে গেছে। ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় আগত পর্যটকরা বিমুখ হয়ে ঝুলন্ত সেতু না দেখে ফিরে যাচ্ছেন।

বর্তমানে সেতুটি হ্রদের ছয় ইঞ্চি পানির নিচে ডুবে আছে। পর্যটন করপোরেশন দুর্ঘটনা এড়াতে দুপুর থেকে সেতুর উপর পর্যটকদের চলাচলে নিষধাজ্ঞা দিয়েছে। যে কারণে পর্যটকরা নিরানন্দ হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।

এদিকে কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ ধরে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাঁচটি ইউনিট সচল রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ২০০-২১০ ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জানানো হয়, হ্রদের বর্তমানে ১০৫.৫০ ফুট মিনস সি লেভেল পানি রয়েছে। কাপ্তাই হ্রদের পানি ধারণ ক্ষমতা ১০৯ফুট মিনস সি লেভেল।

কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক এটিএম আব্দুজ্জাহের বলেন, আপাতত পানি ছাড়ার কোন সম্ভবনা নেই। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। তাই হ্রদে আমাদেও আরও কিছুদিন পানি ধরে রাখতে হবে।

রাঙামাটির পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িতরা বলছেন, ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ায় দেশী-বিদেশী পর্যটকরা এখানে আসবে না। যে কারণে তারা কয়েক লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হবে।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ঝুলন্ত সেতু দেখেতে এসে দেখতে পারলাম না। সেতুতে পানি উঠে গেছে। মনটা খারাপ করে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলা থেকে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. শহিদুল বলেন, আজ রাঙামাটি এসে দেখি ঝুলন্ত সেতু ডুবে গেছে। আবার ফিরে যাচ্ছি ।

বোট চালক এবং ট্যুরিস্ট গাইড আলমগীর বলেন, হ্রদে যখন পানি ছিলো না তখন পানির অভাবে বোট ভালভাবে চালাতে পারতাম না। যে কারণে পর্যটক আসতো কম। এখন হ্রদে পানি বেড়ে যাওয়ায় ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ায় আবারো পর্যটক আগমন ঘটবে না। যে কারণে আমাদের আবারো কষ্টে পড়তে হয়েছে।

রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট মালিক সমিতির সহ-সভাপতি রমজান আলী বলেন, আমাদের ঘাটে ১২০টি বোট রয়েছে। ট্যুরিস্ট আসলে আমরা বোট মালিকরা খুশি হয়, আয় বাড়ে। কিন্তু ঝুলন্ত সেতু ডুবে যাওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। ট্যুরিস্ট আসা কমে যাবে। পর্যটন করপোরেশনকে অনুরোধ করবো সেতুটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও উঁচু স্থানে বসানো হয়।

রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার অলোক বিকাশ চাকমা বলেন, সেতুটি ডুবে যাওয়ায় আমরা সেতুর উপর পর্যটক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। আপাতত যতদিন সেতু থেকে পানি সরবে না ততদিন সেতুর উপর পর্যটকদের চলাচল বন্ধ থাকবে।

রাঙামাটিতে ১৯৮৩ সালে ঝুলন্ত সেতুটি নির্মাণ করে পর্যটন কর্পোরেশন। হ্রদে অতিরিক্ত পলি জমায় এবং হ্রদে ড্রেজিং না করায় বেশ কয়েক বছর ধরে কাপ্তাই হ্রদে পানি বাড়লে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যায়। জেলার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সেতুটি আরও উঁচুতে নির্মাণ করার দাবি জানান পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

নিউজটি ভিডিওতে দেখুন:

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কাপ্তাই হ্রদ, ঝুলন্ত সেতু, পানি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন