প্রিয়া সাহার বক্তব্য স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি: হেফাজতে ইসলাম

fec-image

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার বিতর্কিত বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী। সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের এক সভায় অংশ নিয়ে প্রিয়া সাহা এই বিতর্কিত বক্তব্য দেন।

২২ জুলাই (সোমবার) একবিবৃতিতে মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।

তিনি বলেন, তার এই বক্তব্যকে আমরা নিছক বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে মনে করিনা। এটা নিছক ব্যক্তি প্রিয়া সাহার নিজস্ব বক্তব্যও নয়। কারণ, অফিসিয়ালি বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রতিনিধি হিসেবেই তিনি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের সেই মিটিং এ অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়া সাহার দায় ঐক্য পরিষদকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, পুরো বিশ্ব সেই প্রিয়া সাহার বক্তব্য শুনেছে। এর ফলে এদেশের মুসলমানদের ইমেজ কলঙ্কিত করে হিন্দুত্ববাদী অপশক্তির এজেন্ডা পূরণ করা হয়েছে। দেশদ্রোহী প্রিয়া সাহা কর্তৃক আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রামের কাছে নালিশ দেয়া, দেশ ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ট্রাম্পের কাছে প্রিয়া সাহার ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার-যা দেশের ভাবমর্যাদা ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্টের জন্য যথেষ্ট। ভারতের বিজেপি, শিবসেনা, বজরংকে এদেশেও ততপর হতে সুযোগ করে দেওয়ার নামান্তর, যা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ।

মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী আরো বলেন, তার এই বক্তব্য এদেশের আপামর হিন্দু সম্প্রদায়ের বক্তব্য বলে আমরা মনে করি না, বরং হিন্দুত্ববাদের এদেশীয় এজেন্ট একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী- যারা সংখ্যালঘু ট্রাম্পকার্ড ব্যবহার করে হিন্দুত্ববাদের পক্ষে তৎপর, এটা তাদেরই প্রোপাগান্ডা। এহেন প্রোপাগান্ডার নেতিবাচক পরিণতি থেকে দেশ জনগণ ও সরকারকে হেফাজত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। একইসাথে মুসলমানদের বিরুদ্ধে চলমান হিন্দুত্ববাদী ও ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্ত ঠেকাতেও দেশবাসী প্রস্তুত রয়েছে।

তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী প্রিয়া সাহাকে গ্ৰেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন৷ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ‘হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ’ এবং উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ করুন।

‘প্রিয়া সাহা’ পরিচালিত ‘শারি’ নামের এনজিও’র লাইসেন্স বাতিল করুন এবং তার স্বামীকে দুদক থেকে অপসারণ করুন| অন্যথায় দেশপ্রেমিক মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রিয়া সাহাদের যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি৷

ইসকনের বিতর্কিত ফুড ফর লাইফ কর্মসূচীর ব্যাপারে আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন কর্তৃক প্রায় ৩০টিরও বেশি স্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দেবদেবীকে উৎসর্গকৃত প্রসাদ খাওয়ানো এবং তাদের মুখ দিয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করানো গভীর চক্রান্তেরই অংশ৷ কিছুদিন আগে সম্প্রীতি বাংলাদেশ নামে পীযূষ বন্দোপাধ্যায়রা ইসলামের বিধিবিধানকে জঙ্গিবাদের নিয়ামক হিসাবে চিহ্নিত করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপণ দিয়েছিল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এখন উগ্রহিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন দেবদেবীকে উতসর্গকৃত প্রসাদ মুসলিম শিশু-কিশোরদের খাইয়ে তাদেরকে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম হরে হরে’ বলানোর মত ধৃষ্টতা দেখায় কি করে?

বাংলাদেশের মত একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে ইস্কনের এহেন উস্কানি সহ্য করা যায়না৷ তারা কোটি কোটি মুসলিম তৌহিদি জনতার হৃদয়ে আঘাত হেনে, অমার্জনীয় অপরাধ করেছে।

তিনি বলেন, অতীতেও তাদের অনেক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য মিডিয়ায় শিরোনাম হয়েছিল৷ কিন্তু সরকার সেদিকে কর্ণপাত না করায় তারা আজ মুসলমানদের মাথার উপর চেপে বসেছে! এই সন্ত্রাসী সংগঠন ইস্কন চরমপর্যায়ের অন্যায় করার পরেও অনুতপ্ত না হয়ে, দুঃখ প্রকাশ নামে নির্জলা মিথ্যাচার এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, আমাদের জানামতে তাদের এই কর্মকাণ্ড সাধারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনও সমর্থন করেনা। কারো ধর্মীয় আচার ও বিশ্বাস অন্য ধর্মাবলম্বীদের ওপর চাপানোকে আমাদের সংবিধানে নিষিদ্ধ৷ সুতরাং, হিন্দুত্ববাদ ও ব্রাহ্মণ্যবাদের সকল অপতৎপরতার ব্যাপারে আমরা সাধারণ হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন