চকরিয়ায় কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে কৃষকের বোরোধান রোপন!

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার ফরিদুল আলমের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের দিয়ে স্থানীয় বিভিন্ন কৃষকের জমিতে বোরোধান রোপন করিয়ে মুজুরির টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মগছড়া জুম এলাকায় ঘটেছে ধান রোপনের এ ঘটনা।

মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে কৃষকের ধান রোপনের বিষয়টি সত্যতা পাওয়া যায়। সেখানে স্থানীয় ভোলা মেম্বার নামের একজনের জমিতে ধান রোপন করছিলেন ৯ জন শ্রমিক। তাঁরা সবাই ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মসৃজন প্রকল্পে তালিকাভুক্ত শ্রমিক। একই বিলে একটু পশ্চিমে অপর কৃষকের জমিতে ধান রোপনে ব্যস্ত ছিলেন কর্মসৃজন প্রকল্পের আরও তিনজন শ্রমিক।

সাংবাদিকেরা ভোলা মেম্বারের জমিতে ধান রোপনে ব্যস্ত শ্রমিকদের ছবি তুলতে চাইলে ওইসময় সবাই মুখ লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে সবাই নিশ্চুপ থাকে। তবে অনেক পীড়াপীড়িতে দুইজন তাদের পরিচয় দেন। তাদের একজন ছৈয়দ আলম, অন্যজন নুরুল আমিন। তাদের বাড়ি ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মাইজপাড়া এলাকা বলে জানায়।

জানা গেছে, মঙ্গলবার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের পাশে মগছড়াজুম এলাকার বিলে ভোলা মেম্বারের জমিতে ধান রোপনে কাজ করা সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের কয়েকজন শ্রমিকের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ছিলেন শ্রমিক ছৈয়দ আলম, নুরুল আমিন, সজল নাথ, সুধাংশু নাথ, অমুল্য নাথ, বানুর বাপ ও আবদুস শুক্কুর। সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের মজুরির টাকা শ্রমিকদের মোবাইল বিকাশের মাধ্যমে দেওয়া হলেও প্রকল্পের কাজ ফাঁকি দিয়ে শ্রমিকদের দিয়ে কৃষকের ধান রোপন কাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত শ্রমিক মুজুরির টাকা যাচ্ছে ইউপি মেম্বার ফরিদুল আলমের পকেটে।

অভিযোগ উঠেছে, ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে গত শনিবার রোববার সোমবার ও মঙ্গলবার চারদিন ধরে ইউপি মেম্বার সরকারি প্রকল্পের শ্রমিকদের ব্যবহার করে প্রাপ্ত মুজুরির টাকা অবৈধ উপায়ে হাতিয়ে নিলেও সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজের তদারকিতে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান এনজিও সংস্থা সুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ কমীরা রয়েছেন নীরব ভুমিকায়।

জানা গেছে, সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের আওতায় চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে ১২৫ দিনের কর্মসুচিতে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনে রাস্তাঘাট সংস্থার ও উন্নয়ন খাতে দৈনিক সাতঘন্টা করে কাজ করছেন হতদরিদ্র নারী-পুরুষ শ্রমিকরা। বিপরীতে প্রতিজন শ্রমিক মুজুরি হিসেবে দৈনিক ৪০০ টাকা করে মোবাইল বিকাশে বেতন পেয়ে থাকেন।

চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অধিদপ্তর ( পিআইও বিভাগ) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ তদারকিতে নিয়োজিত রয়েছেন এনজিও সংস্থা সুশীলন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এনজিও সংস্থা সুশীলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মাঠ কর্মী মাসুদুর রহমান, কমল চন্দ্র রায়, জুনায়েদ আহমদ, চিত্ররঞ্জন সরদার ও এবাদুল ইসলাম চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নে তদারকি এবং অনিয়ম অসঙ্গতি গুলো দেখভাল করছেন। তাদের মধ্যে মাসুদুর রহমান আছেন ডুলাহাজারা ইউনিয়নের দায়িত্বে।

জানতে চাইলে এনজিও সুশীরনের মাঠ কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান বলেন, পুরো চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়নে আমাদেরকে ১১৯টি প্রকল্পের কাজ তদারক করতে হয়। সেখানে মাত্র পাঁচজন মাঠ কর্মী নিয়ে পুরো উপজেলার কাজ তদারক করা অনেক সময় জটিল হয়ে পড়ে। তারপরও আমরা চেষ্টা করি, অন্তত সপ্তাহে একদিন হলেও একটি ইউনিয়নের কাজ ভিজিট করতে।

ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই ওয়ার্ডে ৬৮ জন নারী পুরুষ শ্রমিক কাজ করছেন। ইউপি মেম্বার শ্রমিকদের দিয়ে কৃষকের ধান রোপনের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে শ্রমিক হাজিরা জমা দিলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে, ওই শ্রমিকরা কদিন অনুপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, সরকারি কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজের তদারক প্রতিষ্ঠান এনজিও সংস্থা সুশীলনের চকরিয়া উপজেলার মাঠ কর্মীদের দায়িত্ব অবহেলা ও ক্ষেত্র বিশেষে তাদের যোগসাজশে এই ধরনের অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছেন কতিপয় জনপ্রতিনিধিরা। ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, তাদের এলাকায় কর্মসৃজন প্রকল্পে নিয়োজিত ৬৮ জন শ্রমিকদের মধ্যে ইউপি মেম্বার ফরিদুল আলমের অনেক আত্মীয় স্বজন রয়েছেন। তাঁরা কাজ না করেও মোবাইল বিকাশে বেতন পেয়ে যাচ্ছেন। তদন্ত করলে এসব অনিয়ম ধরা পড়বে বলে দাবি করেন এলাকাবাসি।

অভিযুক্ত ডুলাহাজারা ইউপি মেম্বার ফরিদুল আলম বলেন, কর্মসৃজনের ম্রমিকরা রাস্তায় কাজ করছেন। ধান রোপনে নিয়োজিতরা আমার শ্রমিক না। আপনার ওয়ার্ডে কতজন শ্রমিক কর্মসৃজনে কাজ করছে জানতে চাইলে ইউপি মেম্বার বলেন, ৩৮ জন শ্রমিক আছে। শ্রমিকদের সংখ্যা নিয়েও তিনি মিথা তথ্য দিয়েছেন।

চকরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবু হাসনাত সরকার বলেন, কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজে কোন ধরনের অনিয়ম অসঙ্গতি যাতে না হয় সেইজন্য আগে থেকে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি। তারপরও কেউ অনিয়মে জড়ালে সেই দায়ভার তাঁকে নিতে হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো.ফখরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকরা শুধুমাত্র ইউনিয়ন পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজগুলো করবে। তবে প্রকল্প থেকে বেতন নিয়ে বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই। তারপরও একজন ইউপি মেম্বারের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। সেখানে প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন