পার্বত্যাঞ্চলের তিন জেলা বিচ্ছিন্নকরণের ষড়যন্ত্র

pahar 1
 
বেলায়েত হোসেন:
(শেষ)
বাংলাদেশ থেকে পার্বত্য তিন জেলা বিচ্ছিন্নকরণে নানা ষড়যন্ত্র ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। দেশি-বিদেশি চক্র পাহাড়ি বাঙালি বিরোধ উসকে দিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং সম্পদে ভরপুর এক-দশমাংশ উর্বর এলাকা বিচ্ছিন্ন করতে দৌড়ঝাঁপ অব্যাহত রেখেছে ।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেশের স্বার্বভৌমত্ব হুমকিগ্রস্ত করার গভীর চক্রান্ত চলছে পার্বত্য তিন জেলা ঘিরে। খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৬৮ কিলোমিটার দূরের মাটিরাঙ্গার দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের তাইন্দংয়ে গত ৩ আগস্ট পাহাড়ি-বাঙালিদের ৪১ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, ভাঙচুরসহ ব্যাপক সহিংসতার আড়ালেও ছিল গভীর ষড়যন্ত্র। বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থার কর্মকর্তা ও এনজিও প্রতিনিধি গাহাড়ি এলাকায় ঘন ঘন সফর করছেন। তারা পার্বত্যচুক্তি সম্পাদনকারী ও চুক্তিবিরোধী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন।

এদিকে শান্তিচুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ এবং পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে বিরোধ বাঁধিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের ফায়দা হাসিলের আশঙ্কা করছেন স্থানীয় আদিবাসী ও বাঙালি নেতারা। পার্বত্য চট্টগ্রাম ঘিরে বিদেশিদের গোপন এজেন্ডার ব্যাপারে তারা সরকারকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে আহ্বান জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতি ও বাঙালিদের মধ্যে সম্প্রীতি বজার এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তায় সেনাসদস্যরা নিরলসভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। একটি বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার একজন পদস্থ কর্মকর্তা স্বাধীনমতকে জানান, রাষ্ট্রবিরোধী নানা ষড়যন্ত্র রুখতে এ অঞ্চলের ওপর বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে বিদেশিদের গোপন এজেন্ডার ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।

943069_621331354545320_1438220585_n

এদিকে পূর্ব তিমুর এবং দক্ষিণ সুদানের মতো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না পর্যবেক্ষক মহল। তাদের মতে, পূর্ব তিমুর এবং দক্ষিণ সুদান যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া ও সুদানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশ দুটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পূর্ব তিমুর এবং দক্ষিণ সুদান এখন দুটি স্বাধীন খ্রিষ্টান রাষ্ট্র। বিদেশিদের দীর্ঘ ৭৫ বছরের নানা ষড়যন্ত্র এবং আয়োজনের মধ্য দিয়ে সে দুরভিসন্ধি বাস্তবায়িত হয়েছে। পার্বত্য এলাকা ঘিরে সে ধরনের কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে একটি গোয়েন্দা সংস্থা গত বছর সরকারের কাছে রিপোর্ট দাখিলের পর প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

খাগড়াছড়ি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবানে বসবাসরতদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিভিন্ন এনজিও ও খ্রিস্টান মিশনারি বাংলাদেশে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীকে ‘আদিবাসী’ প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এ চক্র আধিপত্যবাদী বিদেশি প্রভুদের ভূ-রাজনৈতিক নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র জাতিসত্তাগুলোকে আদিবাসী ঘোষণা করেছে। তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে স্বাধীন ‘জুমল্যান্ড’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে উপজাতিদের ইন্ধন জোগাচ্ছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গজিয়ে ওঠা সশস্ত্র সংগঠনগুলো এখনো পার্বত্য এলাকাকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
 জানা গেছে, অবাধ তথ্যপ্রবাহের সুযোগে পাহাড়ি এলাকায় ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থার উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট দ্রুত বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। সংস্থাগুলো দেশবিরোধী তৎপরতায় জড়িয়ে পড়লেও দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় তা রোধ করা প্রায় অসম্ভব বলে স্বীকার করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন দাতাদেশ ও সংস্থায় কর্মরত ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান উপজাতীয়দের নানাভাবে এসব কাজে নিয়োজিত করা হচ্ছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টী সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, এ অঞ্চল বিচ্ছিন্ন করার নানা ষড়যন্ত্র চলছে। রাষ্ট্রনায়কোচিত প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার অভাবে সমস্যা দিন দিন জটিল হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। হিন্দু-বৌদ্ধ- খ্রিষ্ঠান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি এবং চাকমা সম্প্রদায়ের বর্ষীয়ান নেতা প্রবীন চন্দ্র চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনীন্দ্রলাল ত্রিপুরা এবং মারমা ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও স্থায়ী পরিষদ সদস্য ম্রা সা থোয়াই মারমা স্বাধীনমতের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এই অভিমত দিয়েছেন।

নেতৃবৃন্দ বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ মজিবুর রহমান পার্বত্য ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির সঙ্গে সৌহাদ্যপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছাতে পারতেন। কিন্তু উপজাতীয় নেতাদের আবেগ উপেক্ষা করে তিনি পরিহাসের সঙ্গে বলেন, ‘তোরা সব বাঙালি হয়ে যা। তোদের প্রমোশন দিলাম বাঙালি হিসেবে।’ অন্যদিকে তার মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবেন্দ্রলাল বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার সঙ্গে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্যচুক্তি করে এ সমস্যাকে অধিকতর জটিল করে তোলেন।

অন্যদিকে পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা ও পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলকাছ আল মামুন ভুঁইয়া বলেন, সার্বভৌম অঞ্চল তিমুর দ্বীপের পূর্বাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। ইস্ট-তিমুরের এই বিচ্ছিন্নতার পেছনে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির সূক্ষè ষড়যন্ত্র কাজ করেছে। তিনি বলেন, উপজাতি চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ ১৩টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী নিজেদের আত্মপরিচয় বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসী স্বীকৃতি চেয়ে জাতিসংঘের মাধ্যমে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। এ জন্য ইউএনডিপি এবং টিআইবিসহ বামঘরানা এবং বিবৃতিবাজরা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীকে দিয়ে গণভোটের মাধ্যমে জুমল্যান্ড গঠনের স্বপ্নে বিভোর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন