‘বাংলাদেশের পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছে ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা’

fec-image

দেওয়া হবে পৃথক নিবন্ধন নম্বর, যাতে তারা জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে না পারে * জাতীয় তথ্যভান্ডারে সংরক্ষিত থাকবে বায়োমেট্রিক * ই-পাসপোর্ট নয়, দেওয়া হবে এমআরপি

“পাসপোর্ট পেতে যাচ্ছে ৬৯ হাজার ‘রোহিঙ্গা’” এই প্রধান শিরোনামে প্রতিবেদন করেছে দৈনিক যুগান্তর। এই খবরে সৌদি আরবের চাপে বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ডিআইপি) রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে।

তবে চূড়ান্তভাবে প্রবাসী রোহিঙ্গাদের হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তুলে দেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে আরও যাচাই-বাছাইয়ের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নানা উপায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে সৌদিতে গেছেন বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। যাদের বেশিরভাগই পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে সেদেশে অবস্থান করছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সোমবার বিকালে বলেন, ‘তারা রোহিঙ্গা কিনা জানি না। ওরা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে অনেক আগে সৌদি আরব গিয়েছিল। সেখানে তাদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এখন সৌদি সরকার চাপ দিচ্ছে পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য। আমাদের একটি টিম সৌদি গেছে। এ ব্যাপারে তারা কাজ করছে।’

সূত্র জানায়, নানা উপায়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে সৌদিতে গেছেন বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা। যাদের বেশিরভাগই পাসপোর্ট ছাড়াই অবৈধভাবে সেদেশে অবস্থান করছেন। এসব অবৈধ রোহিঙ্গার পাসপোর্ট দিতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশকে চাপ দিয়ে আসছে সৌদি আরব। তবে বাংলাদেশ এতদিন বিষয়টি আমলে নেয়নি। কিন্তু সৌদির শ্রমবাজারে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কাসহ আরও বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে শেষ পর্যন্ত ঢাকার অবস্থান এখন ‘নমনীয়’।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সফর করেন সৌদি সরকারের স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ। এ সময় তিনি সেদেশে অবস্থানরত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার হাতে পাসপোর্ট না থাকার কথা উল্লেখ করেন। সৌদির পক্ষ থেকে তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। ওই সময় তিনি বাংলাদেশের জন্য সৌদির বিশাল শ্রমবাজারের কথা মনে করিয়ে দেন। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বৈঠক হয়। পরে সৌদি আরবে বসবাসরত কথিত বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে একটি উচ্চ পর্যায়ে কমিটি বা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়।

সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কমিটির ১০ম সভা অনুষ্ঠিত হয় ২২ মার্চ। এ সংক্রান্ত সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে বসবাসরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী প্রায় ৬৯ হাজার রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নে ১৩ নভেম্বর সৌদির সঙ্গে অ্যাগরিড মিনিট স্বাক্ষরিত হয়। তখন থেকেই সৌদি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে তাগাদা দিয়ে আসছে।

ওই সভায় সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব বলেন, যেহেতু ৬৯ হাজার পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে জয়েন্ট মিটিং মিনিটস স্বাক্ষর করা হয়েছে, তাই এই পাসপোর্ট ইস্যুর বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়েছে। তিনি পাসপোর্ট প্রার্থীদের পরিচিতি প্রমাণে কারিগরি দিক সম্পর্কে জানতে চান। এছাড়া সৌদি আরব থেকে একটি তালিকা প্রাপ্তির বিষয়ে জোর দেন সচিব।

সভায় উপস্থিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রদানকৃত পাসপোর্টে জাতীয়তা এবং কোন প্রক্রিয়ায় পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে সে বিষয়ে জানতে চান। তিনি পাসপোর্টে গোপন সংকেত হিসাবে ‘পিএম’ বা এ ধরনের কিছু উল্লেখ করা যেতে পারে বলে মত দেন। এছাড়া হাতে লেখা বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী রোহিঙ্গাদের একটি বিশেষ নিবন্ধন নম্বর এবং বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ, চোখের মণি ও মুখমণ্ডলের ছবি) জাতীয় তথ্যভান্ডারে সংরক্ষণের প্রস্তাব করা হয়। যাতে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গা হিসাবে তাদের সহজে চিহ্নিত করা যায়। এমনকি এসব রোহিঙ্গা পরবর্তীতে যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করতে না পারে সেজন্য তাদের পাসপোর্টে এক্স বা ওয়াই সিরিজের বিশেষ সিরিয়াল নম্বর, জাতীয়তা অংশে মিয়ানমার বা স্টেটলেসসহ উল্লেখ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, কমিটির আহ্বায়ক হিসাবে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল মে মাসে সৌদি সফর করেন। ৫ থেকে ১২ মে পর্যন্ত তারা সৌদির রাজধানী রিয়াদ এবং জেদ্দায় সেদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়ার ব্যাপারে ঢাকার অবস্থানের কথা সৌদি সরকারকে জানানো হয়। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই মুহূর্তে সৌদি সফর করছে। সোমবার তারা সৌদির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন।

তবে অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের ৪ নম্বর সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (ইমিগ্রেশন) আলী রেজা সিদ্দিক সোমবার তার কার্যালয়ে বলেন, ‘কে বলেছে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কেন রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দিতে যাবে? এ সময় সৌদির উল্লিখিত ৬৯ হাজার রোহিঙ্গা তালিকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, সৌদি এখনো তালিকা দেয়নি। তারা আগে তালিকা দিক তখন যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে। যারা বাংলাদেশি তারাই শুধু পাসপোর্ট পাবে।

জানতে চাইলে প্রতিনিধি দলের ৫ নম্বর সদস্য পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু বলেন, ‘কই না তো, সৌদিতে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রদান নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।’

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাসপোর্ট, বাংলাদেশ, রোহিঙ্গা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন