ফের আরাকান আর্মি আতংকে সীমান্তের জেলেরা


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি আতঙ্কে দিন কাটছে টেকনাফের জেলেদের। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে ৩২৫ জন বাংলাদেশি জেলেকে। এতে একদিকে চলছে অপহৃদ জেলেদের পরিবারে শোক, অভাব-অনটন, অন্যদিকে চলছে নাফ নদীর উপর নির্ভরশীল সকল শ্রেণির মানুষের অনিশ্চিত জীবন।
গতকাল (বুধবার) টেকনাফ সেন্টমার্টিনের নিকটবর্তী সাগর থেকে ৪ টি ট্রলারসহ অন্তত ২৫ জন জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরকান আর্মি। বিষয়টি নিশ্চিত করেন টেকনাফ পৌর বোট মালিক সমিতির সভাপতি সাজেদ আহমেদ। তিনি পার্বত্যনিউজকে বলেন যে, জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তারা বিজিবি-কোস্টগার্ড সহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কোস্টগার্ড টেকনাফ স্টেশন ইনচার্জ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সালাহউদ্দিন রশীদ তানভীর জানান, খবরটি তিনি জেনেছেন।
বোট মালিক ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৩টি ট্রলার সহ ৮১ জনকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। যাদের একজনকেও ফেরত পাওয়া যায়নি। এ নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে ৩২৫ জেলেকে। এতে জেলেদের পরিবারে চলছে শোক, অভাব অনটন। তারা প্রত্যেকেই অপহৃত স্বজনের ফেরার অপেক্ষায়। ভয়ে দিন কাটছে জেলেদের।
সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফের নাফ নদীর বাসিন্দা লিয়াকত হোসেন বলেন, তাদের জীবন-জীবিকার বড় মাধ্যম নাফ নদীতে মাছ শিকার। কিন্তু আরকান আর্মির ভয়ে তারা মাছ শিকারে যেতে পারছেনা। গত ৫ তারিখ দুই ভাই ওসমান গণি ও আব্দুল করিমকে ধরে নিয়ে গেছে, এখনো তাদের খবর পাওয়া যায়নি।
আরেক জেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, অনেকে মাছ শিকার করতে গিয়ে জলসীমা পার করার বিষয়টি যেমন সত্য ঠিক তেমনি এইপার থেকে ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। এমনও রয়েছে কোন কারণ ছাড়া আরকান আর্মি ওইপার থেকে গুলি করে হতাহত করেছে এইপারে থাকা জেলেদের। আরকারন আর্মির ভয়ে তারা এখন মাছ শিকারে যেতে পারছেনা।
রাবেয়া খাতুন নামে নাফ নদীর পাড়ের এক গৃহবধু জানান, তার স্বামী মোবারক হোসেন হলেন পরিবারের উপার্যনের মাধ্যম। বাড়িতে খাবার না থাকায় গায়ে জ¦র নিয়ে প্রায় ২০ দিন আগে নাফ নদীতে মাছ শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেনি। জানতে পেরেছেন তাকে আরকান আর্মি ধরে নিয়ে গেছে। এখনো তার কোন খরব নেই। একদিকে স্বামীর খরব না পাওয়ার কষ্ট অন্যদিকে অভাব। সবমিলে তার খুবই মানবেতর দিন কাটছে।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বরাবরের মত সর্তক করছেন জেলেরা যেন জলসীমা অতিক্রম না করে। এছাড়া বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেতর আনার পক্রিয়া চলছে।
একই ভাবে কক্সবাজারের রামুর বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মহিউদ্দিন আহমেদও জেলেদের সর্তক করে বলছেন, অনেক সময় জেলেরা মাছ শিকার করতে করতে মিয়ানমারের জল সীমায় চলে যায়। আর তখনই ঘটে বিপদ। নয়ত মিয়ানমারের কারো কোন ক্ষমতা নেই এপারে এসে জেলে ধরে নিয়ে যাওয়ার। পক্রিয়া চলছে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদেও ফেরত আনার।
তবে জেলেদের অনেকে বলছে ভিন্ন কথা। আরকান আর্মি এপারে এসেই জেলেদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। ধরে নিয়ে যাওয়া ৩২৫ জনের মধ্যে ১৮৯ জেলে এবং ২৭টি নৌযান ফেরত আনা হয়েছে। প্রশাসন বাকীদের ফেরত আনার পক্রিয়া চলছে জানালেও তাদের মুক্তি এখনো অনিশ্চিত।