নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে মধ্যরাতে খাগড়াছড়িতে আরো সহস্রাধিক শ্রমিকের প্রবেশ, আতঙ্কে জেলাবাসী

fec-image

করোনা সংক্রমণ রোধে খাগড়াছড়িতে প্রবেশ ও বাহির পথে জেলা প্রশাসন নিষেধাজ্ঞা জারি করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করলেও সে নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে প্রতিদিন হাজার হাজার শ্রমিক জেলায় প্রবেশ করছে।

বৃহস্পতিবার(১৬ এপ্রিল) মধ্যরাতে জেলার মানিকছড়ি ও রামগড় চেক পোস্ট দিয়ে সহস্রাধিক শ্রমিক প্রবেশ করেছে। এরা সকলে আশুলিয়া, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের গার্মেন্টস শ্রমিক বলে নিশ্চিত করেছে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ।

মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমীর হোসেন জানান, শুক্রবার(১৭ এপ্রিল) সকাল থেকে মানিকছড়ি চেক পোস্টে আরো অর্ধ সহস্রাধিক শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। বিষয়টি মানবিক হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ ও আতংকে জেলাবাসী।

মানিকছড়ি ও রামগড় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, শ্রমিকদের নাম লিপিবদ্ধ করে সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকার শর্তে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গত ১২ এপ্রিল জেলা কমিটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির জরুরী সভায় খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত এক পত্রে জেলায় প্রবেশ ও বাহির পথে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু বাস্তবে তার বায়ন দেখা যাচ্ছে না।

এ গণবিজ্ঞপ্তির পরও খাগড়াছড়ি জেলার প্রবেশমুখ মানিকছড়ি ও রামগড় চেক পোস্ট দিয়ে শতশত মানুষ খাগড়াছড়ি জেলায় ঢুকতে দেখা গেছে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিনভর নানা নাটকীয়তার পর মানিকছড়ি ও রামগড় চেক পোস্ট দিয়ে এক হাজার ২৮৮ জন প্রবেশ করে। তার মধ্যে পার্শ্ববর্তি জেলা রাঙামাটির ৩৪৬ জন।

নিষেধাজ্ঞা ও সামাজিক দুরত্ব উপেক্ষা করে প্রতিদিন শতশত মানুষের প্রবেশে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বাড়ছে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে। খাগড়াছড়ি জেলায় এখনও পর্যন্ত কোন করোনা পজেটিভ রোগী সনাক্ত না হলেও বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকের অবাধ প্রবেশ ঝুঁকি বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। তারা বিষয়টি মানবিক হলেও এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশ মুখ জিরোমাইলে গত তিন সপ্তাহ ধরে নিজ উদ্যোগে জীবাণুনাশক কার্যক্রমে কাজ করছে একঝাঁক তরুণ। তাদের মধ্যে একজন অপু দত্ত বলেন, খাগড়াছড়ি জেলাকে করোনাভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা করতে দিন রাত কাজ করে যাচ্ছি। যারা বাহির থেকে আসছেন তাদের ও পরিবহনগুলো জীবাণুণাশক ম্প্রে করা হচ্ছে। তবে যে হারে প্রতিনিয়িত লোকজনের স্রোত রুখতে প্রশাসন ব্যর্থ হয় তাহলে খাগড়াছড়ির অবস্থা কিছুদিনের মধ্যে ভয়ানক হতে পারে।

সর্বশেষ(১৫ এপ্রিল)খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, আজকের পর থেকে খাগড়াছড়ি জেলায় কোন শর্তে কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এতোদিন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জিম্মায় প্রবেশকারীদের দেয়া হলেও তাদের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তাই জেলা কমিটির জরুরী সিদ্ধান্তে সকল প্রবেশ মুখ কাউকে ঢুকতে না দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের যে প্রান্ত থেকে আসুক না কেন তাকে সেখানে ফিরে যেতে হবে।

এ জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। তবে পরের দিন( ১৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে জেলার দুই চেক পোস্ট দিয়ে এক হাজার একশ ৬৫ প্রবেশ করে।

খাগড়াছড়ি সিভিল সার্জন ডাক্তার নুপুর কান্তি দাশ জানান, শ্রমিকদের এভাবে প্রবেশ জেলার জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় জ্বর ও কাশি নিয়ে আরো দুইজনসহ পাঁচ গার্মেন্টস কর্মীকে খাগড়াছড়ি ও মানিকছড়ি হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া করোনা মহামারির ক্লাস্টার এরিয়া নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ২০৭ জন শ্রমিককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে ১৫১ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ পর্যন্ত ৩৯ জনের নমুন পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যে ২২টি নেগেটিভ এসেছে। বাকী নমুনা রিপোর্ট এখনো আসেনি।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস, খাগড়াছড়ি, হোম কোয়ারেন্টাইন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন