জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করার আহবান জেএসএস’র
স্টাফ রিপোর্টার:
পার্বত্য চট্টগ্রামে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) কেন্দ্রীয় নেতারা। নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘যে কোনো পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জুম্ম জনগণের সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। জুম্ম জনগণের এত আপত্তি ও দাবি-দাওয়ার পরও সরকার রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করেছে। সরকারের এসব গণবিরোধী কার্যক্রম রুখে দিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
তারা বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি কেবল একটা সাধারণ সমঝোতা। কিন্তু জুম্ম জাতির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটাই মৌলিক বিষয়। সেটা কারও ওপর নির্ভর করে থাকলে হবে না। জুম্ম জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় যে কোনো সংগ্রামে সামিল হতে হবে।’
শনিবার রাঙামাটিতে আয়োজিত পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) পঞ্চম জেলা সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে পাহাড়ি জুম্ম জনগণের প্রতি এ আহবান জানানো হয়েছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলণের মধ্য দিয়ে দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের সূচনা করা হয়। আনুষ্ঠানিভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সম্মেলনের উদ্বোধক জেএসএসের কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিকবিষয়ক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান এবং দলীয় পতাকা উত্তোলণ করেন সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গুণেন্দু বিকাশ চাকমা। জাতীয় ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন গিরিসুর শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা।
এ সময় পার্টির প্রধান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমাসহ সম্মেলনে উপস্থিত পর্যবেক্ষক, প্রতিনিধি ও দলীয় নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। সম্মেলনে সন্তু লারমা যোগ দেন আমন্ত্রিত প্রধান পর্যবেক্ষক হিসেবে।
আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলণ শেষে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সংগঠনের জেলা সভাপতি গুণেন্দু বিকাশ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় কমিটির রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক সত্যবীর দেওয়ান।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য ও সাবেক শান্তিবাহিনীর নারী গেরিলাপ্রধান মাধবী লতা চাকমা, এমএন লারমা মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের আহবায়ক বিজয় কেতন চাকমা ও রাঙামাটি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুণ কান্তি চাকমা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেএসএসের জেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক কিশোর কুমার চাকমা। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শরৎ জ্যোতি চাকমা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে সত্যবীর দেওয়ান বলেন, ‘অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের বীর জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজন দৃঢ় মনোবল। তা না হলে পার্বত্যাঞ্চলে জুম্ম জাতি হিসেবে টিকে থাকা সম্ভব হবে না। সেজন্য জুম্ম জনগণ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে চলমান আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে হবে। কঠিন সংগ্রামের মাধ্যমে আমাদের অধিকার ছিনিয়ে আনতে হবে। আন্দোলন আগামীতে আরও ভয়াবহ, জটিল ও কঠিনতর হবে। এতে পিছপা হলে চলবে না।’
সংগঠনের জেলা কমিটির সভাপতি ও পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য গুণেন্দু বিকাশ চাকমা বলেন, ‘জনসংহতি সমিতির নেতৃত্বে জুম্ম জনগণ দীর্ঘ দুই দশকের অধিক সংগ্রামে ১৯৯৭ সালের ২ডিসেম্বর সরকারকে পার্বত্য চুক্তিতে বাধ্য করেছে। তীব্র আন্দোলনে চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্য করতে হবে সরকারকে। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরের পর দীর্ঘ সতের বছর পার করেছে- কিন্তু সরকার বাস্তবায়নের তো দূরের কথা একের পর এক চুক্তি ভঙ্গ করে চলেছে।’
তিনি অভিযোগ করে আরো বলেন, ‘পার্বত্য চুক্তি ও জেলা পরিষদ আইন লঙ্ঘন করে ক্ষমতার জোরে আইন সংশোধন করে ৫ সদস্য থেকে ১৫ সদস্য সমন্বয়ে তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে পরিষদগুলোকে দলীয়করণ করেছে সরকার। এতে করে পার্বত্য জেলা পরিষদ লুটেপুটে খাবে সরকারের দলীয় লোকেরা।’ সত্যবীর দেওয়ান সংগঠনকে আরও দৃঢ় করে জুম্ম জনগণকে সংগ্রাম জোরদারের আহবান জানান।