আন্দোলন ও আদালতের বারান্দায় নেতাকর্মীরা

নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না খাগড়াছড়ি বিএনপি

fec-image

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না খাগড়াছড়ি বিএনপি। গত প্রায় ১৭ বছরে আড়াই শতাধিক মামলায় ৫০ হাজারের বেশি নেতাকর্মী আসামি। তাদের সময় কাটে সরকার পতনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নের পাশাপাশি হামলা, মামলা ও আদালতে বারান্দায়। খাগড়াছড়ি বিএনপির এখন একমাত্র লক্ষ্য সরকার পতন আন্দোলনে সফলতা। বিএনপির নেতাকর্মীদের ধারণা, সরকারের পতন হলে কারাবন্দি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন এবং ফরমায়েশি রায়ে সাজাপ্রাপ্ত বিএনপির সকল নেতা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তাই আপাতত নির্বাচনের চিন্তা বাদ।

খাগড়াছড়ি বিএনপির রাজনীতিতে ওয়াদুদ ভূইয়ার বিকল্প নেই তা পরীক্ষিত। তার একক নেতৃত্বে চলছে খাগড়াছড়ি বিএনপি। তিনি ৮০ দশকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন। বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির দায়িত্বের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদকও। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ওয়াদুদ ভূইয়া খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপির প্রার্থী। দুইবার তিনি এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়াও ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল মামলায় বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে দেশে জরুরি সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর গ্রেফতার ও মামলায় সাজা হওয়ায় পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে অংশ নিতে পারেননি।

ওয়াদুদ ভূইয়া ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কল্পরঞ্জন চাকমার কাছে হেরে যান। তবে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের দায়ের করা মামলায় আদালত ওয়াদুদ ভূইয়াকে নির্বাচিত ঘোষণা করেন আদালত। কিন্তু সে সময় ভারতে আশ্রিত অর্ধ লক্ষাধিক বাংলাদেশির প্রত্যাবর্তন ও শান্তিবাহিনীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী কর্নেল অলি আহমেদের নেতৃত্বে ভারতসহ ত্রিমুখী সংলাপ চলার কারণে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুরোধে বিষয়টি আর এগোইনি।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হলেও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ওয়াদুদ ভূইয়া নির্বাচিত হন। সরকার তাকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়। তার আমলে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়, যা এখনো দৃশ্যমান। ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হওয়ার আগে ঘোষিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ওয়াদুদ ভূইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তবে জরুরি সরকারের সময় গ্রেফতার ও তাকে দুর্নীতি মামলায় সাজা দেওয়ায় ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নিতে পারেননি। তিনি কারাগারে থাকা অবস্থায় তার পরামর্শে খাগড়াছড়ি আসনে সমীরন দেওয়ানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে তিনি প্রায় দ্বিগুণ ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ প্রার্থী যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরার কাছে পরাজিত হন। এর পর থেকে তাকে আর রাজনীতির মাঠে দেখা যায়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ওয়াদুদ ভূইয়াকে আবারও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু সাজা স্থগিত হলেও তার মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন বাতিল করে দেওয়ায় তারই পরামর্শে ভাতিজা শহিদুল ইসলাম ভূইয়াকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা না থাকায় ঐ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী তৃতীয় হন। তিনিও নির্বাচনের পর নির্বাসনে চলে যান। এ বিষয়ে কথা বলতে চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপির প্রার্থী সমীরন দেওয়ান ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই দলের প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূইয়ার সাথে।

খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু জানান, ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের নেতৃত্বে দেশে জরুরি সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে গত প্রায় ১৭ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। সারাদেশের মতো খাগড়াছড়িতে বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা-মামলায় জর্জড়িত। এ সময়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে প্রায় আড়াই শতাধিক মামলা হয়েছে। আসামির সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি। তার মধ্যে জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভূইয়ার নামে ৩০টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছারসহ গ্রাম পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কয়েক ডজন মামলার আসামি। এদের সময় কাটছে নিম্ন আদাল ও উচ্চ আদালতে। তারপরও খাগড়াছড়িতে বিএনপি সফলতার সাথে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, আমরা এই সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথা ভাবছি না। এ সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে প্রস্তুতির সময় পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের এখনকার লক্ষ্য, এই সরকারের পতন। দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশনাও তেমনই। কাজেই এই মুহুর্তে নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোন ভাবনা নেই।

সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে বিএনপির আন্দোলন-সংগ্রামের সকল কর্মসূচিতে ওয়াদুদ ভূইয়ার পাশাপাশি তার সহ-ধর্মিণী ও জেলা বিএনপির প্রধান উপদেষ্টা জাকিয়া জিনাত বিথীকেও দেখা যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও তিনি যোগ দিচ্ছেন, যা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেছে। নেতাকর্মীরা জাকিয়া জিনাতকে ওয়াদুদ ভূইয়ার রাজনীতির পরবর্তী উত্তরাধিকার ভাবতে শুরু করেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, বিএনপি এখন নির্বাচন নিয়ে ভাবছে না। আমরা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করছি। সরকার পতনের পর আমরা নির্বাচন নিয়ে ভাববো। তিনি বলেন, খাগড়াছড়ি আসনে ওয়াদুদ ভূইয়ার বিকল্প নেই। ওয়াদুদ ভূইয়ার সহ-ধর্মিণী জাকিয়া জিনাত বিথীর রাজনীতিতে সক্রিয়া হওয়া প্রসঙ্গে এম এন আবছার বলেন, এটা খাগড়াছড়িতে বিএনপির রাজনীতির জন্য বাড়তি শক্তি।

খাগড়াছড়ি জেলা মহিলা দলের সভাপতি কুহেলী দেওয়ান বলেন, প্রিয় নেতা ওয়াদুদ ভূইয়ার সহ-ধর্মিণী জাকিয়া জিনাত বিথী রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ায় মহিলা দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য বেড়েছে। রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় মহিলারা উৎসাহ পাচ্ছেন। এক কথায় বলা যায়, জাকিয়া জিনাত বিথী খাগড়াছড়ি বিএনপির রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছেন। ওয়াদুদ ভূইয়ার পাশাপাশি তার সহ-ধর্মিণী জাকিয়া জিনাত বিথীর বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় সম্পৃক্ততা সব মহলে আলোচিত হয়েছে। এ চমকে খাগড়াছড়ি বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করবে বলে মনে করেন পর্যবেক্ষক মহল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন