প্রদীপের ফাঁসির রায়, আত্মগোপনে স্ত্রী চুমকি

fec-image

পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায়ে টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের মৃত্যুদ- হয়েছে। কিন্তু হত্যা মামলায় প্রদীপকে গ্রেফতারের পর থেকেই লাপাত্তা তার স্ত্রী চুমকি। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলার পরপরই আত্মগোপনে চলে যান তিনি।প্রদীপের স্ত্রীর দেশেই কোথাও লুকিয়ে আছেন না পালিয়ে বিদেশে গেছেন তা বলতে নারাজ স্বজনরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চুমকির অবস্থানের সঠিক কোন তথ্য স্পষ্ট করতে পারছে না।

সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা টেকনাফের আলোচিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু যে স্ত্রী সন্তান ও পরিবারের জন্য অর্থ-সম্পদ আয় করতে প্রদীপ অপকর্ম করেছিলেন, সেই স্ত্রী চুমকি তার চরম বিপদের দিনেও পাশে নেই। অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় প্রদীপের স্ত্রী পলাতক রয়েছেন। মূলত প্রদীপ গ্রেপ্তারের পর থেকেই চুমকির কোনো সন্ধান মেলেনি। দীর্ঘ ১৯ মাসেও কারাগারে থাকা ওসি প্রদীপ তার স্ত্রী-সন্তানের দেখা পাননি। অপরদিকে প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা চট্টগ্রামের বাড়িসহ সব সম্পত্তি আদালতের নির্দেশে ইতোমধ্যে ক্রোক করেছে প্রশাসন।

ওসি প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলার বাদী দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি পলাতক রয়েছেন। চুমকি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পুলিশকে দাপ্তরিক চিঠি দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এর আগেই সে দেশ ছেড়েছে কি-না এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই দুদকের কাছে।

দুদক সূত্র জানায়, প্রায় চার কোটি টাকা অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে গত ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার এজাহারে বলা হয়, স্বামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক একে অপরের সহযোগিতায় ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন চুমকি কারণ।

এই মামলা হওয়ার পর থেকেই চুমকি কারণ লাপাত্তা। চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটাস্থ প্রদীপ দম্পতির ছয় তলা বাড়ি লক্ষ্মী কুঞ্জে সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন চুমকি। সেই বাড়িতে খোঁজ নিয়েও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, মূলত প্রদীপ গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই চুমকি আর বাড়িতে থাকছেন না। তিনি কোথায় থাকছেন এ ব্যাপারে কারো কাছে কোন তথ্য নেই।

এদিকে দুদক কর্তৃক চুমকির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর থেকে তার সন্ধানে রয়েছে দুদক। চুমকি কারন পলাতক থাকায় সে যাতে কোনোভাবে দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছে দুদক। দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক রিয়াজ উদ্দিন জানান, চুমকি কারন যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে সে ব্যাপারে গত বছরের ৩১ আগস্ট পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির ভিত্তিতে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু জানান, ২০২০ সালে ২০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ আশফাকুর রহমান ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রীর নামে থাকা সম্পদ ক্রোক করার নির্দেশ প্রদান করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন