পাঠ্যপুস্তক না পৌঁছায় খাগড়াছড়িতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু নিয়ে শঙ্কা

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হয়নি, আছে অবকাঠামোর সঙ্কট

khagrachari-picture02-04-01-2017

এইচ এম প্রফুল্ল/ মো: শাহজাহান:
খাগড়াছড়িতে স্ব স্ব মাতৃভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ২০১৭ শিক্ষাবর্ষের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনও খাগড়াছড়িতে পৌঁছেনি স্ব স্ব মাতৃভাষার পাঠ্যপুস্তক। জাতিভিত্তিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা না করা ও পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় খোদ উদ্যোক্তারাই চ্যালেঞ্জের আশঙ্কা করছেন চলতি বছরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে।

ঝরে পড়া রোধ, পাহাড় আর সমতলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ নিশ্চিত করার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও এনসিটিবি’র উদ্যোগে ২০১২ সালে কার্যক্রম বাস্তবায়নের উদ্যোগ শুরু করে। প্রথমত,জনসংখ্যার পরিমাণ বিবেচনায় চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, ত্রিপুরা ও সাদরি জন্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর প্রাথমিক পর্যায়ে এই কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।কথা ছিল পরের বছর অথাৎ ২০১৩ সাল থেকে চালু হবে। অবশেষে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে তিন পার্বত্য জেলায় চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারো সম্প্রদায়ের স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ নিলেও এখনও পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ হয়নি খাগড়াছড়িতে।

পাহাড় এবং সমতলের ভিন্ন ভাষাভাষী ৪৫টি ক্ষুদ্র জাতির বৈচিত্র্যময় ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতি। সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষার পাশাপাশি নিজেদের ভাষায় শিক্ষা লাভের সুযোগ না থাকায় প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক শিশু ঝরে পড়ছে বিদ্যালয় থেকে। আবার অনেক শিশু ভাষা ভীতির কারণে অধিকাংশ সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকছে।

khagrachari-picture01-04-01-2017

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর জন্য ২৬হাজার ৫০০ পাঠ্যপুস্তক সরবরাহের চাহিদা দেওয়া হয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। কিন্তু নতুন শিক্ষাবর্ষের প্রথম সপ্তাহ অতিবাহিত হলেও এখনও পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়নি। স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রমে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারো সম্প্রদায়ের খাতা ও শিক্ষক নিদের্শকা সরবরাহ করা হয়েছে মাত্র। যার মধ্যে রয়েছে চাকমা সম্প্রদায়ের ৩৮৩৩টি, মারমা সম্প্রদায়ের ১৯৭০টি, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ১৬২২টি ও গারো সম্প্রদায়ের ৯ টি খাতা এবং তার বিপরীতে চাকমা ও মারমা সম্প্রদায়ের মাতৃভাষায় পাঠদানের জন্য ১২০০টি শিক্ষক নিদের্শকা এসেছে।

খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মহালছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমি ত্রিপুরা জানান, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে স্ব স্ব মাতৃভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে মেয়েদের প্রাক প্রাথমিক শ্রেণীর কোন পাঠ্যপুস্তক এখনও বিদ্যালয়ে আসেনি। তাছাড়া শিক্ষকরা প্রশিক্ষণও পায়নি।

ঠাকুরছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সত্য প্রকাশ ত্রিপুরা জানান, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মাতৃ ভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম চালু হলেও পাঠ্য পুস্তক না আসায় ও প্রশিক্ষণ না থাকায় শিক্ষকরা কিভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাবেন তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছেন।

khagrachari-picture03-04-01-2017

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীদের মাতৃভাষাকে জাতীয় পাঠ্যক্রমে অর্ন্তভুক্তিকে বাংলাদেশের জন্য ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত আখ্যায়িত করে ত্রিপুরা ভাষার লেখক প্যানেলের সদস্য(এনসিটিবি)মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, স্ব স্ব মাতৃভাষায় শিক্ষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জাতীয় পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করতে ২০১২ সালে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড(এনসিটিবি) ত্রিপুরা, মারমা ও চাকমা সম্প্রদায়ের ৬ জন করে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট লেখক প্যানেল গঠন করে।

টানা প্রায় পাচ বছর প্রচেষ্ঠায় ২০১৭ সাল থেকে চালু করার কথা থাকলেও যথাসময়ে পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ না হওয়া, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও বিদ্যালয়গুলোতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো না থাকায় ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে স্ব স্ব মাতৃভাষায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িঁছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, ২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তকের চাহিদা পাঠানো হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে। পাঠ্যপুস্তক এসে পৌঁছলে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যালয়গুলোতে সরবরাহ করা হবে।

জাতীয় শিক্ষাক্রমে মাতৃভাষায় শিক্ষা লাভের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত হওয়ায় পার্বত্য তিন জেলাসহ সমতলের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাচিত্র আমুল বদলে যাবার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন প্রয়োজনীয় দ্রুত সময়ের মধ্য প্রাক-প্রাথমিকের পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যায়ে এ কার্যক্রম চালু করা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন