চকরিয়ায় বাড়ছে চুরি ও ছিনতাইের ঘটনা: আতঙ্কে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ

fec-image

কক্সবাজারের চকরিয়ায় হঠাৎ করে বেড়ে গেছে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা না থাকার কারণে এসব চুরি-ছিনতাই বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। নিত্যদিন ঘটে চলেছে কোথাও না কোথাও চুরির ঘটনা। চুরির উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণে এতে চরম আতংঙ্ক বিরাজ করছে ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে।

জানা গেছে, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ডুলাহাজারা থেকে চকরিয়া পৌরশহরের কাঁচাবাজার সড়কে মুদির দোকানে বাজার করতে আসেন মো. আব্রাহান নামের এক যুবক। ওইদিন সন্ধ্যার দিকে স্থানীয় বেশ কয়েকজন ছিনতাইকারী তাকে ধরে ওয়াপদা সড়কে নিয়ে যায়। পরে ছিনতাইকারীরা ওই যুবককে মারধর করে তার পেকেটে থাকা নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

গত ১৫ মার্চ কাঁচা বাজার রোডে স্থানীয় এক ইজেন্টদার তার মোটরসাইকেল রেখে অর্ডার কাটার জন্য বের হই। পরে ওই এজেন্টদার এসে দেখে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি নেই। একইভাবে ছিনতাইকারী দলের বেশ কয়েকজন সদস্য ২৫ মার্চ সন্ধ্যার দিকে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠস্থ সবুজবাগ এলাকা থেকে একটি টমটম ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এখনও পর্যন্ত ওই টমটম গাড়ি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

এছাড়াও গত ১ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠের ভেতর থেকে বাদশা মাইক সার্ভিসের দুটি সাউন্ড বক্স চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে-নাতে আটক করা হয় এক চুরকে। গত ২৮ মার্চ রাতে চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনা এলাকায় এক প্রবাসীর বাড়িতে দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। এসময় চোরের দল ঘরের দরজা ও আলমারীর তালা ভেঙ্গে প্রায় ২৫ ভরি স্বর্ণালংকার, নগদ দেড় লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় ফোরকান আরা বাদি হয়ে তিনজনকে আসামী করে চকরিয়া থানায় মামলাও দায়ের করেন। এমনকি পৌরশহরের বেশ কয়েকটি স্বর্ণের দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এসব ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা ও পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ধর্ষ চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা। পৌরশহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে নতুন কেউ আসলে তাদের লক্ষ্য করে ছিনতাইকারীর দল। বিশেষ করে পৌরশহরের বাঁশঘাটা সড়ক, কাঁচাবাজার সড়ক, সবুজবাগ এলাকা, হালকাকারাস্থ বটতলী, সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সড়ক, ফুলতলা স্টেশন, চিরিংগা স্টেশন পাড়া, সরকারি হাসপাতাল সড়ক, থানা রাস্তার মাথা, বাস টার্মিনাল এলাকাসহ আরও বেশ কয়েকটি এলাকায় চুরি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই সাধারণ মানুষদের কাছ মোবাইল-টাকাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস চুরি-ছিনতাই করে নিয়ে যায়। প্রতিনিয়ত ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ চুরি-ছিনতাইয়ের স্বীকার হলেও ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে অভিযোগও করেনা। যার ফলে পুলিশও সঠিক তথ্য না পাওয়ায় ধরাছোয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে এসব চুরি-ছিনতাইকারী চক্রের দল।

জানা গেছে, যেসব চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে এসব চুরি-ছিনতাই কাজে জড়িত বেশির ভাগই ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার আশ্রয়-পশ্রয়ে রয়েছে চোর চক্রের সদস্যরা। পুলিশ তাদের আটক করলেই ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা তাদের ছাড়িয়ে নেয়ার জন্য তদবির করে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

চকরিয়া ওয়েষ্টার্ণ প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ বলেন, পৌরশহরে প্রতিনিয়ত চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় কিছু উঠতি যুবক এসব চুরি-ছিনতাই কাজের সাথে জড়িত। এসব ঘটনার পেছনে কারা জড়িত বা এই ধরণের কাজে যারা ইন্ধন যোগাচ্ছে তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা দরকার। তিনি বলেন, এখন পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। এই মাসকে ঘিরে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বিশেষ করে ঈদকে টার্গেট করে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা গুলো বেশি হয়ে থাকে। তাই দ্রুত আইন-শৃংখলা বাহিনীকে এসব কাজে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনার ব্যবসায়ী মহলের পক্ষথেকে জোর দাবি জানান তিনি।

চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গা চিহিৃত করেছি। ওইসব জায়গায় প্রতিদিন পুলিশ টহল দিচ্ছে। গতকালও বেশ কিছু এলাকায় রেড দেয়া হয়েছে। রমজান ঘিরে উপজেলার গ্রামীণ পর্যায় থেকে শুরু করে পৌরশহরে পুলিশ টহল আরও জোরদার করা হবে। কোন অবস্থাতেই চোর-ছিনতাইকারী ও ইভটিজারদের ছাড় দেয়া হবেনা।

তিনি আরও বলেন, কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও কেউ থানায় অভিযোগ দিতে আসেনা। যার প্রেক্ষিতে আমরাও ব্যবস্থা নিতে পারিনা। কেউ যদি এই ধরনের ঘটনার স্বীকার হওয়ার পর তাৎক্ষনিক ভাবে থানায় অভিযোগ দেন তাহলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন