পেকুয়ায় একজনকে কুপিয়ে হত্যা

fec-image

কক্সবাজারের পেকুয়ায় অবৈধ বালি মহলের আধিপত্য নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় এক পক্ষের মিন্টু মিয়া (৩৮) নামের একজনকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিন্টু মিয়া চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পুর্ব পুঁইছড়ি গ্রামের মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২২ডিসেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে উপজেলার টইটং ইউনিয়নের জুমপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সূত্রে জানায়, একই ঘটনায় হাদিসা বেগম (৩৪) নামের এক গৃহবধুকে কুপিয়ে বাম হাতের কব্জি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয় ও হাবিবউল্লাহ (২২) নামের এক যুবককে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। হাদিসা বেগম টইটং জুমপাড়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী। ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পেকুয়া থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করেছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, জুম পাড়ায় একটি অবৈধ বালি মহাল নিয়ে একই এলাকার অলি আহমদ প্রকাশ পাঠানের ছেলে জয়নাল আবেদীন ও সীমান্তবর্তী বাঁশখালীর পুর্ব পুঁইছড়ি গ্রামের মৃত আহমদ মিয়ার ছেলে মিন্টু মিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। বালি মজুদ রাখার জমি নিয়ে মুলত দু’পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব। জয়নাল আবেদীন বনবিভাগের রিজার্ভ কিছু জমি মিন্টু মিয়া গংদের কাছ থেকে ক্রয় করে। কিন্তু কিছু টাকা বকেয়া থেকে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মিন্টু, জসিম, নাছিরসহ বাঁশখালীর এলাকার ৮/১০ জন যুবক ধারালো অস্ত্র নিয়ে জয়নালের বাড়িতে হানা দেয়। এ সময় তারা জয়নালকে টানা হেচড়া করে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। জুমপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কালভার্টের উপর দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট হয়।

এ সময় মহিলাসহ তিনজন মারাত্বক জখম হয়। মিন্টু নামের একজন নিহত হয়। তারা লাশ ফেলে তিন দিকে পালিয়ে যায়। জয়নাল আবেদীনের মা হানু আরা বেগম জানায়, দুপুরে খেয়ে আমরা বিশ্রাম নিই। বিকেলে মিন্টুসহ ৮/১০ জন সন্ত্রাসী বাড়িতে এসে জয়নালকে ডেকে দরজা খুলতে বলে। তারা আমার ছেলের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা চাঁদাদাবি করে। আমার ছেলেকে টানা হেচড়া করে একটি কালভার্টের কাছে নিয়ে যায়। এ সময় পুত্রবধু হাদিসা বেগমসহ আমরা তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করি। তারা ধারালো কিরিচ দিয়ে কুপিয়ে হাদিসার বাম হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আমার ছেলে হাবিবউল্লাহকে কুপিয়ে মারাত্বক জখম করে।

মিন্টু মিয়ার ছোট ভাই হেফাজ উদ্দিন জানায়, আমার ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। টইটং ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন জানায়, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি কালভার্টের উপরে একজনের লাশ পড়ে আছে। বালি মহালের বিরোধ নিয়ে খুনাখুনি হয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, মিন্টু একজন সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে ৪টি হত্যা, ডাকাতি, বন মামলাসহ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা রয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি জায়গা হওয়ায় অপরাধ করে সহজে পার পাওয়া যায়। টইটং-বাঁশখালী সীমান্তবর্তী এলাকা। তারা বাঁশখালী থেকে এসে টইটং মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। পুঁইছড়ির মিন্টু,জসিম, নাছিরসহ একটি সন্ত্রাসী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি জুমপাড়াসহ চারটি গ্রামের প্রায় ৬হাজার লোকজন।

এদিকে ঘটনার জের ধরে এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিন দুপুরে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেনা। তথ্য দিতেও অপারগতা জানাচ্ছে স্থানীয়রা।

পেকুয়া থানার ওসি (তদন্ত) কানন সরকার জানায়, মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন