নিজেদের মধ্যে আত্নঘাতী সংঘাত বিরোধীদের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দিচ্ছে- রাশেদ খান মেনন

fec-image

আদিবাসীদের সংসদীয় ককাসের প্রতিষ্ঠাতা ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমরা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সংগ্রাম করছি। এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে আত্নকলহ করে, আত্নঘাতী সংঘাত করে বিরোধীদের জন্য ক্ষেত্র তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে পাহাড়ি মানুষের প্রতি মানুষের যে সহানুভূতি ছিলো এটা কিন্তু আমরা হারিয়েছি। এখানে যদি আমরা সবাই ঐক্যমত হতে না পারি তাহলে পার্বত্য সমস্যার সমাধান সম্ভব না’।

রোববার (৪ আগস্ট) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আদিবাসী সংসদ ককাস আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ সব কথা বলেন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘আদিবাসী দিবসের রজত জয়ন্তীতে আমরা আছি। কিন্তু ওভাবে আমরা আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালন করতে পারছিনা। আমরা এ আন্দোলন যাদের নিয়ে শুরু করেছিলাম এখন তারা অনেকেই এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদিবাসী দিবসের বাণী দিয়েছেন, খালেদা জিয়া যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তখন তিনিও বাণী দিয়েছেন আদিবাসী দিবস বলে। কিন্তু যখন এর বাস্তবায়নের কথা এসেছে তখনই এটি পিছিয়ে গেছে’।

তিনি বলেন, ‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি হয়েছে। এর পুরো বাস্তাবায়ন হয়নি কিন্তু এরপরও আমাদের অনেক অর্জন আছে। এই যে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী হিসেবে যেটা হয়েছে সেটা একধরণের স্বীকৃতি’।

উপজাতিদের ভাষা শিক্ষা নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালে জাতীয় শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে আদিবাসীদের প্রাথমিক শিক্ষা তার ভাষায় হবে। কিন্তু এই যে সাঁওতাল ভাষা কোন হরফে করা হবে এ নিয়ে যে ঝগড়া এটার জন্য আজ পর্য্ন্ত অনেককিছুর মীমাংসা করতে পারিনি। ৫টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য প্রাথমিক স্তরে শিক্ষাগ্রহণ ও পাঠ্যপূস্তক প্রনয়ণ করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের এখন আদিবাসী শিক্ষক দরকার। এর ব্যবস্থা করতে হবে’।

অনুষ্ঠানের সভাপতি আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহ্বায়ক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের মধ্য দিয়েই দাবি আদায় করতে হবে। আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে’।

ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‌‌’আদিবাসীদের স্বীকৃতি না দেয়া আমাদের সংবিধানের কলঙ্ক। পার্বত্য অঞ্চলে শান্তির জন্য যে চুক্তি হয়েছে সেটিও বাস্তবায়নে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে, হচ্ছে। নেটিভ আমেরিকানদের হত্যা করার জন্য আমেরিকানরা তাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। পাকিস্তানীদের আমরা মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ক্ষমা চাইতে বলছি। বাংলাদেশের সরকারকেও আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। কারণ আমরা বাঙালি হয়ে পাহাড়িদের অত্যাচার করি, তাদের হত্যা করি’।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মণ্ত্রনালয় ও পাহাড়ি আদিবাসীদের জন্য পৃথক মণ্ত্রনালয় করতে হবে। জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন করতে হবে। আদিবাসীদের স্বীকৃতির জন্য বিশ্বের সব আদিবাসীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে’।

রানা দাস গুপ্ত বলেন, ‘আমরা চার মূলনীতির উপর ভিত্তি করে দেশ গঠন করেছি। এই চার নীতির উপর নির্ভর করে বাংলাদেশের শান্তি আনয়নে পার্বত্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন ও এর রোডম্যাপ সরকারকে ঘোষণা করতে হবে। তাদের আদিবাসী স্বীকৃতি ও জাতীয়ভাবে আদিবাসী দিবস পালন করতে হবে’।

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং অনুষ্ঠানে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। আদিবাসীদের মাতৃভাষা বিষয়ক প্রবন্ধে তিনি বেশকিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। এর মধ্যে ‘আদিবাসীদের মাতৃভাষা সংরক্ষণ ও বিকাশের লক্ষে জাতীয় পর্যায়ে একটি আদিবাসী ভাষা ও সংস্কৃতি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করা জরুরি’ বলে জানান তিনি। এর লক্ষে ‘একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি সেল গঠন ও পরিচালনা পর্ষদ গঠন’ করার কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘মাত্র ৫টি আদিবাসী ভাষায় প্রাথমিক স্তর পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়েছে। কিন্তু পৃথকভাবে কোথাও আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এ জন্য আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগের পদক্ষেপ চালু করতে হবে। আরও ৫টি আদিবাসী ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে হবে’।

এছাড়া তিনি ‘ভূমি কমিশন আইন কার্যকর করা ও এর প্রয়োজনীয় বিধিমালা প্রণয়ণের উপর গুরত্ব দেন। এছাড়া ২০০৭ সালে গৃহিত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯ নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করতে হবে’ বলে জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা: উত্তরণের পথ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জান্নাত-এ ফেরদৌসী। তিনি তার প্রবন্ধে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র. আ. ম ওবায়দুল মুক্তাদির এমপি, একেএম ফজলুল হক এমপি, লুৎফুন্নেসা খান এমপি, নমিতা চাকমা, কাজল দেবনাথ, নারায়ন চন্দ্র রাজবংশী প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন