পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বাঙ্গালী সংগঠনগুলোর লাগাতার আন্দোলনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা
পার্বত্যনিউজ ডেস্ক :
পার্বত্য জনগণের দাবি উপেক্ষা করে সরকার কর্তৃক পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (সংশোধনী) ২০১৬ অধ্যাদেশ আকারে জারী করাতে তা বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের যৌথ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ৫টি বাঙালী সংগঠন। রবিবার রাজধানীতে ৫ বাঙালী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক যৌথ সভা শেষে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে বলে পার্বত্য নাগরিক পরিষদ এর দপ্তর সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান সাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৪ আগস্ট, রবিবার বিকেল ৩টায় পার্বত্য বাঙ্গালীর শীর্ষ ৫ সংগঠনের উদ্যোগে পার্বত্য গণ পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পার্বত্য নাগরিক পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে পার্বত্য চট্রগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন (সংশোধনী) ২০১৬ অধ্যাদেশ আকারে জারী করার প্রতিবাদে এবং তা দ্রুত বাতিলের দাবিতে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, পার্বত্য নাগরিক পরিষদের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আলকাছ আল মামুন ভূঁইয়া, চেয়ারম্যান, পার্বত্য চট্রগ্রাম নাগরিক পরিষদ; পার্বত্য গণ পরিষদ ও পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদের পক্ষে অ্যাডভোকেট পারভেজ তালুকদার, মহাসচিব, পার্বত্য গণ পরিষদ ও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ; অ্যাডভোকেট আলম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক পার্বত্য গণ পরিষদ; পার্বত্য চট্রগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলনের পক্ষে মো. মনিরুজ্জামান মনির, মহাসচিব পার্বত্য চট্রগ্রাম সমঅধিকার আন্দোলন; শেখ আহম্মেদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক, পার্বত্য নাগরিক পরিষদ; সাহাদাত ফরাজি সাকিব, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র পরিষদ, ঢাকা মহানগর সভাপতি; মো. সাইফুল ইসলাম খান, আহ্ববায়ক পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ, ঢাকা মহানগর; মো. নাজমুল হোসেন কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক, পার্বত্য বাঙ্গালী ছাত্র ঐক্য পরিষদ প্রমুখ ।
সভায় বক্তারা বলেন, পাহাড়ের সকল ভূমির মালিক উপজাতিরা নয়, বাঙালি জনগণও পার্বত্য অঞ্চলের ভূমির মালিক। কিন্ত এই কমিশনে পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালি জনগণের কোনো প্রতিনিধি নেই। পার্বত্য অঞ্চলের বাঙালিদের বিতাড়নের জন্য কৌশলে এই আইন পাস করা হয়েছে। বিশেষ করে ১৯৭৭ সালের পর যেসব বাঙালি রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে পাহাড়ি অঞ্চলে গিয়েছিল তাদেরকে সেখান থেকে চলে আসতে হবে। উপজাতিরা প্রকাশ্যে এটি বলতে পারছেন না, এই জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে যাতে বাঙালিরা বাধ্য হয়ে পার্বত্য চট্রগ্রাম থেকে চলে আসতে। কিন্তু দেশের আপামর জনগণ এই আত্মঘাতী আইন মেনে নিতে পারে না। তাই সভায় এই আইন বাতিলের জন্য আগামীতে কঠোর কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় জাতীয় শোক দিবসের প্রতি সম্মান জানিয়ে আগামী ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার হরতালের পরিবর্তে তিন পার্বত্য জেলা ও প্রতি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভায় নিম্নোক্ত লাগাতার কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয় :
ক. ১৭ আগস্ট বুধবার পার্বত্য তিন জেলায় গণ সংযোগ ও লিফলেট বিতরণ।
খ. ১৮ আগস্ট বৃহস্পতিবার হরতালের পরিবর্তে তিন পার্বত্য জেলা ও প্রতি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল।
গ. ১৯ আগস্ট বান্দরবন, ২০ আগস্ট রাঙামাটি, ২১ আগস্ট খাগড়াছড়ি এবং ২২ আগস্ট ঢাকায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীদের সাথে মতবিনিময়।
ঘ. ২৪ আগস্ট সন্ধ্যায় তিন পার্বত্য জেলা ও প্রতি উপজেলায় মশাল মিছিল।
ঙ. ২৮ আগস্ট ঢাকায় মহামান্য রাস্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পার্বত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর, এবং একই সাথে তিন পার্বত্য জেলায় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান।
তারপরও সরকার দাবি না মানলে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে ৫ সংগঠনের নেতৃবৃন্দগণ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। সভায় পার্বত্য গণ শ্রমিক পরিষদ, জাগো পার্বত্যবাসী, পার্বত্য যুব ফ্রন্টসহ ৩ বাঙালি সংগঠনের সমর্থন এর জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। নেতৃবৃন্দগণ আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যত কর্মসূচিতে তাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে। সভায় খাগড়াছড়ির মহালছড়ীতে ইউপিডিএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী কর্তৃক দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করা হয়।
সব শেষে সকল পার্বত্যবাসীকে উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নের আহবান জানিয়ে সভাপতি সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।