টিকাতেই আটকা প্রবাসীরা!

fec-image

সৌদি প্রবাসী রশিদ আহমদ (পাসপোর্ট নং-ইজি-০৬…২৩)। গত ২৩ মার্চ দেশে আসেন। ফিরতি টিকিট ১১ জুলাই। ভিসার মেয়াদ আছে মাত্র ১ মাস। এখনো সুরক্ষা টিকা দিতে পারেননি। নিবন্ধনও হয়নি। অনিশ্চিত বিদেশযাত্রা। এনিয়ে তার চোখেমুখে তীব্র উৎকণ্ঠা।

রশিদ আহমদ সৌদি আরবের মক্কা সারা আল মনছুর কাপড়ের দোকানদার। সে চকরিয়া পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের করাইয়াঘোনার মৃত হাসান আলির ছেলে।

রবিবার (৪ জুলাই) দুপুরে কক্সবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসে দীর্ঘ লাইনে দেখা রশিদ আহমদের। সংবাদকর্মী পরিচয় পেয়ে এগিয়ে এলেন। কথা বললেন। বর্ণনা দিলেন দুঃখ।

তিনি বলেন, সৌদি আরবে আমার ছোট্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে। করোনার কারণে কোন ব্যবসা হয়নি। দেশ থেকে উল্টো প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা নিয়ে আকামার মেয়াদ বাড়াতে হয়েছে। প্রায় ৮০ হাজার টাকায় টিকিট নিয়ে গত ২৩ মার্চ দেশে এসেছি। এখন যাবার পালা। ফিরতি টিকিট ১১ জুলাই। সরকারি নির্দেশনা মতে তার আগে করোনার ভেকসিন দিতে হবে। সেজন্য নিবন্ধন করতে এসেছি। কিন্তু নিবন্ধন করতে পারিনি। টিকা অনিশ্চিত।

রশিদ আহমদ বলেন, গত মাসে আমার ফিরতি টিকিট ছিল। সময় বাড়িয়ে ১১ জুলাই আনা হয়েছে। এরমধ্যে সৌদিয়া যেতে না পারলে সব শেষ।

শুধু রশিদ আহমদ নয়। এরকম অসংখ্য রেমিটেন্সযোদ্ধার সঙ্গে কথা হয়, যারা করোনার টিকা না পাওয়ায় বিদেশ ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভোগছেন।

কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও মাইজপাড়ার মাস্টার ইসলাম আহমেদের ছেলে বেদার মিয়া। পাসপোর্ট নং-বিজি ০৫….১০। চার মাস আসে দুবাই থেকে দেশে আসেন। আগামী ১৩ জুলাই টিকিট কনফার্ম করা আছে। তার আগেই ফিরতে হবে গন্তব্যে।

ভারুয়াখালী ৪নং ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার বদিউর রহমানের ছেলে মুহাম্মদ আবু শামা। পাসপোর্ট নাম্বার বিজি-০৪…৩৩। তিন মাসের ছুটিতে গত ২৩ রমজান সৌদি আরব থেকে এসেছেন। ফিরতি টিকিট ১৩ জুলাই।

সৌদি প্রবাসী ফরিদ আহমদ। পাসপোর্ট নাম্বার-ইজি ০১২…৯। দেশে এসেছেন ৫ মাস হয়ে গেছে। ১৯ জুলাই ছুটি শেষ। তাই ১১ জুলাই বিমানের টিকিট করেছেন। ভিসার মেয়াদ বাকি ২ মাস। রেমিটেন্সযোদ্ধা ফরিদ আহমদ পেকুয়ার বারবাকিয়া কুতুবপাড়ার আলিমিয়ার ছেলে।

ঈদগাঁও চান্দেরঘোনার আবদুস সোবহানের ছেলে সৌদি প্রবাসী খোরশেদ আলম। পাসপোর্ট নাম্বার- ইএফ ০৩…৮০। তার ফিরতি টিকিট ২২ জুলাই কনফার্ম করা আছে।

রবিবার (৪ জুলাই) দুপুরে প্রতিবেদকের সঙ্গে এমন অনেকের কথা হয়; যারা ভিটেমাটি, সহায় সম্বল বিক্রি করে প্রবাস জীবনে পাড়ি দিয়েছিলেন। স্বপ্ন বুনেছিলেন সুন্দর সংসার গড়ার। কিন্তু করোনার টিকা না পেলে তাদের সব মাটি হয়ে যাবে। পথে বসতে হবে অনেককে।

বিশেষ ব্যবস্থাপনায় হলেও করোনার টিকা দিতে চায় বিদেশগামীরা। এ জন্য প্রবাসী মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মেহেদি হাসানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, টিকার বিষয়টি একান্ত সরকারী প্রক্রিয়া। এখানে আমাদের বলার কিছুই নাই। সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের মন্ত্রণালয়ের ডিজিসহ শীর্ষ কর্তাদের অনুরোধ প্রবাসীদের টিকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রক্রিয়া অনুযায়ী আপাতত: নিবন্ধন করতে হবে। পরে নির্ধারিত সময়ে টিকা পাবে। তার বাইরে বলতে পারছি না।

মো. মেহেদি হাসান বলেন, একটা বিষয় শুরু করলে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয়। সেটার জন্য আমরা ফিডব্যাক দিচ্ছি। তবু সীমাবদ্ধতার কারণে সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন