পার্বত্যাঞ্চলে চলছে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা : সন্তু লারমা

Bandarban pic- 205

স্টাফ রিপোর্টার:
জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সভাপতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরপে সন্তু লারমা বলেছেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা চিরতরে অবসানের জন্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদ আইন বাস্তবায়ন চায়। সেখানে আমাদের অংশিদারিত্ব আছে। আমাদের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য রাজনৈতিক, ভূমি, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আন্দোলন সংগ্রাম করেছি এবং করে যাচ্ছি।’

বুধবার বান্দরবানে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) ২০তম জেলা সম্মেলন ও ২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্থানীয় রাজার মাঠে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের সভাপতি জ্যোতিস্মান চাকমা’র সভাপতিত্বে জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেএসমং মারমা, চট্টগ্রমের সাবেক মহিলা কাউন্সিলর অ্যাড. রেহেনা বেগম রানু, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মহিউদ্দিন মাহীন, জেলা বন ও ভূমি অধিকার আন্দোলন কমিটির সভাপতি জুমলিয়ান আমলাই, পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সভাপতি ওয়াইচিং প্রু মারমা, জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নেতা উদয়ন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ছাত্রমৈত্রী সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মারুফ তন্ময় বিল্লা প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

তিনি বলেন, ‘পার্বত্যাঞ্চলে ১৮০৭ সাল থেকে চলছে উপনিবেশিক শাসন। ব্রিটিশের ১৯০০ সালের শাসন ব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানে না থাকলেও জেলা প্রশাসাক, ইউএনও, পুলিশ এবং আমলারা তথা কথিত শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পরিপন্থী নানা বিধি কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। পার্বত্য অঞ্চলে দেশ পরিচালনা ও শাসন করার নামে সরকার নানা বিধি, আইন ও প্রজ্ঞাপন চাপিয়ে দিচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের জম্মু জনগণ উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা ও শোষণ নিপীড়ণ এবং নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে চায়। কিন্তু বাংলাশের সরকার ও শাসক গোষ্ঠি হতে দিচ্ছেনা’

সন্তু লারমা বলেন, ‘সাম্প্রদায়ীকতা পূর্ণ, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ শূন্য, উগ্রতা ও দুর্নীতিপূর্ণ আওয়ামী লীগের রাজনীতি। ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা পাহাড়ে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, ভূমি দখল, শোষণ নিপীড়ণ ও চুক্তি রিরোধী কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া পার্বত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের পরও এ অঞ্চলে অপারেশন উত্তোরণের নামে চলছে সেনা শাসন ব্যবস্থা। চুক্তি স্বাক্ষরের পরও কেন পার্বত্য অঞ্চলে আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদের আইন কার্যকর হবেনা। জম্মু জনজগণের আপত্তিকে অবহেলা করে শেখ হাসিনা কেন ৫ জন থেকে ১৫ জন সদস্য বিশিষ্ট জেলা পরিষদ গঠন করল। পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়াম্যান-সদস্যরা কি,আওয়ামী লীগের দলীয় নীতি নির্ধারণের বাইরে গিয়ে জম্মু জনগণের পক্ষ হয়ে কথা বলতে পারবে? আওয়ামীলীগ চুক্তি ভঙ্গ করে জেলা পরিষদকে দলীয়করণ করেছে।’

তিনি বলেন, ‘অধিকার আদায়ের দাবিতে জুম্ম জনগণ এখন স্বোচ্চার। রক্ত ঝরছে, আরো ঝরুক। কিন্তু পার্বত্যাঞ্চলের এক ইঞ্চি ভূমিও ছাড়বো না। চুক্তি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনে সামিল হবো। শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন ছাড়া পাহাড়ে কোনোদিনও স্থায়ী শান্তি আসবে না।’

এদিকে সম্মেলনকে ঘিরে বান্দরবানের সাত উপজেলা ছাড়াও রাঙামাটি এবং খাগড়াছড়ি জেলা থেকে পিসিপি নেতাকর্মীরা গাড়িতে করে ভীড় জমায়। খণ্ড খণ্ড মিছিলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে সমাবেশস্থল। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জেলা শহর’সহ আশপাশের এলাকাগুলোতে বিজিবি, সেনাবাহিনী টহলের পাশাপাশি পুলিশ’সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে শহরের মোড়ে মোড়ে।

সন্তু লারমা সম্মেলনে যোগ দিতে সড়কপথে পাঁচ দিনের সফরে বান্দরবান আসেন। বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলার ফারুক পাড়ায় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে সন্তু লারমার আগমনের প্রতিবাদে বান্দরবানে শত কালো পতাকা প্রদর্শন করেছে ‘জাগো পার্বত্যবাসী’ সংগঠনসহ বাঙালী সংগঠনগুলো।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন