নাইক্ষ্যংছড়ি ভূমি মালিকানা নিয়ে বনবিভাগ-গ্রামবাসী সংঘর্ষ

bon vibag pic-1 copy

মো.আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:
নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ভাল্লুকখাইয়া মৌজায় বন বিভাগ-গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে পাহাড়ী ভূমির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে উভয় পক্ষ আহত হয়েছে বলে দাবী করছেন। খবর পেয়ে দোছড়ি বিজিবি ঘটনাস্থল থেকে সাধারণ দুই গ্রামবাসীকে আটক করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পৌঁছে আবুল কালাম ও আবু সৈয়দ নামে দুইজনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত কয়েক মাস যাবত নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ২৭৫নং ভাল্লুকখাইয়া মৌজার ৭৫একর পাহাড়ী ভূমির মালিকানা নিয়ে বন বিভাগ ও মৌজা প্রধানের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ ঘটনায় মৌজা হেডম্যান মংশৈ ফ্রু চৌধুরী বাদী হয়ে বন বিট কর্মকর্তাসহ ৭জনের বিরুদ্ধে গত ৪জুন নাইক্ষ্যংছড়ি থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয় পক্ষকে নোটিশ জারী করেন শুক্রবার (১২জুন) থানায় তলব করেন।

২৭৫নং ভাল্লুকখাইয়া মৌজা এলাকার বিরোধীয় ভূমির ভোগদখলীয় দাবীদার কাসেম, সমিউদ্দিন জানান, বন বিভাগ বর্তমানে জোরপূর্বক যেখানে সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম শুরু করেছে সেখানে তারা দীর্ঘকাল ভোগ দখলে ছিল। সম্প্রতি পুলিশ উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়ার পরও বন বিভাগের ভাড়াটিয়া লোকজন নিয়ে বিরোধীয় ভূমিতে কাজ করে আসছিল। শুক্রবার সকালে গ্রামবাসী বন বিভাগের ভাড়াটিয়া লোকজনকে কাজ না করার জন্য নিষেধ করলে নাইক্ষ্যংছড়ি বন রেঞ্জ কর্মকর্তা তুলাতলী বন বিট কর্মকর্তার নেতৃত্বে দোছড়ি ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের ছেলে শামসুল আলম, মহিলা ইউপি সদস্যের স্বামী নুরুসহ অনুমান ২০-৩০জন ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ও সামাজিক বনায়নের কথিত উপকারভোগী হাতে ধারালো দা নিয়ে গ্রামবাসীর উপর হামলা করে। এসময় কাসেমের ডান হাতের বাহুতে জখম হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বনবিভাগ বিধি অমান্য করে প্রভাবশালী মহলকে সামাজিক বনায়নে অন্তর্ভুক্ত করার প্রলোভন দিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। বর্তমান বন কর্মকর্তা যোগদানের পর ইতিপূর্বে জেলা পরিষদের জমি নিয়েও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন।

অপরদিকে এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদু সবুর ভুইয়া বলেন- বনবিভাগের জায়গায় কাজ করার সময় হেডম্যানের নেতৃত্বে বহিরাগত কিছু লোক তাদের লোকজনের উপর হামলা করে। এসময় উভয় পক্ষের সাথে ধাক্কা ধাক্কি ও কিল, ঘুষি হয় বলে তিনি স্বীকার করেন। এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। সংঘঠিত ঘটনার বিষয়ে রোববার উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয়ে বৈঠকের কথা রয়েছে বলে তিনি জানান।

উল্লেখ্য, গত ২৯ জানুয়ারী ২০১৫ইং তারিখে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের স্মারক নং- পবম/বন-২/বৃ:শূ: (সা:ব)/০১/২০০৯ (অংশ-১)/২০ ভিত্তিতে উপ-প্রধান বন সংরক্ষের কার্যালয় থেকে ২২.০১০০০০.০০৩.২৯.১৩৫.২০১৫.১১৩নং স্মারকের একটি পত্র তিন পার্বত্য জেলার বন বিভাগের কাছে প্রেরণ করা হয়। এতে তিন পার্বত্য জেলার প্রত্যেক মৌজায় সামাজিক বনায়ন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বন বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে  নাইক্ষ্যংছড়ি ২৭৫নং ভাল্লুকখাইয়া মৌজা হেডম্যান মংশৈ ফ্রু চৌধুরী এ প্রতিবেদককে বলেন- পার্বত্য চট্টগ্রাম ম্যানুয়াল অনুযায়ী মৌজার দেখভাল করেন মৌজা হেডম্যান। যার কারনে সরকারী আদেশ নির্দেশ তিনি মানতে বাধ্য রয়েছে। তবে বন বিভাগের সামাজিক বনায়নের জন্য জমি প্রয়োজন হলে প্রশাসনিক ভাবে কার্যক্রম চালানো উচিত ছিল। এভাবে প্রভাবশালী ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে মৌজাবাসীর দীর্ঘকালের ভূমি দখল করা মোটেও উচিত। যার কারণে বনবিভাগ-গ্রামবাসীর মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এসময় তিনি বন কর্মকর্তা আবদুস সবুর ভূইয়া যোগদানের পর থেকে দুর্নীতি, অনিয়মের মাধ্যমে এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করছে বলে তিনি দাবী করেন।

নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: আবুল খায়ের বলেন- বন বিভাগ ও স্থানীয় লোকজনের মাঝে ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধে শুক্রবার দুই জনকে বিজিবি আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। তবে বিষয়টি নিয়ে রবিবার উপজেলা নিবার্হী অফিসার কার্যালয়ে বৈঠকের কারনে পরে এ দুইজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন