পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের সভা স্থগিত করায় নাগরিক সমাজের উদ্বেগ
দেশের ২৩ জন মানবাধিকার কর্মী, নাগরিক অধিকার কর্মী ও নাগরিকবৃন্দ তথাকথিত “পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ” এর নাশকতার অজুহাতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের ৭ সেপ্টেম্বরের অনুষ্ঠেয় সভা স্থগিত করায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজ।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) নাগরিক সমাজের স্বাক্ষরিত এক বিবৃতির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, পার্বত্য চুক্তির পর ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি নিস্পত্তি কমিশন গঠিত হলেও গত ২১ বছরে এ কমিশন একটিও ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারেনি। তবে ২০১৬ সালে পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের সংশোধনের পর ভূমি কমিশনের কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যা বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ছাব্বিশ হাজারের অধিক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির আবেদন জমা পড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাথে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদন করেছেন। ২০০৮ সালে দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার ক্ষমতায় আসার পর পাহাড়ি ক্ষুদ্র- নৃ গোষ্ঠীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন যে ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান হবে। সে সময় নির্বাচনী ইশতেহারেও এ বিষয়ে অনেক প্রতিশ্রুতি ছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছায় আইনটি সংশোধন হয়।
তাদেরই মদদে এই কথিত নাগারিক পরিষদ সম্প্রতি পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বাতিলের জন্য ৩২ ঘণ্টা ধর্মঘট ঘোষণা করে এবং হরতালের নামে বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালিয়েছে।
আর এই অছিলায় ৭ সেপ্টেম্বর পার্বত্য ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের পূর্ব নির্ধারিত সভা স্থগিত করা হয়েছে। আমরা চুক্তি বিরোধী তথাকথিত নাগরিক পরিষদের নাশকতাপূর্ণ তৎপরতা এবং ভূমি কমিশনের সভা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। একই সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রশাসনের চুক্তি বিরোধীদের ব্যাপারে নমনীয় ও নীরব ভূমিকারও প্রতিবাদ জানাই।
ভূমি বিরোধের জেরে একের পর এক পাহাড়ি গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলা, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, পাহাড়ি নারীদের ওপর নির্যাতন, ধর্ষণসহ পাহাড়িদের হত্যা, অপহরণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি ক্রমেই এই জনপদকে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার বিভীষিকার মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। দেশের অন্যান্য যেকোনো অংশের চাইতে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রামে জনবল ও বরাদ্দ কয়েকগুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও এই অঞ্চলে নিরাপত্তাহীনতা ও শঙ্কার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এটি দিবালোকের মতো পরিষ্কার যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মূল সমস্যা ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধান না করে এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত না করে দিনের পর দিন নিরাপত্তার চশমায় পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখলে বিরোধের মাত্রা বাড়তেই থাকবে এবং জাতিগত বৈরিতার গতি প্রকৃতি জটিল থেকে জটিলতর হবে।
সুতারাং জাতীয় স্বার্থে তথাকথিত হরতাল ডেকে পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের নির্ধারিত সভা বানচালের ঘটনায় যুক্ত ও ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করা জরুরি। তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সর্বোপরি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনকে কার্যকর করে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে অনতিবিলম্বে পার্বত্য ভূমি বিরোধের স্থায়ী সমাধানের জোর দাবি জানান তারা।