খাগড়াছড়ির তিন ‘পৌরসভা’ নির্বাচনেই অংশ নেবে বিএনপি

11664046_844198435674445_1789048297_o

মুজিবুর রহমান ভুইয়া :
ওয়ান-ইলেভেন‘র মতো ঝড়সহ নানা প্রতিকূলতায় বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিএনপির অন্যতম ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত খাগড়াছড়িতে আবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে মহান সংসদের বাইরে থাকা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। বিএনপি‘র ক্ষমতার বদৌলতে ব্যবসা-ঠিকাদারী-জায়গা-চাকরিসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে যাওয়া নেতাদের অধিকাংশই লাপাত্তা। পদ-পদবীতে ছিলেন, এমন অনেকেই এখন বিএনপির মূল স্রোতের বিপরীতে। নানা প্রতিকূলতার সাথে লড়তে গিয়ে তৃণমূলের অনেকে হয়েছেন দলছুট অথবা নৌকার মাঝি।

টানা আট বছরের ঝড়ঝঞ্ছায় খাগড়াছড়ি বিএনপি‘র নেতৃত্বও অনেকটা পর্যদস্ত হলেও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জেলার দুইটি উপজেলা পরিষদেরর চেয়ারম্যান ও চারের অধিক উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থানের কথা জানান দিতে সক্ষম হয় দলটি।

গেল পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলকে মূল্যায়ন করেই আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে জেলার তিনটি পৌরসভাতেই পূর্ণ-প্যানেলে লড়াই করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। ইতিমধ্যে জেলার খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড়ে প্রার্থী দেয়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে জেলার শীর্ষ নেতারা।

প্রার্থী নির্বাচনের লক্ষ্যে রমজান মাসে বেশ কয়েকটি ইফতার মাহফিলে দলের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ ভূইয়া‘র উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। সরকারী দল এবং প্রশাসনের চাপ থাকলে নেতাকর্মীদের জেলার বাইরে কোথাও নিয়ে গিয়ে নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণ করা হবে বলেও নিশ্চিত করেছেন দলের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র।

গেল ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত তিনটি পৌরসভার নির্বাচনে মাটিরাঙ্গায় মেয়র পদে বিপুল ভোটে জয়ী হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আবু ইউসুফ চৌধুরী। এখানে সর্বাধিক সংখ্যক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসে বিএনপি সমর্থিতরা।

অন্যদিকে দাঙ্গা-হাঙ্গামাপূর্ন রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে স্বল্প ভোটে পরাজিত হয় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী। আর ভোটের পাল্লা ভারি হলেও রাজনৈতিক কৌশলের কারণেই সে নির্বাচনে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় বিএনপির কোন প্রার্থী ছিলনা। তবে সর্বাধিক সংখ্যক ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচিত হয়ে আসে বিএনপি সমর্থিতরা।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে পৌর বিএনপির সভাপতি ও টানা দুইবারের কাউন্সিলর মো: আব্দুর রব রাজা, টানা তিনবারের কাউন্সিলর এ.টি.এম. রাশেদ উদ্দিন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতা এ্যাড. আব্দুল মালেক মিন্টু এবং খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা বিএনপি‘র সভাপতি অনিমেষ দেওয়ান নন্দিতের নাম আলোচিত হচ্ছে মেয়র পদে। এর বাইরেও বিএনপি ঘরানার ‘মারমা সংগঠন ঐক্য পরিষদ’র এক প্রভাবশালী নেতাকে বিএনপি সমর্থন দিতে পারে বলে জেলাশহরে জোর গুঞ্জন রয়েছে।

জেলায় বিএনপি‘র ঘাটি বলে বিবেচিত মাটিরাঙ্গা পৌরসভা নির্বাচনে বর্তমান মেয়র ও খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু ইউসুফ চৌধুরীকেই দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীরা দেখতে চান। তবে নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত মাটিরাঙ্গা পৌর বিএনপি‘র সাধারণ সম্পাদক মো: বাদশা মিয়া দলের শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলের সমর্থন পেতে কাজ করছেন। পাশাপাশি সরকারী দলের নীতিনির্ধারকদের অনুকম্পা পেতেও নানা চেষ্টা-তদবীর করছেন বিএনপির এ নেতা।

এদিকে দল চাইলে মেয়র পদে লড়বেন খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মো: নুরুল আলম রানা।
মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিধন্য রামগড় পৌরসভায় আশি‘র দশক থেকেই ‘ভূইয়া’ পরিবারের দাপট ছিল চোখে পড়ার মতো। নানা কারণে ‘ভূইয়া’ পরিবারকেই নিজেদের অভিভাবক মনে করেন রামগড়ের বাসিন্দারা। আর সেই কারণে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে এই পরিবারেরই কাউকে দেখতে চায়, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

আগামী পৌরসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক কৌশল কি হবে সে প্রশ্নের জবাব না দিয়ে খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও মাটিরাঙ্গা পৌরসভার মেয়র আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, দলের যেসব নেতৃবৃন্দ মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নিজেদের যোগ্য মনে করেন তারা দলের সমর্থন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন।

খাগড়াছড়িতে অতীতে কখনো বিএনপি‘র নেতা-কর্মী কিংবা সমর্থকের সঙ্কটে ছিলোনা উল্লেখ করে আবু ইউসুফ চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক সুবিধার সন্ধানে অনেকে স্বেচ্ছায় পালালেও তৃণমূলে এর কোন প্রভাব পড়েনি। তৃণমূলের মতামতের উপর ভিত্তি করেই খাগড়াছড়ি, মাটিরাঙ্গা ও রামগড় পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনীত করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment
আরও পড়ুন