৩ লাখ রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়নের অনুরোধ সৌদির

fec-image

সৌদি আরবে বসবাস করা ৩ লাখ রোহিঙ্গার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়েছে। রোববার (১৩ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে বৈঠকে এমন অনুরোধ জানিয়েছেন সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী নাসের বিন আবদুল আজিজ আল দাউদ।

সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে তারা আমাদের জানিয়েছেন, ৩ লাখ রোহিঙ্গা সৌদি আরবে বসবাস করেন, তারা সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য সবই করছেন। আমাদের কাছে তারা আবেদন করেছেন তাদের (রোহিঙ্গাদের) পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে। বিষয়টি আমরা দেখছি।

দুদিনের সফরে আসা দাউদের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠকে অংশ নেন। তারা হলেন: বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসুফ ঈসা আল-দুহাইলান, সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক প্রধান ড. ঈসা আবদুল রহমান আল ঈসা, পাসপোর্ট বিভাগের কর্মকর্তা মেজর জেনারেল আব্দুল্লাহ রাজেহ, অনুবাদক মারাম ফাহাদ বিন হারিস ও সাদ মোহাম্মদ সোদোসাল। অসুস্থতার কারণে সৌদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবার বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেননি।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, সৌদি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা শেষে দুটি সমঝোতা সই হয়েছে। একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা, অন্যটি রোড টু মক্কা সার্ভিসের। প্রথমটিতে দুই দেশের নিরাপত্তা আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তা আছে। এতে প্রশিক্ষণসহ আরও অনেককিছু উল্লেখ করা হয়েছে। আর রোড টু মক্কায় আছে, আমাদের হজযাত্রীদের আরও কীভাবে সুবিধা দেয়া যায়। অভিবাসনসহ তাদের সবকিছু এখান থেকে ঠিকঠাক করে দেয়া হবে।

গেল বছর ও তার আগে রোড টু মক্কা সার্ভিস পরীক্ষামূলক থাকলেও এবার দুদেশের মধ্যে সমঝোতা সই হয়। এতে হজযাত্রীদের অভিবাসন থেকে শুরু করে ব্যাগেজ চেকিং- সবকিছু বাংলাদেশের বিমানবন্দর থেকে হয়ে যাবে।

এছাড়াও রোববার বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছে। আলোচনায় ছিল দুদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও তথ্যবিনিময়।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের এখান থেকে দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে অনুরোধ করেছেন তারা। তারা বলেছেন, দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক আমাদের প্রয়োজন হয়। তবে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত শ্রমিক পাঠালে তারা আরও ভালো সুবিধা পাবেন।

মন্ত্রী বলেন, তাদের জানিয়েছি এরইমধ্যে আমরা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট তৈরি করেছি। যারা বিদেশে যান, এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েই তারা যান। সরকার তা নিশ্চিত করেছে।

তিনি জানান, কীভাবে ভিসা সহজ করা যায়, তা নিয়েও আমরা কথা বলেছি। হজ, ওমরাহ, ব্যবসা ও চাকরির জন্য বহু লোক সৌদিতে যান। এসব মানুষের ভিসা সহজ করা হবে। এছাড়া সৌদিতে বাংলাদেশিদের স্কলারশিপ সহজ করা নিয়েও কথা হয়েছে। ব্যবসায়িক ভিসা নিয়েও বিস্তারিত আলাপ হয়েছে। সবকিছুই তারা বিবেচনা করবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা মনে করি, আসছে দিনগুলোতে সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সৌদি আরবও তা-ই মনে করে। সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করব, সমঝোতায়ও তাও স্থান পেয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে যে সন্ত্রাসী তৎপরতা হবে, সেটা সাইবারকেন্দ্রিক হবে। তা প্রতিরোধে যৌথভাবে কীভাবে কাজ করা যায়, তা নিয়েও কথা বলেছি। আমাদের পুলিশ বাহিনী এবং আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীতে যারা আছে, তাদের প্রশিক্ষণ, তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়সহ সবকিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে সৌদি প্রতিনিধিদের সঙ্গে এলএনজি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি। আসাদুজ্জামান বলেন, শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে থাকতে পারেন, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। তাদের পাসপোর্ট নবায়নের মতো বিষয়গুলোতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পাসপোর্টের জন্য জন্ম সনদসহ জাতীয় পরিচয়পত্র, আঙুলের ছাপেরও দরকার পড়ে। এগুলোর জন্য আমাদের সময় লাগছে। তবে এটাকে আরও তাড়াতাড়ি কীভাবে করা যায়, সেদিকে তারা জোর দিয়েছেন। আমরাও বলেছি, আমরা তাড়াতাড়ি করবো। তবে কারিগরি সমস্যা হচ্ছে।

রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন নিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমাদের যে সিস্টেম, সেই অনুসারে পাসপোর্টগুলো নবায়ন আমরা করছি। আপনারা নিশ্চিয়ই জানেন, প্রায় ২৮ লাখ ৬০ হাজার বাংলাদেশি সৌদিতে বসবাস করছেন। বিভিন্ন পেশায় তারা নিয়োজিত। তাদের কেউ কেউ ব্যবসা করছেন। সেই ব্যবসায় যাতে আরেকটু সুবিধা পান, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, আমাদের সম্পর্ক আরও উন্নত হবে এই সফরে।

সৌদি আরবে বসবাস করা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন কিনা; কেন তাদের পাসপোর্ট নবায়নের কথা উঠেছে, জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রথমত তারা আমাদের দেশ থেকে গেছে, এটা ঠিক। কারণ তারা তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। ৩ লাখ রোহিঙ্গা সৌদিতে গেছে। তারা সবাই আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে যায়নি। কেউ কেউ নিজস্ব ম্যাকানিজমে (কলাকৌশল) গেছেন। এখন তাদেরই (সৌদির) অনুরোধে, এখান থেকে কীভাবে গিয়েছিল, তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

এ সময়ে সৌদিতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত জাভেদ পাটোয়ারি বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। যেমন ওখানে এখন ৩ প্রজন্মের রোহিঙ্গা আছেন। ষাট ও সত্তরের দশকে গেছেন, বাংলাদেশ হওয়ার আগেও পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। তাদের সন্তান, নাতি-নাতনি হয়েছে। তিন প্রজন্ম ধরেই অনেক রোহিঙ্গা ওখানে বসবাস করছেন।

এখন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি পরিচয়পত্র দেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদের পরিচয়পত্র দেয়ার কথা বলেনি। বলছে যে বাংলাদেশি যারা ওখানে অবস্থান করছেন, যারা বাংলাদেশি এবং যাদের পাসপোর্ট নবায়ন করতে হবে, তাতে সহায়তা করার কথা বলা হয়েছে।

ওখানে যে ৩ লাখ রোহিঙ্গা গেছেন, তারা বাংলাদেশ থেকে গেছেন বলে তারা (সৌদি) দাবি করছেন কিনা; এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আমি তো বলছি, তারা বার্মিজ। এ কথাটি তারাও বারবার বলেছে যে, তারা বার্মিজ। তারা বাংলাদেশ হয়ে গেছে, এটাও যেমন সত্যি, তেমন বাংলাদেশের বাইরে থেকেও কিছুসংখ্যক গেছে। পাকিস্তান আমলে যারা গেছেন, তারা পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ আমলে যারা গেছেন, তারা সবাই কীভাবে গেছেন, কিছু সংখ্যক লোককে তাদের অনুরোধে পাসপোর্ট দেয়া হয়েছিল। সেগুলো সম্পর্কে আমাদের রাষ্ট্রদূত যেটা বললেন, সেগুলোও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে তারা সেখানে আছেন।

তিনি বলেন, তাদের আমরা পাসপোর্ট দেব না, তাদের শনাক্ত করতেও যাচ্ছি না। যারা বিশেষ বিবেচনায় গিয়েছিল, সেইগুলো শনাক্ত এবং আমরা যাদের পাসপোর্ট দিয়েছি তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার ব্যাপারে আমরা ওয়াদাবদ্ধ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সেগুলো আমরা দেখবো।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে একটি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ হচ্ছে জানিয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ওইখানেও ওদের (সৌদি) রাষ্ট্রদূত ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যখন যে সমস্যাটা আসবে, তারাই সেটা সমাধান করবে। তাৎক্ষণিক সমাধান করার জন্যই কমিটি তৈরি করা হয়েছে। এই কমিটি বাংলাদেশি হিসেবে যার পাসপোর্ট নবায়ন করে দিতে হবে বলে মনে করবে, সঙ্গে সঙ্গে তারা তা করে দেবে। যাচাই-বাছাইও তারা করবে। কী কী যাচাই করা হবে, তা তারা ঠিক করবে। তবে আমাদের পাসপোর্ট যাদের আছে, তাদেরই প্রাধান্য দেয়া হবে।

রোড টু মক্কায় কী কী সুবিধা দেয়া হবে, বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখন মৌখিক চুক্তিতে।

জাভেদ পাটোয়ারী বলেন, এতদিন পর্যন্ত রোড টু মক্কা সার্ভিস মৌখিকভাবেই হয়েছিল। অনেকটা পরীক্ষামূলকভাবে। চুক্তি ছাড়াই তারা (হাজিরা) গেছেন। এখন থেকে যারাই সৌদিতে হজে যাবে, তাদের অভিবাসনের পুরো কার্যক্রম এখান থেকে হবে। ওখানে কেবল তারা এয়ারপোর্টে নেমে গাড়িতে ওঠে চলে যাবেন। তাদের কাস্টামস ক্লিয়ারেন্স এখানে হবে, লাগেজও ওদের হোটেলে চলে যাবে। বিমানবন্দরে তাদের লাগেজও তাদের বহন করতে হবে না। এরইমধ্যে এ বছর তা করে দেখা হয়েছে।

সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন নিরপত্তা গ্রুপে বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে কিনা; জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের বিষয় না, এটা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখে। তাদের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, এটা তাদের বিষয়।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: পাসপোর্ট, রোহিঙ্গা, সৌদি আরব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন