চরম নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ পাশের বাসিন্দারা: সন্ধ্যা নামলেই আতঙ্ক
চরম নেটওয়ার্ক ভোগান্তিতে পড়েছে টেকনাফ-উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশ পাশের বাসিন্দারা। এমনকি জরুরী মুহূর্তেও নেটওয়ার্কের কারণে কথা বলা যাচ্ছেনা। বিশেষ করে সন্ধ্যা নেমে আসলেই এক প্রকার আতঙ্কে কাটাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। নেটওয়ার্ক বন্ধ নয়, রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা সিম বন্ধ করে দেওয়ার দাবি সচেতনমহলের।
সুত্রে জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফে থ্রিজি ও ফোরজি সেবা বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত উচ্চ গতির মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া এই দুই উপজেলায়। সোমবার রাত ১০টার বিটিআরসি সকল মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে এই নির্দেশনা পাঠায়। আগের নির্দেশনা অনুসারে তখন এমনিতেই ওই এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি মোবাইল ডাটা বন্ধ ছিল। গত ২ সেপ্টেম্বরে অপারেটরদের সঙ্গে এক বৈঠকের পর বিটিআরসি বিকাল ৫টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত টেকনাফ ও উখিয়ায় থ্রিজি ও ফোরজি বন্ধ রেখেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে সেই নির্দেশনা এখন ২৪ ঘণ্টার জন্যে কার্যকর করা হলো।
বিষয়টি সম্পর্কে একটি মোবাইল ফোন অপারেটরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, নির্দেশনাটি যখন আসে তখন এমনিতেই তারা ওই এলাকায় দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রেখেছিলেন। সকালে আবার থ্রিজি-ফোরজি চালু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি আর হয়নি, যেহেতু এর মধ্যে নতুন নির্দেশনা এসে গেছে। তাতে করে এখন ওই এলাকায় মোবাইল ফোনে কথা বলা গেলেও মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার কার্যত বন্ধ হয়ে গেল।
রোহিঙ্গাদের জন্য মোবাইল ফোনে কথা বলা ও থ্রিজি-ফোরজি বন্ধ রাখায় স্থানীয়দের চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। সকাল থেকে অনেকেই ক্ষোভের কথা বলেন সাংবাদিকদের। স্থানীয় লোকজন জানান- সুনির্দিষ্ট রোহিঙ্গা এলাকায় নেট ও থ্রিজি-ফোরজি সেবা করা যায়। কিন্তু যেখানে রোহিঙ্গা বসতি নেই সেখানে কেন বন্ধ করবে।
স্থানীয় এক সচেতন যুবক ছৈয়দুল আমিন জানান, দিন-রাত রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের ভিতর মোবাইলে কথা বলছে। অহেতুক আমরা স্থানীয়রা হয়রানি ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে নেট ব্যবহার ও প্রয়োজন মুহুর্তে কথা বলতে পারছিনা আমরা। তাই রোহিঙ্গাদের মোবাইল জব্দ অভিযান চালানো হোক আর নেটওয়ার্ক ফিরিয়ে দিয়ে স্থানীয়দের ভোগান্তি থেকে পরিত্রান দেয়া হোক।
মোঃ সালাম জানান, রাতে কোন বিপদ এলে মুঠোফোনে কল দিয়ে কাউকে ডাকার মতো পরিবেশ বা নেটওয়ার্ক নেই। আমরা আতংকে রাত কাটায়। ডাকাত কিংবা চোরের ভয়ে। তাছাড়া বিপদ আসলেও সহজে কাউকে খবর দেয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র-৩ নারী কাউন্সিলর কোহিনুর আক্তার তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন-মানবতার মহান পুরস্কার ২ জি নেটওয়ার্ক! এটা কি চেয়েছিলাম আমরা। এখন আমরাই রোহিঙ্গা হয়ে গেছি।
এব্যাপারে হ্নীলা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলী বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সর্বশেষ মোবাইলে কথা বলাও মুশকিল হয়ে পড়ল। এর বিকল্প কি তা বিবেচনা দরকার। দ্রুত এ সমস্যা সমাধান জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও উগ্র-বৌদ্ধরা মুসলমানদের উপর নতুন করে গণহত্যা-ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালাতে থাকে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। এর আগে বিভিন্ন সময়ে আরও প্রায় ৫ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে আছে। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩১টি শিবিরে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। তবে জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭।