প্রশাসন ও বাঙালীদের চাপে মুক্তি পেলেন অপহৃত যুবক : পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ, উত্তেজনা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন

03.08.2013_Matiranga Taindong

পার্বত্য নিউজ রিপোর্ট:
প্রায় পৌণে সাড়ে ছ‘ঘন্টা পর সন্ধ্যা পৌণে সাতটার দিকে বাঙ্গালীদের প্রতিবাদের মুখে অপহৃত কামাল হোসেনকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় অপহরণকারীরা। সন্ধ্যা পৌণে সাতটার দিকে তাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: তাজুল ইসলামের মোবাইল ফোনে তার মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাকে অপহরণ করার পর প্রায় দশ কিলোমিটার দুরে একই ইউনিয়নের ফংপাড়া দিয়ে ছেড়ে দেয় সন্ত্রাসীরা। তবে বাঙ্গালীরা দাবী করেছে, তার মুক্তির দাবীতে বাঙ্গালীদের শক্ত অবস্থানের কারণেই সন্ত্রাসীরা তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ছাড়া পাওয়ার পৌণে এক ঘন্টা পর অপহৃত কামাল হোসেন তার বাড়িতে ফিরে আসে। এসময় মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খানসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঘটনাস্থল জেলা শহর থেকে ৭০ কি.মি দুরে দুর্গম পাহাড়ী এলাকায়। তবে পার্বত্য নিউজের মাটিরাঙ্গা উপজেলা সংবাদদাতা মুজিবুর রহমান ভুঁইয়া দুপুর থেকেই ঘটনাস্থল থেকে নিউজ কভার করেছেন।

তিনি জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার সীমান্তবর্তী তাইন্দং-এর বান্দরসিং এলাকা থেকে মো: কামাল হোসেন (৩২) নামে এক বাঙ্গালী যুবককে অপহরণ শনিবার বেলা ১২টার দিকে অপহরণ করে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। অপহৃত কামাল হোসেন তাইন্দং ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের বটতলী গ্রামের মো: মোখলেছ মিয়ার ছেলে। অপহৃত কামাল হোসেন ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় বাঙ্গালীদের মাঝে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শনিবার বেলা বারটার দিকে দুইজন উপজাতীয় মহিলা যাত্রী নিয়ে তাইন্দং এর বান্দরসিং ভাড়া নিয়ে গেলে আর ফিরে আসেনি কামাল হোসেন। ফিরে আসার পথে তাকে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেছে স্থানীয় বাঙ্গালীরা। এদিকে কামালকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করে স্থানীয় বাঙালীরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।

অপহরণের পর পরই কামাল হোসেন নিজেকে অপহরণের বিষয়টি তাইন্দং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: সিরাজুল ইসলাম সিরাজীকে ফোন করে জানায়। অবশ্য পরে তার ফোনটি আর খোলা পাওয়া যায়নি। তবে তার মোটর সাইকেলটি ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়।
এ খবর জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় বাঙ্গালীদের মাঝে আতঙ্কের পাশাপাশি উত্তেজনা দেখা দেয়। এসময় বাঙ্গালীরা কামাল হোসেনকে অপহরণের প্রতিবাদে তাইন্দং বাজার, বটতলী, তানাক্কাপাড়াসহ বাঙ্গালী গ্রামে মিছিল করে বাঙ্গালী নারী-পুরুষরা। অপরদিকে একই সময় তাইন্দং এর নোয়াপাড়া থেকে  উপজাতীয় সন্ত্রাসীরা ১৫/২০টি গরু নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছে বাঙ্গালীরা।

বাঙালীরা বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠলে সংলগ্ন দুটি পাড়ার কিছু পাহাড়ী পরিবার তাদের আবাসস্থল ছেড়ে সীমান্তের দিকে চলে যায়। এসময় ঘটনার পার্শ্ববর্তী দুটি পাহাড়ী গ্রামের কয়েকটি ঘওে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় মারমা ও ত্রিপুরা অধ্যুষিত স্থানীয় বগাপাড়া, সর্বস্বপাড়া ও বান্দরসিং এলাকায় কয়েকটি বাড়ি-ঘরে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ১০-১৫টি ঘরে অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। পাহাড়ীরা এই অগ্নি সংযোগের জন্য বাঙালীদেরকে দায়ী করেছে। তবে বাঙালীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পাহাড়ের অতীতের বিভিন্ন ঘটনা থেকে দেখা যায়, কোনো কিছু ঘটলেই পাহাড়ীরা নিজেদের ঘরে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে বাঙালীদের উপর দোষ চাপায়। আগুন লাগালে তাদের কোনো ক্ষতি হয়না। বরং সরকার ও দাতা সংস্থার সহায়তায় ভাঙা ও টং ঘরের জায়গায় টিনের নতুন ঘর ওঠে। সাথে প্রচুর ত্রাণ ও সাহায্য মেলে। সর্বশেষ বাঘাইছড়ির ঘটনায় তার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দুপুর থেকেই বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে বাঙ্গালীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ২১ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন-বিজিবির যামিনীপাড়া জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মো: শিহাব উদ্দিন শোয়াইব এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থল বান্দরসিং এলাকা পরিদর্শন করেছেন বিজিবির গুইমারা সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মো: এমদাদুল হক, যামিনীপাড়া জোনের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর মো: শিহাব উদ্দিন শোয়াইব, অপারেশন অফিসার মেজর মো: কামরুল ইসলাম, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামছুল হক, মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ড. মোহাম্মদ মাহে আলম, মাটিরাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খান সহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সকলকে ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান।

উল্লেখ্য যে, ইতিপুর্বেও গত সোমবার ও বুধবার রাতে বাঙ্গালী গ্রামে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হামলা গুলি বর্ষণ করে। স্থানীয় বাঙ্গালী বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, গত কয়েকদিনে উপজাতীয় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের দৌরাত্মে বাঙ্গালীরা নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে।

এবিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান মো: শামসুল হক বলেন, সন্ত্রাসীরা এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, তারা একজন দিনমজুরকেও অপহরণ করতে শুরু করেছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি স্বাধীন দেশে সন্ত্রাসীরা এতো সাহস পায় কি করে।

এদিকে রবিবার পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপঙ্কর তালুকদার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়াও চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহমদ রবিবার সকাল সাড়ে দশটায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাবেন বলে পার্বত্য নিউজকে রাতে নিশ্চিত করেছেন খাগড়াছড়ি ব্রিগ্রেডের বিএম মেজর রুবাইয়াত।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “প্রশাসন ও বাঙালীদের চাপে মুক্তি পেলেন অপহৃত যুবক : পাহাড়ী গ্রামে অগ্নিসংযোগ, উত্তেজনা: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন”

  1. সংবাদটি পড়ে ভালো লাগলো। পাহাড়ীরা কোনকিছু হলে নিজের ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। বা! কি সুন্দর যুক্তি। আমাদের দেশে সংবাদকর্মীরাও এখন জাতীয়তাবাদ, আত্মীয়তাবাদ, আঞ্চলিকতাবাদ হয়ে পড়েছে।
    এখানে ঘটনাটা আসলে কিভাবে, কোথা থেকে উৎপত্তি এগুলো যাচাই বাছাই না করে জাতীয়তাবাদকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
    সংবাদ কর্মী ভাইদের বলবো, সেই যে জাতির হোকনা কেন? তাকে সবকিছুর উর্ধে থাকতে হবে। সব বাঙ্গালী খারাপ নয়, আর সব পাহাড়ী ও খারাপ নয়। এখানে অসৎ ব্যক্তি দু’একজনই যথেষ্ঠ। এখানে নিশ্চয় কিছু বাঙ্গালীও জানবেন যে, অপহরণ ঘটনাটি সম্পূর্ণ সাজানো নাটক। কিন্তু এরা জেনেও বলতে পারবেনা। কারণ এখন বললে, বাঙ্গালী জাতের বৃহত্তর স্বার্থ ক্ষুন্ন হবে। বলে ফেললেও এরা ঘর শত্রু বিভিষণ হিসেবে পরিগণিত হবে। তাই চুপ করে থাকাটাই উত্তম।
    মাত্র দু’একজন ব্যক্তি পরিকল্পনা করে এই অপহরণ নাটক সাজিয়ে সাধারণ বাঙ্গালীদেরকে উত্তেজিত করা হয়েছে। এই ধরণের ঘটনা অহরহ ঘটে যাচ্ছে। কোন না শত্রুতার কারণে খুন করে লাশ পাহাড়ীদের পাড়ার আশে পাশে রেখে দিয়ে বলা হচ্ছে, পাহাড়ী খুন করেছে। তখন সাধারণ বাঙ্গালীরা উত্তেজিত হয়ে পাহাড়ীদের আক্রমণ করা শুরু করে। ঘটনার আসল ব্যক্তিরা সাধারণ লোকজনকে উত্তেজিত করে দিয়ে দুরে গিয়ে বগল নাচা্য়।
    পাহাড়ী বা বাঙ্গালী সে যেই হোক না কেন? শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে চাইলে- এখানে একটা জিনিষ দেখতে হবে, ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করতে হবে। প্রকৃত ঘটনা না জেনে, না বুঝে, না শুনে ঘটনা ঘটার সাথে সাথে আক্রমন না করা, প্রকৃত দোষীদেরকে উভয়েই সম্মিলিতভাবে খুজে বের করতে হবে। উভয় পক্ষের জনপ্রতিনিধি দিয়ে প্রকৃত দোষীদের খুজে বের করতে হবে। নচেৎ পার্বত্য চট্টগ্রামে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা জীবনেও শেষ হবেনা। বরং বাড়বে, আদৌ কমবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন