পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব


পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদে নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে শুরু হয়েছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। কমিটি গঠন ও বহিস্কার ইস্যু কেন্দ্র করে কার্যত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে সংগঠনটি। উভয় পক্ষই একে অপরের প্রতি অভিযোগ এনেছে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের।
একটি গ্রুপের সদ্য ঘোষিত কমিটিকে ‘পকেট কমিটি’ আখ্যা দিয়ে ওই কমিটির সভাপতি কাজী মুজিবুর রহমানকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে বলে দাবি করছেন সংগঠনের মহাসচিব আলমগীর কবির। অপর দিকে কাজী মুজিবুর রহমান বলছেন তাঁকে বহিস্কার করা হয়নি। বরং গণতান্ত্রিক পন্থায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনের বিরোধীপক্ষ লজ্জাজনকভাবে পরাজিত হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের মহাসচিব আলমগীর কবির বলেন, আমরা দেখেছি রাত দেড়টায় ১০-১৫ জন লোক নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যেটি সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও নিয়ম বর্হিভুত। এটা সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজ। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তারপরেও তারা আজ সকালে ওই কমিটি প্রকাশ করেছে। যেটি আমরা মোটেই গ্রহণ করিনি।
তিনি আরো বলেন, সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূইয়া, সংগঠনের মহাসচিব আমি এবং সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুজ্জামান ডালিম আমাদের তিনজনকে এবং অনেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে এই কমিটি গঠন সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক এবং গঠনতন্ত্র পরিপন্থি।’
আলমগীর কবির বলেন, কাজী মুজিব সাহেব একঘণ্টা বক্তব্য দিলে আধা ঘণ্টাই আওয়ামী লীগের বন্দনা করতেন। এই সংগঠনের ৯৫ পারসেন্ট মানুষই হচ্ছে জামায়াত এবং বিএনপির। কাজী মুজিব তাঁর কিছু আওয়ামী পন্থী অনুসারী নিয়ে একটি ‘পকেট কমিটি’ কমিটি করেছেন। এই কমিটি করে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সংগঠনের অভিভাবক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূইয়া সকলের সাথে আলোচনা করে ২১ নভেম্বর কাজী মুজিব সাহেবকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করেছেন।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সন্ধায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কাজী মুজিবুর রহমানকে বহিস্কার করার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। উভয় পক্ষের নেতারা একে অপরকে নানা অভিযোগের তীর ছুঁড়ছেন।
এক পক্ষ অভিযোগ তুলছেন, নাগরিক পরিষদ সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কাজী মুজিব আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চালিয়েছেন। পাশাপাশি সংগঠনের গঠনতন্ত্র না মেনে মান ক্ষুন্ন করেছেন। এজন্য সংগঠন থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।
তাদের আরো অভিযোগ যে, স্থায়ী কমিটিতে থাকাকালে কাজী মজিবর রহমান সংগঠনের অভিভাবকদের না জানিয়ে গোপনে নানা কার্যকলাপ চালিয়েছেন। সংগঠনকে বিতর্কিত করেছেন। গত ২০২৪ সালে ৭ জানুয়ারি সংগঠনের স্থায়ী কমিটি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আ.লীগের নমিনেশন সংগ্রহ করেন। কেন্দ্রীয় শ্রমিকলীগে সহ-সভাপতি পদে থেকে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তার কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকেন। যেটি নাগরিক পরিষদ সংগঠনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
তারা আরো অভিযোগ করেন যে, আ.লীগ ক্ষমতায় থাকা কালে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে অশালিন ভাষা ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাজী মুজিব ভাইরাল হন। এজন্য তাকে তখন সংগঠন থেকে কারণ দর্শানো নোটিশও দেয়া হয়। তারপরও তিনি সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রম চালিয়ে যান। ২০২৪ সালে ২১ ডিসেম্বর সংগঠনের নেতারা কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়ে সেসময় বহিস্কার না করে মজিবর রহমানকে সংশোধনের সুযোগ দেন। কিন্তু সেই সুযোগে বৃহস্পতিবার কার্যনির্বাহী কমিটি অগোচরে সভা করে সিনিয়রদের টপকিয়ে একটি বৈঠক করেন। সে সভাতে কাউকে না জানিয়ে কমিটি ঘোষণা দেন যেটি ছিল নাগরিক পরিষদে গঠনতন্ত্র ও শৃঙ্খলা বর্হিভুত। যে কারণে সংগঠন থেকে কাজী মো. মজিবর রহমানকে নাগরিক পরিষদ থেকে বহিস্কার করা হয়।
সংগঠনের এক পক্ষের নেতারা জানান, ২০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সংগঠনের কাউকে না জানিয়ে কাজী মো. মজিবর রহমান সভাপতি ও মো. শাব্বির আমহমেদকে মহাসচিব করে ২৬ সদস্য-বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। ঘোষিত এই কমিটির মহাসচিব মো. শাব্বির আমহমেদ বলেন, দলীয়ভাবে কোনো বহিস্কারে সিদ্ধান্ত হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন। আর গঠনতন্ত্র অনুযায়ী স্থায়ী কমিটি ছাড়াও নবগঠিত কমিটি গঠন করা সংঠন ক্ষমতা রাখে।
এ বিষয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি ও প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া বলেন, বৈঠকে সিনিয়র নেতারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না। তাহলে ২৬ জন কমিটির সদস্য’র মধ্যে কীভাবে ১৭ জনকে নিয়ে কমিটি করা হয়। আমি সংগঠনের স্থায়ী কমিটির সভাপতি। আমি বৈঠক না ডাকলে তিনি (কাজী মুজিবুর রহমান) কিভাবে স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডেকে কমিটি করলেন? অবৈধভাবে ভোট গ্রহণ হয়েছে। আর ১৬ জন সদস্য মধ্যে কীভাবে কত ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। যে কাজটি করেছে সেটা সংগঠনের মান ক্ষুন্ন হয়েছে। কাজী মুজিবের ছোট ভাই ইকবালের প্রায় ৫০টি ফেইক আইডি আছে। সেসব আইডি থেকে যে কোনো ইস্যু ভাইরাল করে থাকে। সংগঠনের গঠনতন্ত্র পরিপন্থী কাজ করায় কাজী মজিবকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন সংগঠনের একজন সদস্য বলেন, নাগরিক পরিষদ দুটি গ্রুপে ভাগ হয়েছে। গ্রুপিংয়ের কারণেই বহিস্কার হয়েছে। মুলত কেন্দ্রীয়ভাবে যারা পথ নিয়ে টানাটানি করছেন তারা পূর্বে ফাণ্ডের টাকা আত্মসাৎ করে ফেলেছেন। যার কারণে এই দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে।















