খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পাল

চকরিয়া প্রতিনিধি:

শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর পরই কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে হানা দিচ্ছে ক্ষুধার্ত বন্যহাতির পাল। প্রতিনিয়ত কোন না কোন স্থানে খাবারের সন্ধানে ছুটছে। অনেক স্থানে হাতির আক্রোশে পড়ে মানুষও মারা যাচ্ছে। এতে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে হাতি আতঙ্ক। ইতিমধ্যে অনেক স্থানে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে সহায়-সম্পদ এবং প্রাণহানি রোধ করতে রাত জেগে পাহারাও বসিয়ে গ্রামবাসীরা। এর পরও লোকালয়ে হামলে পড়ছে বন্যহাতি।

তবে অভিজ্ঞ মহলের তথ্যানুযায়ী, দুই উপজেলার লোকালয় ঘেঁষা পাহাড়ি এলাকায়ও মানুষের বসতি গড়ে উঠেছে। বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাওয়ায় বন্যহাতি তার আবাসস্থল হারিয়ে ফেলেছে। তাই ক্ষুধার্ত বন্যহাতির দল প্রতিনিয়ত লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। এতে দিন দিন বন্যহাতির আক্রমণে মানুষের প্রাণহানির ঘটনাও বাড়ছে।অতিসম্প্রতি গহীণ অরণ্য থেকে চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে খাবারের সন্ধানে হানা দেয় বন্যহাতির একটি পাল। এ সময় পালটি ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত গুঁড়িয়ে দিয়ে ফের বনে ফিরে যায়। ওই সময় লোকালয়ে বন্যহাতির আক্রমণের ভয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের মানুষের মাঝে। আতঙ্কিত এসব মানুষও ছুটাছুটি করতে থাকে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার জানান, বরইতলী ইউনিয়নের পূর্বাংশের লোকালয়গুলো পাহাড় ঘেঁষা। তাই প্রতিনিয়ত সেখানকার লোকালয়ে খাবারের সন্ধানে চলে আসছে বন্যহাতি। দিনের বেলায় কম দেখা গেলেও রাতের বেলায় বন্যহাতির পাল হানা দেওয়ায় মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় মানুষ আগুন জ্বেলে ও রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে সহায়-সম্পদ রক্ষার্থে।

সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম বলেন, প্রতিবছর শীত মৌসুমে বন্যহাতি খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে এসে হানা দেয়। এবারের শীত মৌসুম শুরুর পর থেকেও বন্যহাতির দল হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। তবে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে যাতে জান-মাল রক্ষা করা যায় সেজন্য পাড়ায় পাড়ায় পাহারা বসানো হয়েছে রাত জেগে। এতে এলাকার মানুষ পালাক্রমে রাত জেগে পাহারা দিচ্ছে। এর পরও বন্যহাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে খাবারের সন্ধানে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পেকুয়ার শীলখালী ইউনিয়নের হাজি বাপের ছনখোলাস্থ ধানক্ষেতে ১৫ডিসেম্বর ভোরে গহীণ অরণ্য থেকে ১৩-১৪টি বন্যহাতির একটি পাল খাবারের সন্ধানে হানা দেয়। এ সময় হাতির পালটি খামার বাড়িটি গুঁড়িয়ে দেয় এবং সেখানে পাহারায় থাকা ছৈয়দ আহমদ (৫৫) ও তার মেয়ের জামাই আলমগীরকে (২৬) কাছে পেয়ে পায়ের তলায় পিষ্ট করে মারে। এর পর সম্পূর্ণ ধান খেয়ে ফের গহীণ অরণ্যের দিকে চলে যায় হাতির পাল।

চেয়ারম্যান আরও জানান, লোকালয়ে হাতির পাল হানা দিয়ে দুইজনকে পায়ের তলায় পিষ্ট করে মেরে ফেলার খবর চারিদিকে ছড়ালে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এতে বন্যহাতির আক্রমণ থেকে নিজেদের রক্ষার জন্য পাহারার ব্যবস্থা করেছেন।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবদিন বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলাম। এ সময় লাশ উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। প্রাথমিকভাবে নিহতদের দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি এবং কিছু শীতবস্ত্র বিতরণ করেছি। পরবর্তীতে নিহতদের পরিবারকে সরকার ঘোষিত যথাযথ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এবিএম জসীম উদ্দিন বলেন, ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জের ৫টি বিটের সংরক্ষিত বনাঞ্চলের অনেক বনভূমি উজাড় হয়ে যাওয়ায় প্রতিনিয়ত বন্যহাতি লোকালয়ে হানা দিচ্ছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়লেও বন্যহাতি যাতে জান-মাল ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য বনবিভাগের কর্মীরা তৎপর রয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম জানান, এবারের শীত মৌসুম শুরু হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত বন্যহাতি চকরিয়ায় তেমন ক্ষতি করে নি। খাবারের সন্ধানে এসে বন্যহাতি লোকালয়ে ঢুকে গেলেও সহায়-সম্পদের যাতে ক্ষতি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন