পর্যটক সুবিধা বাড়াতে দরকার ‘মানি চেইঞ্জার’

COX LOGO 2

আবদুল্লাহ নয়ন:
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের নগরী হয়েও কক্সবাজারে এখনো আশানরূপ পর্যটন সুবিধা নিশ্চিত করা ও পর্যটকের আগমন ঘটানো সম্ভব হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পর্যটন খাতে যুগোপযোগী নানা পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে হবে। বাড়াতে হবে পর্যটকদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা। অবশ্য তা হতে হবে দেশিয় সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে। ক´বাজারের পর্যটন উন্নয়নে পার্বত্য নিউজ ডট কম’র ২০ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ  ২য় পর্ব।

মানি চেইঞ্জার/মানি এক্সচেইঞ্জার
‘মানি চেইঞ্জার’ অর্থাৎ মুদ্রা বিনিময়। পরিষ্কারভাবে বললে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে  বাংলার ‘টাকা’ প্রদান। এটি যে কোন দেশের প্রতিটি স্থানেই অতি প্রয়োজন। বিশেষ করে পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারে এর গুরুত্ব অপরিসীম।
 
কেন দরকার : ’৯০ এর দশকের পর এবং বিশেষ করে ২০০০ সালের পর থেকে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটে। এরপর ২০০৫-০৬ সালের দিকে ডেভলপার কোম্পানীগুলো বিনিয়োগ করতে শুরু করে কক্সবাজারে। একপর্যায়ে বিদেশী পর্যটকের আগমনও লক্ষণীয়ভাবে যায়। এখন প্রতিদিনই অনেক বিদেশি পর্যটক কক্সবাজারে আসেন ভ্রমণের জন্য। সৈকত নগরী কক্সবাজারের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য্য দেখে অনেক বিদেশী পর্যটক একদিনের স্থানে কয়েকদিন বাড়িয়ে থাকেন। ওই সময় অর্থ সংকটে পড়লে তাদের দেশীয় মুদ্রা বদলিয়ে বাংলাদেশের ‘টাকা’য় রূপান্তর করতে হয়। আর কক্সবাজারে এ সেবা না থাকায় পর্যটকরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ফলে তারা অবস্থান না করে দেশে ফিরে যান।
জানা গেছে, অগ্রণী ব্যাংক কক্সবাজার শাখায় ‘মানি চেইঞ্জার’ রয়েছে। তবে এর সেবা অপ্রতুল। এছাড়া সী-গাল, সী প্যালেসসহ স্টারমানের বিভিন্ন হোটেলে অঘোষিতভাবে ‘মানি চেইঞ্জার’ রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তা কেবল তাদের হোটেলে থাকা পর্যটকদের জন্য। বাইরের পর্যটকরা এ সুবিধা পাননা।
 
বিশেষজ্ঞদের মতামত : উন্নত বিশ্বের এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া কঠিন-যেখানে ‘মানি চেইঞ্জার’ নেই-এমনটাই বলছে বিশেষজ্ঞরা। পর্যটন বিশ্লেষক কক্সবাজারের আবু আহমদ চৌধুরী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, যে কোন দেশে একজন পর্যটক সর্বোচ্চ ৫ হাজার পরিমাণ স্ব-দেশিয় মুদ্রা নিয়ে প্রবেশ করতে পারে। এর বেশি হলে অনুমতি নিতে হয়। সে সুবাদে পর্যটকদের সাথে মুদ্রাগুলো যে দেশে তিনি ভ্রমণ করছেন সে দেশের মুদ্রায় পরিণত করার সুযোগটি পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখতে হবে।

বিশিষ্ট পর্যটন গবেষক ট্যুর অপারেটর সিরাজুল ইসলাম আনিস জানান, ‘মানি চেইঞ্জার’ কেবল বিদেশী পর্যটকদের জন্য করতে হবে তা নয়। আমরা যারা দেশে থাকি। আমাদেরও মুদ্রা বিনিময় করতে হয় প্রায় সময়। কক্সবাজারের বহু মানুষ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী জীবন-যাপন করেন। তারা অনেক সময় সে দেশের মুদ্রা নিয়ে দেশে আসেন। প্রয়োজনে ওই মুদ্রা টাকা’য় পরিণত করতে হয়। মানি চেইঞ্জার না থাকায় তাদেরও সমস্যায় পড়তে হয়।

কোথায় করতে হবে : শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পয়েন্ট, সরকারী-বেসরকারী বিভিন্ন ব্যাংক, হোটেল-মোটেল অর্থাৎ যেখানে পর্যটকের আগমন বেশি সেখানেই ‘মানি চেইঞ্জার’ স্থাপন করতে হবে। যাতে পর্যটকরা হাতের নাগালেই ওই সুবিধাটুকু পান। কারণ পর্যটনের উন্নয়ন সাধন করতে হলে পর্যটকদের কাছে নানা সুবিধা পৌঁছিয়ে দিতে হবে। ‘সুবিধা’ পর্যটকরা খুঁজে নিবে এমন মন-মানসিকতার পরিবর্তন না হলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ আদৌ কতটুকু প্রসারিত হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।

মানি চেইঞ্জারের সুবিধা : বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতি বছর কক্সবাজারে ক’জন বিদেশি পর্যটক ভ্রমণে আসেন। সরকারী কিংবা বেসরকারীভাবে কোথাও কোন সঠিক তথ্য নেই। কেবল যে হোটেলে পর্যটকরা রাত যাপন করেন সেখাইে সামান্য তথ্যটুকু থাকে। ‘মানি চেইঞ্জার’ হলে মুদ্রা বিনিময়ের সময় ওই পর্যটকের নাম সংশ্লিষ্ট স্থানে রেকর্ডভূক্ত হয়ে যাবে। ফলে বছর শেষে সব মিলিয়ে হিসেব করলে বিদেশি পর্যটক আগমনের সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এছাড়া পর্যটকরা এ সেবাটি ফেলে একদিনের স্থানে আরেকটু বাড়িয়ে থাকতে সমস্যায় পড়বেনা। ফলে দেশের ব্যবসায়ীরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আরো লাভবান হতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন