“জমির মালিকেরা অতি লোভের বশবর্তী হয়ে ৩ ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন পূর্বক বহুতল ভবন নির্মাণ করায় আগামী প্রজন্মে খাদ্য উৎপাদনে মারাত্বক প্রভাব পড়তে পারে ”
জেলা প্রসাশকের নির্দেশ উপেক্ষিত:

উখিয়ায় ফসলি জমি ভরাট চলছেই

fec-image

উখিয়ার মরিচ্যা লালব্রীজ থেকে পালংখালী রাস্তার দু-পাশ এলাকা জুড়ে ভাড়া বাসা তৈরির হিড়িক পড়েছে। জমির মালিকেরা অতি লোভের বশবর্তী হয়ে ৩ ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন পূর্বক বহুতল ভবন নির্মাণ করায় আগামী প্রজন্মে খাদ্য উৎপাদনে মারাত্বক প্রভাব পড়তে পারে এমনটাই মনে করছেন কৃর্ষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার অভিজ্ঞ লোকজন।

তারা বলছেন, যেভাবে মানুষ বাড়ছে সেভাবে জমি সম্প্রসারন হচ্ছে না। উপরোন্ত ফসলি জমি বিলুপ্ত করা হচ্ছে। পার্শবর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচূত্য রোহিঙ্গারা উখিয়ায় আশ্রয় নেয়ার পর থেকে ভাড়া বাসার কদর বেড়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, ফসলি জমির উপর যদি একান্ত স্থাপনা নির্মাণ করতে হয় তাহলে কালেক্টরের অনুমতি অত্যাবশ্যকীয়। এ প্রসঙ্গে আলাপ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কৃষক জানালেন, তার নিজস্ব পৈত্রিক সম্পত্তির উপর স্থাপনা তৈরি করবে, সেখানে আবার অনুমতি কিসের। এভাবে প্রতিনিয়ত কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন পূর্বক অসংখ্য বহুতল ভবন নির্মাণ করায় উখিয়ার সুনিদিষ্ট ফসলি জমি আশঙ্কাজনকভাবে বিলুপ্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সচেতন মহল। তারা মনে করছেন, ফসলি জমি ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামীন পরিবেশের উপর মারাত্বক বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।

ফসলি জমির উপর ভাড়া বাসা তৈরি করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সৈয়দ নূর নামে একজন কৃষক জানালেন তার বসত ভিটা সংলগ্ন ৪০ শতক জমির উপর একটি ৪ ফ্লাটের দ্বিতল ভবন তৈরি করে মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়া আদায় করছেন। অথচ একই জমিতে ধান চাষ করলে সর্বসাকুল্য ১২ হাজার টাকার ধান পাওয়া যাবে, তাও আবার ৩/৪ মাস লাগবে। সরজমিন বেশ কয়েকটি নির্মাণাধীন ভবন এলাকা ঘুরে দেখা যায় পাহাড় কাটা মাটি দিয়ে ফসলি জমির ভরাট করে শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে। জানতে চাওয়া হলে ঐ জমির মালিক জানালেন, পাহাড় কাটা মাটি ক্রয় করে জমি ভরাট করা হচ্ছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সালা উদ্দিন মেম্বার জানালেন, উখিয়ায় যতগুলি ফসলি জমি ভরাট করা হয়েছে সবগলো মাটি পাহাড় কেঁটে সংগ্রহ করা হয়েছে। তা না হলে ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার কোন সুযোগ ছিল না। এ জন্য বন বিভাগকে দোষারারোপ করলেন ঐ ইউপি সদস্য।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হলে যারা ফসলি জমিতে ভবন নির্মাণ করেছে তাদের পস্তাতে হবে। তিনি বলেন গত ২০ মাসে উখিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রায় শতাধিক একরের মত তিন ফসলি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভাড়া বাসা তৈরি করা হয়েছে।

সম্প্রতি উখিয়া হাইস্কুল চত্তরে অনুষ্ঠিত মাদক বিরোধী সমাবেশে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন দুঃখ করে বলেন, তিনি দেখেছেন রাস্তা দু পাশে নির্বিচারে ফসলি জমি ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। তারা সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করছে। তাই এসব ভাড়া বাসা তৈরি কারকদের তালিকা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইউএনও কে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ইয়াবার টাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে বলেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উখিয়ায়, জেলা প্রসাশকের, ফসলি জমি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন