নির্বাচনের যাত্রা শুরু করেছে আওয়ামী লীগ

fec-image

ঘোষণা করা হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল। এরই মধ্যে নির্বাচনের সকল কার্যক্রম হাতে নিয়েছে আওয়ামীলীগ।

শুক্রবার (১৭ নভেম্বর) থেকে তাদের নির্বাচনী যাত্রা শুরু হচ্ছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন দলকে ভোটের মাঠে নামানোর তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। কারা কারা ভোটে আসছে, এক সপ্তাহের মধ্যেই তা দৃশ্যমান করতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গণমাধ্যমকে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যাত্রা কাঙ্ক্ষিত গতিতে চলা শুরু করেছে। এখন আর পেছনে তাকানোর সময় নেই।

আওয়ামীলীদের নীতিনির্ধারকেরা বলছেন, আজ থেকে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সব কার্যক্রমই হবে নির্বাচনকেন্দ্রিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি প্রতিদিনই দলের কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকবেন।

জানা যায়, আজ আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির প্রথম বৈঠক বসছে। তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বেলা তিনটায় এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন কমিটির চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, উপদেষ্টা পরিষদ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন।

অনুষ্ঠিত আজকের বৈঠক থেকেই ভার্চ্যুয়ালি আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের লক্ষ্যে ফরম বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

শুরুতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের ফরম সংগ্রহ করবেন। আগামীকাল শনিবার (১৮ নভেম্বর) থেকে অন্য আগ্রহীরা দলীয় ফরম কিনতে পারবেন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির আজকের বৈঠকে ১৪টি উপকমিটি অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। এসব কমিটির নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতা ছাড়াও পেশাজীবী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা থাকতে পারেন। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা জাতীয় কমিটির কো-চেয়ারম্যান পদ এখনো ফাঁকা আছে। আজ এই পদে নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সাদিক এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবুল কালাম আজাদের নাম আলোচনায় রয়েছে।

আওয়ামী লীগের এখন অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে বিএনপির নেতাদের এনে স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ছোট দলের হয়ে ভোটে অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা করা। এই কাজ জোরেশোরে চলছে। এ ছাড়া ইসলামি দল ও অন্যান্য ছোট দলকে ভোটে আনতে দর-কষাকষি চলছে বলে জানা গেছে।

দলটির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, বিএনপির পক্ষে ভোট ঠেকানো সম্ভব নয়—এটা মানুষকে বোঝাতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। এখন লক্ষ্য হচ্ছে দল ও বিএনপির নেতাদের বোঝানো যে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলোর চাপও ভোটের পথে বাধা হতে পারবে না। ফলে যাঁরা কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন, তাঁরা ভোটে আসার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এরপরও লক্ষ্য পূরণ না হলে চাপ বাড়ানো হবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বিএনপিসহ আরও অনেক দল নির্বাচনে না এলে এর বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সামনের কয়েকটা দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ (ক্রুশিয়াল)। ৩০ নভেম্বর মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ। এর মধ্যে কত ফুল ফুটবে। এখন কোন ফুল কোথায় ফুটছে…হঠাৎ জেগে উঠবে। অপেক্ষা করুন।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং কর্মকৌশল ঠিক করতে তিনটি কার্যালয় ব্যবহার করবে আওয়ামী লীগ। দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হবে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। সেখানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। ফরম জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২১ নভেম্বর। ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার জন্য ১০টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এবার প্রতিটি ফরমের দাম ধরা হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। ফরম জমা নেওয়া শেষ হলে বৈঠকে করে সিদ্ধান্ত নেবে মনোনয়ন বোর্ড।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দ্বিতীয় তলায় ঢাকা, ময়মনসিংহ, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ এবং তৃতীয় তলায় রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের মনোনয়নপত্র বিতরণ করা হবে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় সব বিভাগের মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অতিরিক্ত লোকসমাগম ছাড়া আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে অথবা প্রার্থীর একজন যোগ্য প্রতিনিধির মাধ্যমে আবেদনপত্র সংগ্রহ ও জমা প্রদান করতে হবে। আবেদনপত্র সংগ্রহের সময় অবশ্যই প্রার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি সঙ্গে আনতে হবে এবং ফটোকপির ওপর মুঠোফোন নম্বর, বর্তমান সাংগঠনিক পরিচয়সহ তিনটি পদ সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

নতুন করে তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি সাজানো হয়েছে নির্বাচন সামনে রেখে। সেখানে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার জন্য একটি কক্ষ রাখা হয়েছে। ওই কক্ষ থেকে ভার্চ্যুয়ালি সারা দেশে যোগাযোগ করা এবং কর্মসূচি পালনের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বসানো হয়েছে।

কয়েক দিন ধরেই আওয়ামী লীগের নির্বাচনের কৌশল ঠিক করতে সাবেক সচিব ও পুলিশ কর্মকর্তাদের একটি দল নিয়মিত বসছেন। গতকালও তাঁদের বৈঠক করতে দেখা গেছে। এই দলে রয়েছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. সাদিক, সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সাবেক কূটনীতিক সোহরাব হোসেন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার ও ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া।

গত কয়েকটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়টি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। এবার ওই কার্যালয় গবেষণাধর্মী কর্মকাণ্ড এবং প্রচারসংক্রান্ত কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। এরই মধ্যে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নেতৃত্বে একটি দল সেখানে প্রচার-প্রচারণা বিষয়ে কিছু কার্যক্রম শুরু করেছে। এ ছাড়া গবেষণা ও তথ্য সংগ্রহের কাজ সেখানে সারা বছর ধরেই চলে।

নির্বাচন কমিশনের তফসিল অনুযায়ী, আগামী ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ হবে। ওই দিন থেকেই ভোটের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। এবার সিলেট থেকে নির্বাচনের প্রচার শুরু করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, তফসিল, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন