দেশের বর্তমান সরকার ও শাসন ব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক : সন্তু লারমা

Headman Confarance Picture-31-01-14-01

স্টাফ রিপোর্টার :

পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলন সংগ্রামে শরীক হতে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রথাগত নেতৃত্ব হেডম্যান কার্বারীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান সন্তু লারমা। পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত উপজাতীয় জনগোষ্ঠির প্রথাগত নেতৃত্বদানকারী হেডম্যানদের সংগঠন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই আহবান জানান। সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের অন্যতম প্রধান ভূমি সমস্যাসহ প্রায় সকল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ হলো পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন। অথচ পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করার পরও সরকার নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কাজ ঝুঁলিয়ে রেখেছে। আর এজন্য পার্বত্যাঞ্চলের হেডম্যান সমাজকে এই চুক্তি বাস্তবায়নের আন্দোলনে শরিক হওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান।

পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসিদের হাজার বছরের জীবন ধারার সামাজিক সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্য রক্ষায় শাসক গোষ্ঠির কোনো সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করে সন্তু লারমা বলেন, নির্মম বাস্তবতায় সারা বাংলাদেশে প্রায় ৫৪টি সংখ্যালগু সম্প্রদায়কে কঠিন সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশের যে সরকার শাসক গোষ্ঠি ও শাসন ব্যবস্থা বিরাজমান রয়েছে এটা অগণতান্ত্রিক ও গণবিরোধী শাসন ব্যবস্থা উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, সার্বিক পরিস্থিতিতে বর্তমানে দেশে যে সংবিধান রয়েছে সেটাকে আমরা গণতান্ত্রিক সংবিধান বলতে পারিনা, এটা গণমুখী কোনো সংবিধান নয়। এই সংবিধানে একদিকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আবার অন্যদিকে একইভাবে ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র একটি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে গিয়ে সরকার গঠন করলেই, এটাকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এটা বলা যেতে পারেনা বা বলা যায়না।

সাবেক এই গেরিলা নেতা বলেন, গণতন্ত্র মানেই হলো দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে একজন নাগরিকের অধিকার ও অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে নাগরিকের অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করা। কিন্তু আজকে দেশে সেটা নাই। তিনি অভিযোগ করেন দেশের ১৫ কোটি মানুষকে বঞ্চিত করে মাত্র এককোটি মানুষ তথাকথিত গণতন্ত্রের সুবাতাস পাচ্ছে। এটা হতে পারেনা। সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যের এক পর্যায়ে গত ২৯ জানুয়ারি মহান সংসদে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের সমালোচনা করে সন্তু লারমা জানান, আমরা জানি এই ভাষণ মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিজের কোনো মতামত নয়, এটা সরকারের প্রদত্ত নিজস্ব অভিব্যক্তি তিনি আমাদের উদ্দেশ্যে প্রদান করেছেন। সন্তু লারমা বলেন, প্রদত্ত এই ভাষণে আমি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির বিষয়ে বাস্তবতার কোনো মিল খুঁজে পাইনি। সন্তু লারমা নিজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ বলে উল্লেখ করে জানান, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে অর্থাৎ গত বছরের নভেম্বরে তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে বলি, তার সরকারের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই ২০০১ সালের অমিমাংসীত বিষয়টি একটা সমাধান করে দিয়ে যান। কিন্তু আমি আমার দূর্ভাগ্য শব্দটি ব্যবহার করবো না কারণ প্রধানমন্ত্রী আমার বিষয়টি’র কোনো গুরুত্ব না দিয়ে যেভাবে আগে ছিলো ঠিক সেভাবেই রেখে দিয়েছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যেতে পারে না। পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ের মানুষের জীবন ধারা কখনো উন্নতির দিকে যেতে পারবেনা বলে উল্লেখ করেন সন্তু লারমা পার্বত্য চুক্তির মৌলিক বিষয়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়ে চুক্তি অনুযায়ী পার্বত্য জেলা পরিষদগুলোকে ভূমি ও পরিবেশের বিষয়সহ তিনি অন্যান্য বিষয়গুলো হস্তান্তর করার উদ্যোগ নিতেও সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।

পার্বত্যাঞ্চলে যখন থেকেই বনবিভাগ সৃষ্টি হয়, ঠিক তখন থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটির সাথে পার্বত্যবাসির লড়াই সংগ্রাম শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সন্তু লারমা বলেন, বনবিভাগের সাথে পার্বত্যবাসির যে, জটিলতা সৃষ্টি হয়ে রয়েছে তার জন্য পাবত্যাঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসিদের জীবনধারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিরা সরকারের একটি অংশ হলেও তারা সবাই নিজেদেরকে পার্বত্যাঞ্চলের মালিক মনে করে জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, বনবিভাগের যে ভূমিকা সেটা আদালতে লেখালেখি করে/ কর্থাবার্তা বলে কোনো লাভ হবে না।

এ প্রসঙ্গে কুইকক্যা ছড়ি মৌজা’র একটি ঘটনার উদাহরণ টেনে বলেন, এই ঘটনাটা আমার মনে হয়, হাইকোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই হাইকোর্ট দিয়েতো হবেনা। ওইটা আমাদের মৌজা, আমাদের জায়গা ওখানে যারা বাস করে, সেখানে ওই জঙ্গল পরিস্কার করে দিলেই তো সব ঝামেলা মিটে যায়। এখানে যদি আমরা মনে করি যে, মামলা হবে, হলে হবে মামলা এখানে কি করার আছে। আর এই ক্ষেত্রে হেডম্যানদেরকেও এগিয়ে আসতে আহবান জানান সন্তু লারমা। তিনি অভিযোগ করেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি অনুসারে এখানে বিরাজমান ভূমি সমস্যা নিরসনে এখানে একটি ভূমি কমিশন সৃষ্টি করে আবার সেই কমিশনের জন্য নির্ধারিত আইন শেখ হাসিনা সরকারই লঙ্গণ করে ভূমি সমস্যা আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে।

আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা (আই এলও) ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের আঞ্চলিক এই সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চাকমা সার্কেল চীফ রাজা ব্যারিষ্টার দেবাশীষ রায়। এর আগে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শান্তি বিজয় চাকমা। সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরার সভাপতিত্বে সম্মেলনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ড. মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য বৃষকেতু চাকমা, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক শামিম শারমিন ও আইএলও এর প্রতিনিধি লিনা জেসমিন লুসাই বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে তিন পার্বত্য জেলার প্রায় শতাধিক হেডম্যান অংশগ্রহণ করেন।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জেএসএস, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ভূমিকমিশন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন