পিআর স্থায়ীভাবে রাষ্ট্রে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে : সালাহউদ্দিন আহমদ

fec-image

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, পিআর মানে হচ্ছে, ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’ (স্থায়ী অস্থিরতা)। রাজনীতিতে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পিআর নিয়ে যারা আন্দোলন করছে, তারা নির্বাচন বিলম্ব ও বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। নির্বাচন বানচাল হলে ফ্যাসিবাদের আবার উত্থান হবে।

শনিবার (৪অক্টোবর) এনডিপি’র ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্ন্স ইনস্টিটিউটে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, পিআর মানে হচ্ছে, ‘পারমানেন্ট রেস্টলেসনেস’ (স্থায়ী অস্থিরতা)। এটি রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে অস্থিরতা ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে। পৃথিবীর যে সব রাষ্ট্রে পিআর এক্সপেরিমেন্ট হয়েছে, সে সব দেশের নজির আপনারা দেখুন। আপনারা খুব সম্প্রতি নেপালে রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখেছেন, সেখানেও পিআর বিদ্যমান। এতে একটি রাষ্ট্রে কখনো স্থায়ী কিংবা স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা থাকে না। ২ মাস, ৬ মাস বা এক বছর পরে সে সমস্ত দেশে প্রধানমন্ত্রী চেঞ্জ হয়, সরকার চেঞ্জ হয়। দেশের জনপ্রত্যাশা বাস্তবায়ন হয় না।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, পিআর পদ্ধতিতে কোনো দলের রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়ন সম্ভব হয় না। জনগণের কল্যাণে কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না। একটা অস্থিতিশীল অস্থির পরিবেশের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে আমরা যেতে দিতে চাই না। যেখানে সিম্পল মেজরিটি অথবা মেজরিটির ভিত্তিতে কোনো দল এবং জোট সরকার গঠন করতে পারে না। সে রকম একটা ব্যবস্থাকে আমরা আহ্বান জানাতে পারি না। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী এ দেশরে ৫৬ শতাংশ মানুষ পিআর পদ্ধতি কী, সেটিই জানে না। সে জায়গায় ৭০ শতাংশ লোক নাকি পিআর চায়। এ রকম পরিসংখ্যান তো আমরা মানতে পারি না। এ রকম বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে ভুল বুঝানো বা বিভ্রান্ত করা উচিত হবে না। হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যে সমস্ত রাজনৈতিক দল নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থে জাতীয় স্বার্থ ও দেশ-জনগণের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে, তাদেরকে বলব আপনারা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থে সঠিক রাস্তায় ফেরত আসুন। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না।’

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোনো জায়গায় আছে কী? যদি কেউ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াতে চায় তার জন্যে পিআর পদ্ধতিতে কোনো খানা নেই। স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার জন্য কী কেউ সাংবিধানিক অধিকার রাখে না? পিআর পদ্ধতি মানে মার্কা দেখে ভোট দেয়া। সংসদ সদস্য কে নির্বাচিত হবে তা এলাকার মানুষ জানবে না। নির্বাচনী এলাকার মানুষের কোনো অধিকার থাকবে না তারা যাকে পছন্দ করে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করল।

তিনি বলেন, দলের প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারি অথবা আমির সাহেব অথবা মজলিশ নির্ধারণ করবে কোন এলাকায় কে নির্বাচিত হবেন। এই পদ্ধতিতে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত হবে না। এমন পদ্ধতি আমরা চাই বাংলাদেশের মানুষ যে পদ্ধতি বুঝতে পারে। এমন পদ্ধতি আমরা চাইতে পারি। সুতরাং এই সমস্ত কথাবার্তা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা না করা উচিত। যে পদ্ধতিতে আপনি যাকে আপনার প্রতিনিধিকে ভোট দিতে পারবেন। সংবিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, প্রত্যেকটা আঞ্চলিক নির্বাচনে এলাকার জনগণের প্রত্যক্ষভোটে নির্বাচিত ৩০০ সংসদ সদস্য নিয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হবে।

তিনি আরো বলেন, কেউ কেউ বলছেন, সংবিধানে সংসদ সদস্য বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা বলা আছে, কিন্তু কী পদ্ধতিতে হবে সেটা নাকি বলা নেই। সংবিধানের অনেক জায়গায় আছে, পড়ে দেখতে পারেন। কেউ যদি পিআর পদ্ধতি চায় তারা স্বাধীনভাবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করুক। জনগণের কাছে তারা যাক। জনগণ যদি তাদের ইশতাহারের পক্ষে ভোট দেয় তখন তারা সেটা বাস্তবায়ন করবে । আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ময়দানে এবং নির্বাচন সামনে রেখে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত করারও পায়তারা চলছে। পারত পক্ষে বানচাল করার জন্য একটি রাজনৈতিক দল, একটি অপশক্তি কাজ করছে বলে আমাদের সন্দেহ। কারণ বাংলাদেশে যদি নির্বাচন বিলম্বিত হয় তাহলে আবার ফ্যাসিবাদের উদ্ভব হবে। ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি হবে। কথিত ফ্যাসিবাদ সুযোগ পাবে আবার। সুতারং সেটা কি আমরা চাইতে পারি? অবশ্যই না।

সালাহউদ্দিন আহমদ এ সময় গাজা অভিমুখী নৌবহরে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি জাতিসংঘকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে আহ্বান জানান বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির এই সদস্য।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনডিপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ্ আল হারুন (সোহেল)। বক্তব্য রাখেন সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ এনডিপি নেতারা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় নির্বাচন, পিআর, বিএনপি
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন