ক্ষুদ্রজাতির ১১ খুন, ১৫ ধর্ষণ, ২০০ পরিবার দেশান্তরী: সিরডাপ মিলনায়তনে কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন

03_Human+Right+Reports_250214_0002

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:
পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গত বছর সারা দেশে ক্ষুদ্রজাতির ১১ জন খুন, ৩৪৬টি পরিবারে লুটপাট, ২৬টি পরিবার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ এবং ১৫ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্রজাতির অন্তত দুই শটি পরিবার হয়েছে ভারতে দেশান্তরী।
অন্যদিকে, সদিচ্ছার অভাবে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন হয়নি ক্ষুদ্রজাতির অধিকার-সংক্রান্ত সরকারি দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার। ২০১৩ সালের বাংলাদেশের ক্ষুদ্রজাতির মানবাধিকার প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে এসব তথ্য। আজ মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হয় মানবাধিকার সংস্থা কাপেং ফাউন্ডেশনের এ প্রতিবেদন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও অক্সফামের সহায়তায় প্রকাশিত হয়েছে প্রতিবেদনটি।

এতে বলা হয়, গত বছর খুন হওয়া ক্ষুদ্রজাতির ১১ জনের মধ্যে তিনজন পার্বত্য চট্টগ্রামের এবং আটজন সমতলের। বিভিন্ন হয়রানিমূলক মামলায় সে বছর গ্রেপ্তার করা হয় পাহাড়ের ৩১ জনসহ ক্ষুদ্রজাতির মোট ৪২ জন। অন্তত আটটি সহিংস হামলায় সমতলের ৭১ এবং পাহাড়ের ২৭৫ পরিবারসহ মোট ৩৪৬টি পরিবারের ঘরবাড়ি লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়।
অভিবাসী বাঙালিদের হামলায় পাহাড়ের চার শ পরিবারসহ মোট প্রায় দুই হাজার পরিবার আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় ভারত সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’। ২০১৩ সালে ক্ষুদ্রজাতি অধ্যুষিত অঞ্চলে পাহাড়ে প্রায় তিন হাজার ৭৯২ একর এবং সমতলের ১০৩ বিঘা জমি হয়েছে বেদখল। একই সময় ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয় ২৬টি ক্ষুদ্রজাতির পরিবার। উত্তরবঙ্গের ক্ষুদ্রজাতির অন্তত ২০০টি পরিবার ভারতে চলে যেতে বাধ্য হয়।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত বছর পাহাড়ের ৫৪ জন এবং সমতলের ১৩ জনসহ ক্ষুদ্রজাতির মোট ৬৭ জন নারী ও শিশু হয়েছে সহিংসতার শিকার। এর মধ্যে ১২ জন পাহাড়িসহ মোট ১৫ জনকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) এর ৩৪তম ব্যাচে কোটা ব্যবস্থার জটিলতার কারণে একই সময় চাকরিতে বঞ্চনার শিকার হয়েছে ২৮০ জন ক্ষুদ্রজাতির প্রার্থী। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সালে বাস্তবায়ন হয়নি সরকারি দল আওয়ামী লীগের ক্ষুদ্রজাতির অধিকার-সংক্রান্ত নির্বাচনী ইশতেহার। সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও নীতি-নির্ধারকদের উগ্র জাতীয়তাবাদী মানসিকতার কারণে প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি পার্বত্য শান্তি চুক্তির।
কাপেং ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা মঙ্গল কুমার চাকমার সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডালেম চন্দ্র বর্মণ, অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিব দ্রং, ইইউ প্রতিনিধি ফাবরিজিও সেনেসি, অক্সফামের এমবি আখতার ও সৈকত বিশ্বাস। মানবাধিকার প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিপাশা চাকমা ও বাবলু চাকমা।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলো সেটা সবার হাতে যাক। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহ সবার কাছে যাক। এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া গেলো, সেগুলো ভালোভাবে যাচাই করে পদক্ষেপ নিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মেজবাহ কামাল বলেন, সরকার যদি এই প্রতিবেদনগুলো বিবেচনা করে তাহলে অনেকটাই সুরাহা হবে। ‘আদিবাসীদের’ পক্ষে যেমন কাজ করতে হবে, তেমনি সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, গত বছর ‘আদিবাসীদের’ অবস্থা ভালো ছিল না। দিনদিন ‘আদিবাসীদের’ ওপর নির্যাতন বেড়েই চলছে। রাষ্ট্র সে অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

পাহাড়ি নেতা মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, পাহাড় ও সমতলের ক্ষুদ্রজাতির মানুষেরা আশঙ্কাজনক হারে শিকার হচ্ছেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের। এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পায় না এবং তাদের বিচারের মুখোমুখিও করা হয় না। ফলে অপরাধীরা নতুন করে অপরাধ সৃষ্টিতে উৎসাহিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন