কেপিএম সিবিএ’র সংবাদ সম্মেলন : এমডির স্বেচ্ছাচারিতায় পেপার মিল ধ্বংসের পথে

fec-image

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার চন্দ্রঘোনা কর্ণফুলী পেপার মিল লিমিটেড (কেপিএম) এর শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের (সিবিএ) এর উদ্যোগে এক সংবাদ সম্মেলন শনিবার (৩ অক্টোবর) কাপ্তাই প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেপিএম সিবিএ সভাপতি মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। এ সময় সিবিএ সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বাচ্চুসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কেপিএম সিবিএ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের জানান, গত ২৫ সেপ্টেম্বর বেসরকারি টেলিভিশন যমুনা টিভিতে কেপিএমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডঃ এম এম এ কাদের সিবিএ নেতৃবৃন্দের নিয়ে মিথ্যাচার বক্তব্য প্রদান করেন যা বাস্তব সম্মত নয়। তার এ বক্তব্যে কেপিএমের সকল স্থায়ী এবং অস্থায়ী শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তার এই বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য এবং মনগড়া।

সংবাদ সম্মেলনে তারা জানান, দুর্নীতিবাজ এই এমডি কেপিএমের যোগদানের পর হতে কেপিএমকে একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। প্রায় অর্ধশতাধিক কাল নিরবিচ্ছিন্নভাবে জাতীয় চাহিদার সিংহভাগ কাগজের যোগান দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এশিয়ার বৃহত্তম কাগজ কলের মর্যাদা অর্জন করে, কিন্তু বর্তমানে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সার্বিক ব্যবস্থাপনা এবং চরম স্বেচ্ছাচারিতার কারণে ভয়াবহ সঙ্কটের কবলে পড়ে এই প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই কারখানার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত লক্ষাধিক পাহাড়ি-বাঙালি মানুষের জীবন-জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।

তারা আরো জানান, দীর্ঘ ২৫ বছরের বেশি কারখানায় ওভারহোলিং না করার ফলে ক্রমাগতভাবে নিজস্ব পাল্প উৎপাদন খরচ অতিরিক্ত বৃদ্ধি ও উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে এ প্রতিষ্ঠানের লোকসান বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে কারখানার লাভ-লোকসানের ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে বিসিআইসি তথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত ২০১৬- ১৭ সালে জনবল ক্রাসের পাশাপাশি বয়লার, ব্রিচিং টাওয়ার, সিসি প্লান্ট, ইভাপোরেটর , লাইন ক্লিন ওয়াশিং ইত্যাদি প্লান্ট/শাখা আধুনিকায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। কিন্তু বিসিআইসি তথা শিল্প মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় যখন কেপিএম লাভে যাওয়ার পথে সেসময় কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা বিশেষ করে এমডি ডঃ এম এম এ কাদের এর স্বেচ্ছাচারিতা কারখানা বিরোধী সিদ্ধান্তের ফলে উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় লোকসান কমানো সম্ভব হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে তারা আরো জানান, কেপিএমের কাগজের মান আগের তুলনায় অনেক খারাপ হওয়ায় শিক্ষাবোর্ডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চাহিদা থাকা সত্ত্বেও এই কাগজ কেউ কিনছে না। ফলে উৎপাদিত ৩০০০ টনেরও বেশি কাগজ জমা পড়ে আছে। ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর চাহিদামত সরবরাহ করতে না পারা এবং সরবরাহকৃত কাগজের মানের সমস্যা হওয়ায় কেপিএমের সুনাম নষ্ট হওয়ার ফলে এখন কাগজ বাজার ব্যক্তিমালিকানাধীন কাগজগুলোর হাতে চলে যায়।

তারা বলেন, নিজস্ব পাল্প উৎপাদনের জন্য ২০১৬-১৭ সালে ক্রয়কৃত চিপস দিয়ে পাল্প উৎপাদন না করার কারণে কয়েক হাজার মেট্রিকটন চিপস ক্রমান্বয়ে পঁচে যাচ্ছে। অস্থায়ী শ্রমিকদের মাসে ২৬ থেকে ৩০দিন কাজ করিয়ে ১৫থেকে ২০ দিনের হাজিরার মজুরি প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিক কর্মচারীদের বেতন হতে কর্তনকৃত প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা সংশ্লিষ্ট হিসেবে জমা করা হচ্ছে না এবং পিএফ ট্রাস্টি বোর্ডের কোন সভা তিনি করেননি এবং সেখানে কোনো হিসাবও দেওয়া হচ্ছে না। এই এমডি বিধিমতো পিএফ ঋণ বিতরণ না করে নিজের ক্ষমতা বলে অনৈতিকভাবে স্লিপ দিয়ে পিএফ ঋণ দিচ্ছেন। শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তাদের কোটি টাকা বেতন ভাতা প্রদান করে কারখানার উৎপাদন কাজ ব্যতিত অফিস সময়ে তিনি সকলকে বৃক্ষরোপণ কাজে নিয়োজিত রেখেছেন।

তারা সকলেই এই এমডির দ্রুত অপসারণ করে এই মিলকে আবারো লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন